কক্সবাজার প্রতিনিধি :: চকরিয়ায় বনের জমিতে অবৈধ গরুর হাট, বিএনপির নাম ভাঙিয়ে চাঁদাবাজি অভিযোগ উঠেছে।
কক্সবাজারের বৃহত্তর উপজেলা চকরিয়ায় বনের জমিতে রাতারাতি গড়ে তোলা হয়েছে গরুর হাট! বিএনপির নাম ভাঙিয়ে উপজেলার কৈয়ারবিল ইউনিয়নের ইসলাম নগর এলাকায় অবৈধভাবে এই গরুর হাট বসানো হয়েছে। জেলা প্রশাসনের অনুমোদন না নিয়ে এই হাটের কথিত মালিকরা অন্য হাট থেকে পথে যাওয়া ট্রাক থামিয়ে চাঁদাবাজি করছেন। প্রতিটি গরু বাবদ এক হাজার থেকে ১২০০ টাকা জোর করে আদায় করা হচ্ছে। টাকা দিতে না চাইলে গাড়ি আটকে সেই গরু লুট করার ঘটনাও ঘটছে।
এই হাটের মালিকরা চকরিয়া উপজেলা বিএনপির আহবায়ক এনামুল হকের নাম ব্যবহার করছেন। গরু ব্যবসায়ীরা বলছেন, আওয়ামী লীগ আমলে সাবেক এমপি জাফর আলমের নামে গরুর হাটে চাঁদাবাজি হতো, এখন বিএনপির নামে চাঁদাবাজি হচ্ছে। শুধু মানুষ পরিবর্তন হয়েছে, চাঁদাবাজির ধরণ একই রকম রয়ে গেছে।
হঠাৎ গড়ে উঠা এই হাট নিয়ে কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে।
ওই অভিযোগে বলা হয়েছে, চাঁদাবাজির পাশাপাশি এই হাটের কারণে অন্য হাটের বৈধ ইজারাদারদের লোকসান গুণতে হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, গত ৩০ নভেম্বর থেকে হঠাৎ চকরিয়ার কৈয়ারবিলের ইসলাম নগরে গরুর হাটটি বসানো হয়। কক্সবাজার সদরের খরুলিয়া, রামু উপজেলার কলঘর বাজার, ঈদগাঁও উপজেলার ঈদগাঁও বাজারসহ অন্য বাজার থেকে গরু কিনে ঢাকা, চট্টগ্রাম নেওয়ার পথে চকরিয়ার ওই গরুর হাটে গরুবোঝাই ট্রাক-পিকআপ আটকে দেওয়া হয়। এই হাটের দোহাই দিয়ে ওইসব ট্রাক-পিকআপের প্রতিটি গরুর জন্য এক হাজার থেকে এক হাজার দুই শ টাকার চাঁদার রশিদ ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
অবৈধ এই হাটের জন্য সরকার হারাচ্ছে লাখ লাখ টাকার রাজস্ব।
অন্যদিকে সরকারিভাবে কোটি কোটি টাকায় ইজারা দেওয়া গরুর হাটগুলোর ইজারাদাররা চরম লোকসানের মুখে পড়েছেন। এই ঘটনায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করে অবৈধ গরুর হাট উচ্ছেদের জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন রামু উপজেলার চাকমারকুল পশুর হাটের ইজারাদার কেএম রহীম উদ্দীন।
অভিযোগে বলা হয়, দেশে পটপরিবর্তনের পর থেকে বিএনপির নাম ভাঙিয়ে একটি চক্র চকরিয়ার কৈয়ারবিল ইসলাম নগর এলাকায় ৩০ নভেম্বর রাতারাতি স্থায়ী হাট বসিয়েছেন। জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনের অনুমতিবিহীন এই গরুর হাটটি বসিয়ে মানিক, ওমর আলী, আজগর, মুকুল, বাচ্চু, মামুনসহ আরো কয়েকজন মিলে চাঁদাবাজি করে যাচ্ছে।
তাদের সঙ্গে চকরিয়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক এনামুল হক জড়িত রয়েছেন বলে অভিযোগে দাবি করা হয়।
তবে সদ্য বিলুপ্ত চকরিয়া উপজেলা বিএনপির আহবায়ক এনামুল হক সাংবাদিকদের কাছে চাঁদাবাজির ঘটনা অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, গরুর এই বাজার বসানোর ব্যাপারে আমাকে জানিয়েছে। বাজারটি অনেক পুরনো। মধ্যখানে অনেক দিন বন্ধ ছিল। সম্প্রতি এটি আবার চালু করা হয়।
তিনি জানান, এখনো জেলা প্রশাসন অনুমোদন দেয়নি। তবে উপজেলা প্রশাসন ও ইউনিয়ন পরিষদ থেকে অনুমোদন নেওয়া হয়েছে। উপজেলা প্রশাসন খাস কালেকশনও করছে।
স্থানীয় সূত্রগুলো জানিয়েছেন, চকরিয়ার ইসলাম নগরের এই অবৈধ গরুর হাটে বিক্রি করা হচ্ছে পার্বত্য বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি, লামা ও আলীকদম, কক্সবাজারের রামু উপজেলার গর্জনিয়া সীমান্ত দিয়ে চোরাই পথে আনা মিয়ানমারের গরু।
ব্যবসায়ী ও ট্রাক চালকসহ সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, রামুর চাকমারকুল, কলঘর বাজার, কক্সবাজার সদরের খরুলিয়া, রামুর গর্জনিয়া ও ঈদগাঁও উপজেলার ঈদগাঁও পশুর হাট থেকে গরু কিনে ট্রাক-পিকআপে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নেওয়ার পথে গাড়ি আটকে চাঁদাবাজি করছে চকরিয়ার অবৈধ হাটের সঙ্গে জড়িত লোকজন। তারা গরুপ্রতি এক হাজার টাকা করে চাঁদা আদায় করছে।
তাদের মতে, চাঁদা না দিলে গাড়ি আটকে রাখা হয়, গাড়ি ভাঙচুর ও গরু লুটের ঘটনাও ঘটছে। গত দুই সপ্তাহে অসংখ্য ব্যবসায়ীর গরু আটকে রেখে টাকা আদায় করে ইজারার রশিদ নিতে বাধ্য করা হয়েছে।
সূত্র মতে, কক্সবাজার বনবিভাগের ফাসিয়াখালী রেঞ্জের বনাঞ্চলে অবৈধভাবে এই গরুর হাট গড়ে তোলা হয়েছে। কিন্তু বনবিভাগ এ ব্যাপারে নিশ্চুপ রয়েছে।
তবে কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. মারুফ হোসেন বলেন, বন বিভাগের জমি দখল করে অবৈধভাবে গরুর হাটটি বসানো হয়েছে। এই হাটটি উচ্ছেদ করার জন্য আমরা কয়েক দিন ধরে টানা চেষ্টা করে যাচ্ছি। তবে উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতা না পাওয়ায় উচ্ছেদ করা সম্ভব হচ্ছে না।
বনের জমিতে বসানো অবৈধ পশুর হাট উচ্ছেদ করতে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে বলেও জানান এই বন কর্মকর্তা।
এদিকে অভিযোগ মতে, উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়, (চকরিয়া উপজেলা) খামার লাইসেন্স নং-০১৪৮ ও হাট বাজার লাইসেন্স নং-০১৪৯ আ. স্মারক নং- ৩১.৪২.২২১৬.০০০.০৫.১২.২৪-২৬২ মূলে ইসলামনগর বাজার (প্রকাশ: ডালীয়ার বাজার) চকরিয়া, কক্সবাজার- এই শিরোনামে ইজারাদার ওমান এন্টারপ্রাইজ নামে গরু বিক্রেতা ও ক্রেতাদের রশিদ দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু উপজেলা প্রশাসন থেকে এ ধরনের স্মারকে কোনো বাজার ইজারা দেওয়া হয়নি।
চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ আতিকুর রহমান বলেন, অবৈধ গরুর হাট বসানোর বিষয়টি আমি জেনেছি। যেহেতু জায়গাটি বনবিভাগের এখতিয়ারে, তাই বনবিভাগের সুপারিশ মতো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
চাঁদাবাজি প্রসঙ্গে চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনজুর কাদের ভুঁইয়া বলেন, গরু বাজারের নামে চাঁদাবাজির বিষয়টি লিখিত অভিযোগ পেলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) বিভীষণ কান্তি দাশ বলেন, যেহেতু জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ এসেছে, বিষয়টি তদারকি করতে স্থানীয় সরকার বিভাগ ও বনবিভাগকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
পাঠকের মতামত: