ঢাকা,বুধবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৪

চকরিয়ায় করেন গান, চট্টগ্রামে চুরির দায়ে আটক

নিজস্ব প্রতিবেদক :: কক্সবাজারের এক তরুণ তৌহিদুল ইসলাম। সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে ওই অঞ্চলে তার মোটামুটি পরিচিতি আছে। নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেলও আছে। সেই তরুণ চট্টগ্রাম নগরীতে চুরি করতে এসে ধরা পড়েছে।

পুলিশ জানিয়েছে, তৌহিদুল ও তার সহযোগীরা মিলে গত দুই বছরে চট্টগ্রাম শহরে অন্তত ৪০টি চুরির ঘটনা ঘটিয়েছে। এক মাস আগে নগরীর বায়েজিদে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের বাসা থেকে সাশ্রয়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন সংক্রান্ত প্রকল্প প্রস্তাবনাসহ একটি ল্যাপটপ চুরি হয়। সিসি ক্যামেরায় ‘চোর’ তৌহিদুলকে শনাক্ত করে তাকে গ্রেফতারের জন্য খুঁজছিল পুলিশ।

সর্বশেষ শনিবার (১১ ডিসেম্বর) সকালে চট্টগ্রাম নগরীর হালিশহর থানা এলাকায় একটি বাসায় চুরি করতে গিয়ে স্থানীয়দের হাতে ধরা পড়েন তৌহিদুল ইসলাম (১৮) ও তার সহযোগী ছোটন মিয়া (১৮)। বায়েজিদ বোস্তামি থানা পুলিশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের বাসায় চুরির মামলায় তৌহিদুলকে গ্রেফতার দেখায়। তার তথ্যে কক্সবাজারে অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করা হয় চোরাই মালামালের ক্রেতা সাইফুল ইসলামকে (২৬)। তাদের সবার বাড়ি কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলার কোণাখালী গ্রামে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

গত ৯ নভেম্বর সকালে নগরীর বায়েজিদ বোস্তামি থানার গুলবাগ আবাসিক এলাকায় ‘বন্ধু নিবাস’ নামে একটি ভবনের অষ্টম তলায় পোর্ট সিটি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. মাহবুবুর রহমানের বাসায় চুরি হয়। তিনি অস্ট্রেলিয়ার কুইন্স লাইন ইউনিভার্সিটি অ্যান্ড টেকনোলজি ব্রিজম্যানের ভিজিটিং রিচার্স ফেলো। ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের তড়িৎ প্রকৌশল বিভাগের ডিন ইয়াং টং গু, ভিজিটিং রিচার্স ফেলো মাজহারুল করিম ও মাহবুবুর রহমান এবং চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) তড়িৎ্ প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ মিলে অস্ট্রেলিয়ার আদলে বাংলাদেশে সাশ্রয়ী পদ্ধতিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন নিয়ে একটি প্রকল্প প্রস্তাবনা তৈরি করেন। সেই প্রস্তাবনা মাহবুবুর রহমানের ল্যাপটপে সংরক্ষিত ছিল। ওই ল্যাপটপ এবং মোবাইল চুরির ঘটনায় মাহবুবুর রহমান মামলা দায়ের করেন।

বায়েজিদ বোস্তামি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামরুজ্জামান বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের ল্যাপটপে সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে জমা দেওয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ছিল। আমরা শুরু থেকেই বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে কাজ শুরু করি। সিসি ক্যামেরার ফুটেজে আমরা তৌহিদুল ও ১০-১১ বছর বয়সী এক ছেলেকে শনাক্ত করি। তাদের গ্রেফতারের জন্য আমরা খুঁজছিলাম। এর মধ্যে গত শনিবার ভোরে হালিশহর থানায় দুই চোর ধরা পড়ার সংবাদ পেয়ে আমরা তাদের ছবি নিই। সেখানে একজনকে আমরা তৌহিদুল হিসেবে শনাক্ত করে নিজেদের হেফাজতে নিই। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করি। তার সঙ্গে থাকা শিশুটিকে আমরা এখন খুঁজছি।’

তৌহিদুলকে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ওসি জানান, তৌহিদুল কক্সবাজারের আঞ্চলিক গানের একজন শিল্পী হিসেবে পরিচিত। তার ইউটিউব চ্যানেলও কক্সবাজারে জনপ্রিয়। কিন্তু গত দুই বছর ধরে সে চুরির সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। এলাকায় তার কয়েকজন সহযোগী আছে। মাঝে মাঝে তাদের নিয়ে চট্টগ্রাম শহরে আসে। বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে চুরির জন্য বাসা টার্গেট করে। বিশেষত যেসব বাসার লোক ভোরে নামাজ পড়তে কিংবা প্রাতঃভ্রমণে বের হয়। সেই সব বাসার গেট এবং দরজা খোলা থাকে, সেগুলোকে তারা টার্গেট করে। সুযোগ বুঝে সেসব বাসায় প্রবেশ করে দুই থেকে তিন মিনিটের মধ্যে ল্যাপটপ, মোবাইল জাতীয় মূল্যবান সামগ্রী নিয়ে দ্রুত এলাকা থেকে চলে যায়।

এ প্রক্রিয়ায় গত দুই বছরে তারা অন্তত ৪০টি বাসায় চুরি করেছে জানিয়ে ওসি কামরুজ্জামান বলেন, ‘চুরির মালামাল সাইফুলের মাধ্যমে কক্সবাজারে বিভিন্ন প্রকল্প ও এনজিতে কর্মরত লোকজনের কাছে বিক্রি করে। তৌহিদুলসহ গ্রেফতার তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচদিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে আরও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যাবে।’

পাঠকের মতামত: