আগামীকাল চকরিয়া উপজেলার উপকূলীয় অঞ্চলের ছয় ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। প্রচারণার শেষ মহুর্তে বৃহস্পতিবার নির্বাচনী এলাকা বদরখালী ইউনিয়ন, পশ্চিম বড়ভেওলা ইউনিয়ন, ঢেমুশিয়া ইউনিয়ন, কোনাখালী ইউনিয়ন, বিএমচর ইউনিয়ন ও পূর্ববড়ভেওলা ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ৩১জন ও সংরক্ষিত এবং সাধারণ ওয়ার্ডে মেম্বার পদে ২৮৯জন প্রার্থী ব্যস্ত সময় পার করেছেন। তাঁরা সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে শেষবারের মতো দক্ষিণা চেয়েছেন ভোটারদের কাছে। এ ছয়টি ইউনিয়নের ৫৪টি ভোট কেন্দ্রে মোট ৭০৮৩৭জন ভোটার, তন্মধ্যে পুরুষ ৩৬৯২৬ ও মহিলা ৩৩৯১১জন ভোটার তাদের স্ব স্ব ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। অনুষ্টিতব্য নির্বাচন সুষ্ঠ ও শান্তিপুর্ণূ পরিবেশে সমাপ্ত করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। একজন জুড়িসিয়াল ও ৬জন নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটের তত্বাবধানে নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সদস্য থাকছে প্রায় দুই হাজার। তার মধ্যে প্রত্যেক ভোট কেন্দ্রে ১৭জন আনসার ও ৬জন পুলিশ দায়িত্ব পালন করবে। প্রতিটি ইউনিয়নে পুলিশের মোবাইল টিম রয়েছে চারটি করে। ছয় ইউনিয়নে থাকবে পুলিশের ছয়টি স্টাইকিং ফোর্স ও সহকারি পুলিশ সুপারদের ছয়টি বিশেষ টিম। তার পাশাপাশি তিন প্লাটুন বিজিবি ও ৪০জনের চারটি র্যাব টিম ভোট কেন্দ্রে টহল দেবে। বৃহস্পতিবার থেকে টহল দিতে শুরু করেছে বিজিবি, র্যাব ও পুলিশ সদস্যরা। এসব তথ্য জানিয়েছেন চকরিয়া থানার ওসি তদন্ত মো.কামরুল আজম। এছাড়া নির্বাচনে ৬জন রির্টানিং কর্মকর্তার তত্তাবধানে ভোট কেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করবেন ৫৪জন প্রিসাডিং কর্মকর্তা, ১৯২জন সহকারি প্রিসাডিং কর্মকর্তা ও ৩৮৪জন পোলিং অফিসার।
অনুষ্টিতব্য নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্ধীতা করছেন বদরখালী ইউনিয়নে আওয়ামীলীগ মনোনিত প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান নূরে হোছাইন আরিফ (নৌকা), বিএনপি মনোনিত প্রার্থী আহছানুল কাদের চৌধুরী সাব্বির (ধানের শীষ), আওয়ামীলীগ নেতা ও সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী চৌধুরী (মটর সাইকেল), সাবেক মেম্বার খাইরুল বশর (আনারস), আবু নঈম মোহাম্মদ হেফাজ (চশমা)।
কোনাখালী ইউনিয়নের আওয়ামীলীগ মনোনিত ও বর্তমান চেয়ারম্যান দিদারুল হক সিকদার (নৌকা), জাতীয় পার্টির (এরশাদ) প্রার্থী ও সাবেক চেয়ারম্যান রুহুল কাদের মানিক (লাঙ্গল), আওয়ামীলীগ নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী মোক্তার আহমদ (ঘোড়া), বিএনপি মনোনিত ইমরুল হাসান হান্নান (ধানের শীষ) ও বিএনপির বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী আজিজুল হক মধু (আনারস)।
পশ্চিম বড় ভেওলা ইউনিয়নে আওয়ামীলীগ মনোনিত চেয়ারম্যান প্রার্থী মাতামুহুরী সাংগঠনিক উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম বাবলা (নৌকা), বিএনপি মনোনিত প্রার্থী ও মাতামুহুরী উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ওয়াহিদ মুরাদ হেফাজতুর রহমান টিপু (ধানের শীষ), আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান সাহাবউদ্দিন (আনারস), ছলিম উল্লাহ (রজনীগন্ধা), ওসমান গণি (টেলিফোন) ও এসএম ছরওয়ার আলম (মটর সাইকেল) ।
ঢেমুশিয়া ইউনিয়নের আওয়ামীলীগ মনোনিত ও বর্তমান চেয়ারম্যান রুস্তম আলী (নৌকা), বিএনপি মনোনিত নুরুল আলম জিকু (ধানের শীষ), স্বতন্ত্র প্রার্থী মোঃ গিয়াস উদ্দিন (চশমা), আওয়ামীলীগ নেতা মোঃ কায়েস (আনারস) ও ফরিদুল আলম (মটর সাইকেল)।
বিএমচর ইউনিয়নের আওয়ামীলীগ মনোনিত প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান বদিউল আলম (নৌকা), বিএনপি মনোনিত ও সাবেক চেয়ারম্যান মোঃ আবু ইউসুফ (ধানের শীষ), স্বতন্ত্র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম (আনারস), শহীদুল ইসলাম, ইসলামী আন্দোলনের মোঃ ওয়াজ উদ্দিন (হাত পাখা)।
পূর্ব বড় ভেওলা ইউনিয়নে আওয়ামীলীগ মনোনিত প্রার্থী কক্সবাজার জেলা সৈনিকলীগের সাধারণ সম্পাদক খলিল উল্লাহ চৌধুরী (নৌকা), বিএনপি মনোনিত প্রার্থী মাতামুহুরী উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আনোয়ারুল আরিফ দুলাল (ধানের শীষ), স্বতন্ত্র প্রার্থী আ.লীগ নেতা নাছির উদ্দিন নোবেল ( আনারস), জাতীয় পার্টির মনোনীত সাইফুল ইসলাম (লাঙ্গল) নিয়ে লড়ছেন।
চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: সাহেদুল ইসলাম বলেন, ৬টি ইউনিয়নে নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু গ্রহণযোগ্য ও শান্তিপূর্ণ করা হবে। যেকোন ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সার্বক্ষনিক প্রস্তুত রাখা হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে। এদিকে ছয় ইউপিতে নির্বাচনে ২০টি কেন্দ্রে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। আর এসব ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে নিরাপত্তা জোরদারের দাবি জানিয়েছেন বেশির ভাগ বিএনপি, বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থীরা। বিএমচর ইউপির বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, তাঁর ইউনিয়নে ছয়টি কেন্দ্র অধিক ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে। কেন্দ্র গুলো হল ছৈনম্মারঘোনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কৃষ্ণপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বহদ্দারকাটা মাদ্রাসা, বহদ্দারকাটা উচ্চ বিদ্যালয়, বেতুয়াবাজার আল ইমাম মাদ্রাসা ও জাহান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এসব কেন্দ্রে নিরাপত্তা বাড়াতে প্রশাসনের কাছে লিখিত আবেদন করা হয়েছে।
বদরখালী ইউপিতে আওয়ামীলীগের ‘বিদ্রোহী’ চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী আ.ন.ম হেফাজ সিকদার বলেন, বদরখালী কলেজ কেন্দ্রসহ ৬টি ভোটকেন্দ্র চরম ঝুঁকিপূর্ণ। এসব কেন্দ্রে নিরাপত্তা বাড়াতে না পারলে ভোটাররা ভোট কেন্দ্রে যেতে ভয় পাচ্ছেন। এ ইউপিতে বিএনপির প্রার্থী আহসানুল কাদের চৌধুরী বলেন, তাঁর ইউনিয়নের ১নম্বর ওয়ার্ডের হামেদিয়া কাদেরিয়া দাখিল মাদ্রাসা, ৫নম্বর ওয়ার্ডে জব্বরনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৮নম্বর ওয়ার্ডের বদরখালী কলেজ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের হাবিবিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র অধিক ঝুঁিকপূর্ণ। প্রশাসনকে এসব কেন্দ্রে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দিতে হবে।
ঢেমুশিয়া ইউপির বিএনপির প্রার্থী নুরুল আলম বলেন, ‘আওয়ামীলীগের লোকজন পাঁচটি ওয়ার্ডের ভোটারদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন। ভোটারদের কেন্দ্রে যেতে নিষেধ করছেন। তাঁর ইউনিয়নে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোর মধ্যে রয়েছে ১নম্বর ওয়ার্ডের মুছারপাড়া ফোরকানিয়া মাদ্রাসা, ২নম্বর ওয়ার্ডের জিন্নাত আলী চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয়, ৪নম্বর ওয়ার্ডের হীড বাংলা সাইক্লোন সেল্টার, ৭নম্বর ওয়ার্ডের মৎস্যজীবী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ৮নম্বর ওয়ার্ডের আম্মারডেরা মহসনিয়া দাখিল মাদ্রাসা। এসব কেন্দ্রে সকাল ১০টার মধ্যে ভোট শেষ হয়ে যাবে বলে প্রচার করছেন আওয়ামীলীগের প্রার্থীরা।’
পূর্ব বড় ভেওলা ইউপির বিএনপির প্রার্থী আনোয়ারুল আরিফ দুলাল বলেন, তাঁর ইউনিয়নের সব ভোটকেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ। ইতিমধ্যে বহিরাগত সন্ত্রাসীরা এলাকায় টহল দিচ্ছেন। এতে সুষ্ঠু ভোট হওয়া নিয়ে ভোটারেরা শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন।
চকরিয়া উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা সাখাওয়াত হোসেন বলেন, কাল শনিবার চতুর্থ দফায় চকরিয়া উপজেলার পশ্চিম বড়ভেওলা, ঢেমুশিয়া, পূর্ব বড় ভেওলা, বদরখালী, কোনাখালী ও বিএমচর ইউপিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ নির্বাচনে মোট ভোট কেন্দ্র রয়েছে ৫৪টি। এরমধ্যে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে ১০টি। অন্য ৪৪টি কেন্দ্রকে শুধু ঝুঁকিপূর্ণ দেখানো হয়েছে।
কক্সবাজারের জ্যেষ্ঠ সহকারি পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল-চকরিয়া) মো. মাসুদ আলম বলেন, ‘যে পরিমান আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ভোটকেন্দ্রের দায়িত্বে থাকবে, তাতে কারও মনে শঙ্কা থাকার কথা নয়। প্রার্থীরা যেসব ভোটকেন্দ্র নিয়ে অভিযোগ তুলেছেন, সেসব কেন্দ্রে বাড়তি নজরদারি থাকবে।
পাঠকের মতামত: