ঢাকা,মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪

দাম না বাড়ার আশংকা

কোটি কোটি টাকার লস গুনতে হবে মহেশখালীর পানচাষীদের

নিজস্ব প্রতিবেদক, মহেশখালী ::
বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব পাহাড় আর সমুদ্রবেষ্টিত পাহাড়ী দ্বীপ মহেশখালী। এ দ্বীপের আবহাওয়া লবণ চিংড়ী ও পানচাষের জন্য খুবই উপযুক্ত। পানচাষ এ দ্বীপের মানুষের সুপ্রাচীন পেশা। লবণ,চিংড়ি ও পানের সমৃদ্ধায়ন মহেশখালীকে দিয়েছে অনন্য পরিচিতি।

বিভিন্ন প্রজাতির পানের মধ্যে বাংলা, সাচি,ঝালি, প্রভৃতি জাত থাকলেও মহেশখালীর পানের বিশেষত্ব স্বাদে মিষ্টি ও অনন্য। উপজেলার মিষ্টি পানের সুবাসে মুগ্ধ হয়ে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক গানের সম্রাজ্ঞী শেফালী ঘোষ গেয়েছিলেন, ‘যদি সুন্দর একখান মুখ পাইতাম/ মহেশখালীর পানের খিলি তারে বানাই খাওয়াইতাম।

পান একটি গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ। পানগাছ খুবই স্পর্শকাতর। তাই প্রয়োজন হয় বিশেষ যত্নের ।পান ক্ষেতকে বলা হয় পানের বরজ। পানের বাগান বরজ হিসেবে পরিচিত। অন্যান্য গুল্মজাতীয় উদ্ভিদের বাগান থেকে পানের বরজের পার্থক্য আছে।

মহেশখালীর পানের বরজ সাধারণত দুই ধরণের-পাহাড়ি বরজ ও বিল বরজ। মহেশখালীর মোট জনসংখ্যার পনেরো শতাংশ মানুষ পান ব্যবসার সাথে জড়িত।উপজেলার বড় মহেশখালী, হোয়ানক, কালারমারছড়া, ছোট মহেশখালী ও শাপলাপুর ইউনিয়নের পাহাড়ে ঢালু ও সমতল কৃষি জমিতে যুগ যুগ ধরে পান চাষ করে আসছে স্থানীয় পানচাষিরা।

জমির শ্রেণি অনুসারে পাহাড়ি এলাকার ভূমিতে দুই/তিন বছর স্থায়ী হলেও সমতল জমিতে পান চাষ হয় মাত্র ছয় মাস। সমতল জমিতে সেপ্টেম্বর/অক্টোবর মাস থেকে শুরু হয়ে মে/জুনে শেষ হয়। করোনার স্থবিরতা পরবর্তী মৌসুমে পানের ন্যায্য দাম পাচ্ছেনা চাষীরা। প্রান্তিক পানচাষী আব্দুল হান্নান জানান, যে পরিমাণ পান বরজ লাগানো হয়েছে সে পরিমাণ পানের দরদাম নেই। গত বছর করোনার সময় লস হয়েছে এইবার লাভের আশায়ও গুঁড়েবালি।

মহেশখালীর পানের সুনাম দেশের সীমানা পেরিয়ে এশিয়া মহাদেশ ছাড়াও ইউরোপ-আমেরিকাতেও ছড়িয়ে রয়েছে। মহেশখালীর পান সৌদি আরব, সিঙ্গাপুর, হংকং, থাইল্যান্ড, আরব আমিরাতসহ বিভিন্ন দেশেও রপ্তানি হয়। কারও কারও মতে আফ্রিকা মহাদেশের কিছু কিছু দেশও বাদ যায় না রপ্তানী থেকে।

সমগ্র বাংলাদেশের দুই তৃতীয়াংশ মিষ্টি পান মহেশখালীতে উৎপন্ন হয়। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ ১৩ হাজার ২৫০ টন পান রপ্তানি করে। সে বছর পান রপ্তানি করে বাংলাদেশ তিন কোটি ডলার আয় করে। ভারত থেকে পান আমদানী হওয়ায় এই মৌসুমে পানের দাম কমছে বলে অভিযোগ পান ব্যবসায়ীদের। এ বিষয়ে কালারমারছড়া পান বাজার সমিতির সভাপতি জানান, বাইরের রাষ্ট্র থেকে পান আমদানি করায় তারা পানের দাম পাচ্ছেনা। তারা সরকারের কাছে বাইরের আমদানি বন্ধের দাবী জানান।

ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সংস্থা বিসিকের হিসাবে বছরে প্রায় ৩০০ কোটি টাকার পান রপ্তানি হয় বাংলাদেশ থেকে। যার এক তৃতীয়াংশ মহেশখালী থেকে।

সপ্তাহে অন্তত দুই দিন মহেশখালীর বিভিন্ন এলাকায় পানের হাট বসে থাকে। কক্সবাজার জেলা কৃষি অফিস সূত্র মতে, জেলায় অন্তত ৩ হাজার হেক্টর জমিতে পান চাষ হচ্ছে। এর মধ্যে মহেশখালীতে ১৬০০ হেক্টর জমিতে পান চাষ হয়। এ তথ্য নিশ্চিত করেন মহেশখালী উপজেলা কৃষি অফিসার কাইছার।

বছরজুড়েই পানের ফলন পাওয়া যায়। তবে শীত ও বসন্তকালে ফলন কমে যাওয়ায় পানের দাম থাকে চড়া। এবছরের শীত মৌসুমে
পানের চাহিদা বেশি থাকলেও পানের দাম নিম্নমুখী হওয়ায় হতাশায় ভুগছে কৃষকেরা।

পাঠকের মতামত: