এম.এ আজিজ রাসেল :: পবিত্র কোরবানির ঈদের বাকি আর মাত্র কয়েকদিন। কক্সবাজার জেলার আট উপজেলার ৪৪টি হাটে কোরবানির পশু বিক্রি জমে উঠছে। পুরোদমে চলছে বেচাকেনা। বৃষ্টিতে কাঁদা-পানি উপেক্ষা করেই পশুর হাটে ভিড় করছেন ক্রেতারা। অনেকে ইতোমধ্যেই কিনে নিয়ে গেছেন পছন্দের গরু-ছাগল।
বাজারে পশুর কোনো কমতি নেই। চাহিদা মোতাবেক পশু রয়েছে হাটে। তবে দাম এখনও চড়া বলে জানান ক্রেতারা। ৬০-৭০ হাজার টাকার কমে কোনো গরু পাওয়া যাচ্ছে না। এ কারণে অনেকে অপেক্ষা করে আছেন দাম কমার। হাটে দেশে পালিত গরু-মহিষের পাশাপাশি বাজারে ঠাঁই হয়েছে মিয়ানমার থেকে আমদানি করা অসংখ্য পশু।
কয়েকটি পশুর হাট ঘুরে দেখা যায়, কখনও ভারী আবার কখনও গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মধ্যেও ক্রেতারা বাজারে ঘুরছেন। একটির পর একটি গরু দেখছেন। পছন্দ করছেন, কেউ কিনছেন আর কেউ না কিনে ফিরে যাচ্ছেন।
শুক্রবার খরুলিয়া হাটে দেখা যায়, রাস্তার দু’পাশে কোনো ধরনের জায়গা নেই। হাটের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত গবাদি পশুতে ঠাসা। প্রবেশ মুখেও রাখা হয়েছে গরু-ছাগল।
গত দু’দিনের তুলনায় হাটে ক্রেতাদের ভিড়ও কয়েকগুণ বেশি দেখা গেছে। বেচাকেনাও বেশ জমজমাট। তবে হাটগুলোতে চলছে ব্যাপারী ও ক্রেতার মধ্যে মধুর ‘দোষারোপ’। গরুর দাম নিয়ে একে অপরকে দোষারোপ করছেন।
ক্রেতাদের অভিযোগ- গরুর দাম তুলনামূলক বেশি চাওয়া হচ্ছে। হাটে সর্বনিম্ন ৮০ কেজি মাংস হবে এমন গরুর দামও ৬০ হাজার টাকা হাঁকা হ”েছ। ব্যাপারীদের দাবি, গো-খাদ্যের দাম বেশি। ফলে গরুর দামও বেশি। বর্তমানে প্রতি কেজি ভুসি ৩৭ টাকা। গমের আটার কেজি ২৫ টাকা।
খুরুস্কুল রাস্তার মাথা সংলগ্ন হাটে গরু দেখতে এসছেন আওলাদ শেখ। সঙ্গে নিয়ে এসেছেন দুই ছেলে আরিফ হোসেন শেখ ও ফাহিম হোসেন শেখকে। গত দুইদিন ধরে বেশ কয়েকটি হাটে ঘুরছেন তিনি। তবে এখনও দামে-দরে মেলেনি তার।
আওলাদ শেখ বলেন, বেশি চাওয়া হচ্ছে। গত কোরবানির চেয়ে গরুর দাম ৩০ শতাংশ বেশি চাওয়া হচ্ছে। দামে-দরে মিলছে না। আরও কিছু হাট দেখবো। আল্লাহ কপালে যা রাখছে, সেটাই কোরবানি দেবো। চকরিয়া ইলিশিয়া হাটেও দেশি গরুর দাম চড়া। দেড় থেকে দুই মণ মাংস পাওয়া যাবে এমন গরুর দাম হাঁকা হচ্ছে ৭৫ থেকে ৮০ হাজার টাকা। হাটে ৮০ থেকে এক লাখ টাকার গরুর চাহিদা বেশি। খরুলিয়া হাটে এসেছেন শফিকুল ইসলাম।
কোরবানির পশুর দাম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমার বাজেট ৮০ হাজার টাকা। এই দামে পছন্দের গরু মিলছে না। গরুর দাম বেশি চাওয়া হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা জানান- বাজারে পর্যাপ্ত পরিমাণ পশু উঠলেও এখনো বিক্রি তেমন হচ্ছে না। ক্রেতারা ঘুরে ঘুরে বাজার পরিস্থিতি দেখছেন। কেউ কেউ আবার দর-দামও কষাকষি করছেন।
জেলা প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এবার জেলায় কোরবানি যোগ্য পশুর চাহিদা রয়েছে প্রায় ১ লাখ। ৫ হাজার খামারী বাজারে কোরবানি পশু তুলেছে। এবার পশু সংকট পড়ার কোন আশঙ্কা নেই।
আরও জানা য়ায়, কক্সবাজার জেলার আট উপজেলায় স্থায়ী-অস্থায়ী মিলিয়ে ৪৪টি কোরবানির পশুর হাট নির্ধারণ করা হয়েছে। এরমধ্যে সদর উপজেলায় ৭টি, রামুতে ৬টি, চকরিয়ায় ১১ টি, পেকুয়ায় ৪টি, উখিয়ায় ৬টি টেকনাফে ৭টি, মহেশখালীতে ৯টি ও কুতুবদিয়ায় ৭টি।
ব্যবসায়ীরা জানান, এবার বাজারে কোরবানীর পশুর হাটে ভাল রকমের পশু বেচা-কেনা চলছে। পশুর কোন সংকট নেই। তাদের মতে জেলার মানুষের চাহিদার চেয়ে এবারের হাটে পশুর সংখ্যা বেশী।
জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা বলেন, বাজারে কোরবানি পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার জন্য মেডিকেল টিম কাজ করেছে। এছাড়া কোরবানির বাজার গুলো পুলিশের পক্ষ থেকে জালনোট সনাক্ত করতে মেশিন বসানো হয়েছে।
প্রশাসনের সূত্রে জানা গেছে- পশু বাজার গুলোতে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হয়েছে। ক্রেতা-বিক্রেতারা নিরাপদে পশু বেচা-কেনা করতে পারবেন। কোরবানীর দিন যতই ঘনিয়ে আসছে পশুর হাটে বেচাকেনা ততই বাড়বে।
পৌরসভায় পশুর হাটের গরু ব্যবসায়ী মোহাম্মদ ইব্রাহিম জানান, গতবারের তুলনায় এবারে পশু বেশি। শুরুর দিকে দাম একটু বাড়তি থাকলে শেষের দিকে দাম তুলনামূলকভাবে কমবে। বাজারের চাহিদার তুলনায় অনেক গরু বিভিন্ন জায়গা থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।
পৌরসভার পশুর হাট ইজারাদার শাহেদ মোহাম্মদ ইমরান জানান, পশুর হাট শুরু হয়েছে মাত্র ৩দিন। শুরুর দিনেই যথেষ্ট পরিমান গরু-মহিষ আসছে বাজারে। বেচাকেনা বেশ ভাল হচ্ছে। চাঁদ রাত পর্যন্ত জমজমাট বিক্রি হবে।
পাঠকের মতামত: