নিজস্ব প্রতিনিধি, কক্সবাজার ::৷ অবৈধ ইটভাটা বন্ধে হাইকোর্টের নির্দেশ উপেক্ষিত থাকছে বরাবরই। কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তর মাঝে-মধ্যে অভিযান চালিয়ে কয়েকটি ইটভাটা বন্ধ করলেও অজ্ঞাত কারণে মাঝপথেই থেমে যাচ্ছে অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে অভিযান।

অভিযোগ উঠেছে, কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের অভ্যন্তরে একটি সিন্ডিকেটের সাথে অবৈধ ইটভাটা মালিকদের আর্থিক লেনদেনের কারণে কার্যত অকার্যকর হয়ে পড়ছে অভিযান। ফলে দিন দিন অবৈধ ইটভাটার সংখ্যা বেড়েই চলছে। নিয়ম-নীতি না মেনে পরিবেশের আইনকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে এসব ইটভাটা গড়ে তুলছে প্রভাবশালী ও রাজনৈতিক আশ্রয় থাকা কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ীরা।
কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলায় ৮৬ টি ইটভাটার মধ্যে ৪৬ টি অবৈধ ইটভাটা রয়েছে । গত বছর রামু, কক্সবাজার সদর, উখিয়া এবং টেকনাফে কয়েকটি অবৈধ ইটভাটায় অভিযান চালিয়ে বন্ধের নোটিশ প্রদান করে এবং জরিমানা আদায় করা হয়। তবে চলতি বছর পুণরায় এসব ও অবৈধ ইটভাটা চলছে হরদমে।
জানা গেছে, ৪৬ টি অবৈধ ইটভাটার মালিককে বারবার নোটিশ দেওয়া সত্ত্বেও পরিবেশ আইনকে তোয়াক্কা না করে চালিয়ে যাচ্ছে ইট উৎপাদন। গত ফেব্রুয়ারিতে অনেক ঘটা করে পরিবেশ অধিদপ্তর ও স্থানীয় প্রশাসন টেকনাফ উপজেলায় অভিযান চালিয়ে ছয়টি অবৈধ ইটভাটাকে ১২ লাখ টাকা জরিমানা করলেও পুরোপুরি বন্ধ করা যায়নি এসব অবৈধ ইটভাটা।
জানা যায়, জেলার বিভিন্ন এলাকায় বাড়ছে অবৈধ ইটভাটা। নিয়মনীতি না মেনে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা ইটভাটার কালো ধোঁয়ায় বিপন্ন হচ্ছে পরিবেশ। অবৈধভাবে কৃষি জমিতে ইটভাটা তৈরির কারণে কমছে চাষাবাদের জমি। এছাড়া, ইট পোড়ানোর কাজে জ্বালানি হিসেবে কাঠ ব্যবহারে কমছে গাছ। ফলে বিরান ভূমিতে পরিণত হচ্ছে বনাঞ্চল।
পরিবেশ অধিদপ্তর ইতিপূর্বে তথ্য দিয়েছিল, কক্সবাজারের ৫৮ শতাংশ ইটভাটার পরিবেশগত ছাড়পত্র নেই। যদিও উচ্চ আদালতে রীট করে কিছু কাগজপত্র সৃজনের মাধ্যমে চলছে বেশ কয়েকটি ইটভাটা।
পরিবেশ আইন, ইট প্রস্তুত ও ভাটা প্রস্তুত আইন অনুযায়ি সরকারি বা ব্যক্তি মালিকানাধীন বন, অভয়ারণ্য, বাগান বা জলাভূমি ও কৃষিজমিতে ইটভাটা তৈরি করা যাবে না। এছাড়া সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, উপজেলা সদর এলাকায়ও ইটভাটা তৈরি করা যাবে না। অন্যদিকে ইট তৈরির জন্য কৃষিজমি, পাহাড়, টিলা থেকে মাটি কেটে কাঁচামাল হিসেবে এবং জ্বালানি হিসেবে কাঠ ব্যবহারও নিষিদ্ধ।

কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের কতিপয় কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সম্প্রতি রামু ও ঈদগাও ব্রীক ফিল্ড সমিতির নেতাদের কাছ থেকে অভিযান বন্ধের শর্তে মোটা টাকা আদায়ের অভিযোগ তুলেছেন অনেকে।
অবৈধ অনুমোদনহীন ইটভাটা বন্ধে পরিবেশ অধিদপ্তরের পদক্ষেপ বিষয়ে জানার জন্য কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক( চলতি দায়িত্ব) নুর আলমের সাথে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে মোবাইল রিসিভ না করায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। খুদেবার্তা পাঠানো হলেও কোন সদুত্তর মেলেনি।
বিভিন্ন উপজেলায় কয়েকটি ইটভাটায় অভিযান চালিয়ে ভাটা মালিকদের ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায়ের অভিযোগের বিষয়ে জানতে কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক জমির উদ্দিন এর বক্তব্য নেওয়ার জন্য বারবার যোগাযোগ করা হলে তিনি ও মোবাইল রিসিভ না করায় বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
পাঠকের মতামত: