জাকের উল্লাহ চকোরী, কক্সবাজার থেকে : দেশের ধন ভান্ডার খ্যাত কক্সবাজার জেলার প্রায় অর্ধকোটি মানুষ এখন চরম আর্থিক সংকটে পড়েছে। এ জেলার অন্যতম আয়ের উৎস হচ্ছে চিংড়ি চাষ। চলতি বছরে মৌসুম শুরুর দিকে অনাবৃষ্টির কারণে কাঙ্খিত পরিমান বাগদা চিংড়ি উৎপাদন না হওয়ায় কোটি কোটি টাকা পুঁজি বিনিয়োগ করে কাঙ্খিত উৎপাদন না হওয়ায় চাষীরা আর্থিক ভাবে দেওলিয়া হওয়ার পথে।
জেলা মৎস্য অফিস সুত্রে জানা যায়, ৮ উপজেলায় প্রায় ৫০ হাজার হেক্টর সরকারী ও ব্যক্তি মালিকানাধীন জমিতে চিংড়ি চাষ হয়। এতে জেলার লক্ষাধিক চিংড়ি চাষী, ব্যবসায়ী ও ঘের মালিকরা কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে চিংড়ি চাষ শুরু করে। বর্তমানে কোন ঘেরেই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারেনি চাষীরা।
চকরিয়ার চিংড়ি চাষী, জহিরুল ইসলাম জানান, মড়কের কারণে কোটি কোটি টাকার বাগদা চিংড়ি মারা গেছে। ফলে তারা বিনিয়োগকৃত অর্থ আয় করতে না পারায় চরম দূর্ভোগে পড়েছে।
উল্লেখ্য যে, বিগত ১৯৯৩-৯৪ সালে এখানকার চিংড়ি চাষীরা সনাতন পদ্ধতি বাদ দিয়ে আধা নিবিড় পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষ শুরু করে। এক সময় চিংড়িঘের এলাকায় ব্যাপক হারে ম্যানগ্রোভ ফরেষ্ট (প্যারাবন) ছিল। এসব প্যারাবন নিধন করে কিছু ভূমিদস্যুরা নতুন নতুন চিংড়ি ঘের তৈরী করতে গিয়ে ব্যাপক হারে প্যারাবন নিধন করে। এখন কার প্যারাবন নির্ধন করার কারণে চিংড়ি চাষের বিপর্যয় শুরু হয় এবং ব্যাপক আকারে মড়ক দেখা দেয়।
মৎস্য অফিস সুত্রে আরো জানা যায়, জেলার ৮ উপজেলার সমুদ্র তীরবর্তী এলাকায় প্রতিবছর সামুদ্রিক লোনা পানির সাহায্যে বাগদা চিংড়ি চাষ হয়ে আসছে। এর মধ্যে চকরিয়া উপজেলার বিলুপ্ত চকরিয়া সুন্দরবন এলাকায় চাষ হয় ১২ হাজার ৩৭৯ হেক্টর। মহেশখালীতে ৯ হাজার ৬৬৪.২ হেক্টর,উখিয়ায় ১১ হাজার ১০০.৫৪ হেক্টর,কক্সবাজার সদরে ৩ হাজার ৩১৭ হেক্টর, কুতুবদিয়ায় ৭১.৭৭ হেক্টর, টেকনাফে ২হাজার ৬০০.৭৯ হেক্টর,রামুতে ৬২.৬৭ হেক্টর ও পেকুয়া উপজেলায় ২ হাজার ৮০০.৩৫ হেক্টর জমিতে বাগদা চিংড়ি চাষ হয়।
সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানায়, জেলায় উৎপাদিত বাগদা চিংড়ি দেশের চাহিদা মিটিয়ে প্রতিবছর অন্তত ৫০০ কোটি টাকার চিংড়ি বিদেশে রপ্তানি করা হয়। চলতি বছর ফেব্রুয়ারি মাস থেকে চিংড়ি চাষ শুরু হলেও কোন চাষীরা এই পর্যন্ত বিনিয়োগকৃত পুঁজি ফিরে পায়নি। এতে করে তারা এ বছর অন্তত শত কোটি টাকার ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছে বলে জানান।
পাঠকের মতামত: