অনলাইন ডেস্ক ::
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী বাছাইয়ে কঠোর অবস্থানে থাকবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। প্রার্থীর জনপ্রিয়তা, এলাকায় অবস্থান, স্থানীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সম্পর্কসহ দল নির্ধারিত আরও বেশ কিছু ক্রাইটেরিয়া মেনেই দেওয়া হবে মনোনয়ন।
আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে ও দলীয় সূত্রে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। এ ছাড়া নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের সর্বশেষ শনিবারের বৈঠকে সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও কঠোর অবস্থান ব্যক্ত করে প্রার্থী নির্বাচনে পরিবর্তন আনার ইঙ্গিত দিয়েছেন। সেক্ষেত্রে বর্তমান এমপিদের ৫০ বা ৬০ শতাংশ বাদ পড়তে পারেন। দলীয় সূত্রমতে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জন্য বড় একটা চ্যালেঞ্জ। কেননা টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় আসা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কঠিন। কারণ দলটি ধারাবাহিকভাবে দুই মেয়াদে ক্ষমতায় থাকায় যেমন শুভাকাঙ্ক্ষী বেড়েছে তেমনি শত্রুর সংখ্যাও কম নয়। সেই সঙ্গে অনেক মন্ত্রী-এমপি-দলীয় নেতা-কর্মী ও তাদের আত্মীয়স্বজনদের খারাপ আচরণে সাধারণ মানুষের সমর্থনও কমেছে। এ ছাড়া আগামী নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণের ইঙ্গিতে ক্ষমতাসীনরা কিছুটা চাপের মধ্যে রয়েছেন। যে কারণে এবার দলীয় মনোনয়নে বড় পরিবর্তন আনার কথা ভাবছেন দলের নীতিনির্ধারকরা। গত শনিবার রাতে গণভবনে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের রুদ্ধদ্বার বৈঠকে দলীয় নেতা-এমপি-মন্ত্রীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, একাদশ সংসদ নির্বাচন ২০১৪ সালের নির্বাচনের মতো হবে না। এ নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে, আরও কঠিন হবে। এলাকায় যাদের জনসম্পৃক্ততা নেই তাদের দায়িত্ব নেব না। জনবিচ্ছিন্নরা দলীয় মনোনয়ন পাবেন না। আমি জরিপ করছি, আরও জরিপ করা হবে। কার কী অবস্থা তার তালিকা করছি। কেন্দ্রীয় নেতাদের সতর্ক করে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, অনেকেরই টাকা-পয়সা হয়েছে। নিজ নির্বাচনী এলাকায় গিয়ে প্যাঁচ লাগাচ্ছেন। আমার কাছে খবর আছে। একটি সংসদীয় আসন ধরে রাখা অনেক কঠিন কাজ। কিন্তু পদ-পদবি ব্যবহার করে এলাকায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবেন, ভোট নষ্ট করবেন। তাকে ছাড় দেওয়া হবে না। এ সময় প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, কেন্দ্রীয় নেতা বা বর্তমান এমপিরাই যে মনোনয়ন পাবেন, তা নিশ্চিত নয়। একবার-দুবার বিজয়ী হলে মানুষের চাহিদাও বেড়ে যায়। আগামী নির্বাচনে আমাদের জিততে হবে। মানুষের চাহিদাও বেশি থাকবে। আগামী নির্বাচনে দল কারও দায়িত্ব ও কারও জন্য ঝুঁকি নেবে না। যাকে দিয়ে নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়া সম্ভব হবে কেবল তাকেই মনোনয়ন দেওয়া হবে। এতে কে কেন্দ্রীয় নেতা, কে এমপি কারও দিকে তাকাব না। সূত্র জানায়, দলীয় রাজনীতিতে সক্রিয় নন, কিন্তু নিজেকে প্রার্থী বলে ঘোষণা করছেন এমন প্রবাসীদের প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, তারা নিজ নিজ এলাকায় দলীয় কর্মকাণ্ডে নেই। কিন্তু আগামী নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে প্রচার চালাচ্ছেন। তারা মনে করেন, টাকা থাকলে নির্বাচনে জয়লাভ করা যায়। কিন্তু তারা জানেন না যে, জনপ্রিয়তা না থাকলে এবং মানুষের ঘরে ঘরে না গেলে ভোট পাওয়া যাবে না। ডলার-পাউন্ড খরচ করে বিজয়ী হওয়া যায় না। দল ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সূত্র জানায়, প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায় বর্তমান এমপিদের ভালো কাজ আর মন্দ কাজের একটি তালিকা তৈরি করে দেওয়া হয়েছে প্রধানমন্ত্রীকে। এর সঙ্গে আরও আছে ওই এলাকার অবস্থা, মনোনয়ন লাভে ইচ্ছুকদের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি, এলাকায় তাদের ইমেজ। তাদের ইতিবাচক এবং নেতিবাচক দিকগুলো। বর্তমান সংসদে আওয়ামী লীগের এমপি রয়েছেন ২৩৪ জন। তাদের মধ্যে পুরুষ ২১৬ এবং নারী ১৮ জন। বিভিন্ন সংস্থা ও আওয়ামী লীগের পক্ষে পরিচালিত একাধিক জরিপের ফলের ভিত্তিতে দেখা গেছে, এই ২৩৪ এমপির মধ্যে প্রায় ৩৪ জন সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন। বাকি ২০০ জনের প্রায় কমবেশি সবাই বিতর্কিত। তাদের মধ্যে কেউ জনবিচ্ছিন্ন, কেউ আত্মীয়করণে জড়িত, কেউ দুর্নীতিবাজ, কেউ টিআর-কাবিখার অর্থ আত্মসাৎ করেছেন, কেউ চাকরি দেওয়ার নাম করে গরিব চাকরি প্রার্থীদের কাছ থেকে অর্থ লুটে নিয়েছেন। অনেকের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, মাদক ব্যবসা এবং দখল বাণিজ্যে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।
পাঠকের মতামত: