সোয়েব সাঈদ, রামু ::
মুসলিম গণহত্যাকে বর্বরোচিত উল্লেখ করে আর্ন্তজাতিক আদালতে মায়ানমার সরকারকে বিচারের মুখোমুখি করতে বিশ^ সম্প্রদায়ের প্রতি জোর আহবান জানিয়েছেন, কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু) আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ¦ সাইমুম সরওয়ার কমল। তিনি নিপীড়িত, নির্যাতিত, অসহায় রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে বিশে^ বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করায় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেছেন।
আজ সোমবার (১১ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় জাতীয় সংসদের গুরুত্বপূর্ণ এ অধিবেশনে সাংসদ কমলের বক্তব্য সর্বত্র সাড়া জাগিয়েছে। উল্লেখ্য রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে চীফ হুইপ আ,স,ম ফিরোজ জাতীয় সংসদে বক্তব্য দেয়ার জন্য সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমলকে জরুরী তলব করেন।
বিশ^জুড়ে আলোচিত রোহিঙ্গা নিপীড়ন নিয়ে মহান জাতীয় সংসদে দেয়া বক্তব্যে কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু) আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ¦ সাইমুম সরওয়ার কমল বলেন, মায়ানমার সরকারের অত্যাচার, নিপীড়ন ও গণহত্যার শিকার লাখ লাখ নারী- পুরুষ, শিশু এখন সীমান্তে ছুটে এসেছে। বর্বরতায় নিহত রোহিঙ্গাদের রক্তে নাফ নদী এখন লাল হয়ে গেছে। কোন সংবাদপত্র বা টেলিভিশনে নয়, মায়ানমারে রোহিঙ্গাদের গ্রাম জ¦ালিয়ে দেয়ার দৃশ্য তিনি সরাসরি দেখেছেন। মায়ানমারের আরাকান রাজ্যের বুচিডং বাজার, সাহেব বাজার, ফকিরা বাজার, মংডু সহ অনেক এলাকার হাজার হাজার বসত ঘর ও দোকানপাট পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এখন আর কারো বাড়ি আর অবশিষ্ট নেই।
সাংসদ কমল বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে মায়ানমারে রোহিঙ্গা নির্যাতনের প্রথম দিন থেকেই থেকে তিনি সব কিছু পর্যবেক্ষন করে আসছিলেন। তাঁর আসন থেকে মাত্র এক কিলোমিটার দূরত্বে মায়ানমার সীমান্ত। এ আসনের পাশেই উখিয়া-টেকনাফ। এসব এলাকায় এখন নির্যাতিত রোহিঙ্গারা ঠাঁই নিয়েছে। জাতিসংঘ বলেছে ৩ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছে। কিন্তু আমাদের হিসেব মতে এ সংখ্যা ৫ লাখ হবে।
সাংসদ কমল বলেন, বাংলাদেশের হলি আটিজান রেস্তোরায় এবং একযোগে ৬৪টি জেলায় জঙ্গিরা হামলা চালিয়েছিলো। কিন্তু সন্ত্রাসী ধরার নামে কোন নিরাপরাধ ব্যক্তিকে হয়রানি করা হয়নি। কিন্তু মায়ানমার সরকার একটি পুলিশ ফাঁড়িতে হামলার অজুহাতে পরিকল্পিতভাবে রোহিঙ্গা নিধন ও দমন-পীড়ন চালিয়ে যাচ্ছে। যা কোনভাবেই মেনে নেয়া যায়না। নিপীড়ন, নির্যাতন ও গণহত্যার বিরুদ্ধে অনেক মুসলিম দেশের নিরবতায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন সাংসদ কমল।
সাংসদ কমল অং সান সুচির তীব্র সমালোচনা করে বলেন, যে ধর্মে পশু হত্যা নিষেধ, সেই ধর্মের মানুষ এখন মানুষ হত্যার উল্লাসে মেতেছে। তাই এখন বিশ^বাসী আপনার নোবেল প্রত্যাহারের আবেদন জানাচ্ছে। এ পুরস্কার এখন শান্তির দূত, নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের ভরসাদানকারি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাকে দেয়া প্রয়োজন।
তিনি নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের সহায়তায় সরকার এবং সকলকে এগিয়ে আসার আহবান জানিয়ে বলেন, রোহিঙ্গাদের কারো গায়ে কাপড় নেই, কারো পেঠে খাবার নেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে মানবিক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। এখন সময়ের দাবি, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যেন বিশ^বিবেক জেগে উঠে মায়ানমারকে বিচারের মুখোমুখি করে।
উল্লেখ্য মায়ানমারে রাখাইনদের নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশ পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা মুসলিমদের দেখার জন্য মঙ্গলবার (১২ সেপ্টম্বর) কক্সবাজারের উখিয়া আসছেন প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা। গুরুত্বপূর্ণ এ সফরের আগেরদিন জাতীয় সংসদে সাংসদ সাইমুম সরওয়ার কমলের তথ্যবহুল এ বক্তব্যকে ঐতিহাসিক বক্তব্য বলে মনে করছেন রাজনৈতিক অভিজ্ঞ মহল।
পাঠকের মতামত: