ঢাকা,মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪

১৫ দালালের নিয়ন্ত্রণে পেকুয়া ভুমি অফিস!

মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন, পেকুয়া ::

চিহ্নিত ১৫দালালের নিয়ন্ত্রনে এখন কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলা ভূমি অফিস! সরকারী ছুটির দিন ব্যতিত প্রতিদিন সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত এসব চিহ্নিত দালাল পেকুয়া বাজারের নবনির্মিত ভবনের ২য় ও ৩য় তলায় অবস্থিত উপজেলা ভূমি অফিসের বিভিন্ন পদবীধারী কর্মচারীদের টেবিলের সামনে সামনে ঘুরঘুর করে। গত কয়েকদিন ধরে সরেজমিনে বেশ কয়েকবার পেকুয়া উপজেলা ভূমি অফিসে গিয়ে দালালদের এমন উৎপাতের চিত্র দেখা গেছে। এসময় মগনামার এক বাসিন্দা বলেন ‘সাংবাদিক ভাই কীর আর করব, এ অফিসে দালাল ছাড়া কোন কাজই হয়না’। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই লোক আরো বলেন ‘সরাসরি ভূমি সমস্যার জন্য অফিসের কর্তা মশাইদের কাছে যেতে চাইলেও দালালারা যেতে দেয়না, কাজ করে দেওয়ার আশ্বাসে দালালেরা হাতিয়ে নেয় মোটা অংকের টাকা। এভাবেই নিজের অসহায়ত্বের কথা প্রকাশ করলেও ওই ব্যক্তি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চিহ্নিত ১৫ দালাল ভূমি অফিস নিয়োগকৃত সরকারী কর্মচারী না হলেও এরা উপজেলা ভূমি অফিসে বীরদর্পে প্রতিনিয়তই দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। এরা এখন ভূমি অফিসের এখন অঘোষিত কর্মচারী! এদের অত্যাচারে ভূমি অফিসে আগত পেকুয়া উপজেলার ৭ ইউনিয়নের অসংখ্য জমির মালিক অতিষ্ট হয়ে পড়েছে। দালাল ছাড়া কোন ভূক্তভোগীরা ভূমি অফিসের ধারে-কাছেও যেতে পারেনা। দালালেরা নির্নিষ্ট সময়ে জমির খতিয়ান, ভূমি সংক্রান্ত মামলাসহ ভূমির বিভিন্ন সমস্যাদি দ্রুত সমাধান করে দেওয়ার আশ্বাসে ভূমি অফিসের প্রকৃত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নাম ভাঙ্গিয়ে সাধারান লোকজনকে প্রলোভনে ফেলে আদায় কওে নেন মোটা অংকের টাকা। এছাড়াও ভূমি অফিসের এক শ্রেণীর অসৎ ও ঘুষখোর কর্মচারীদের সাথে এসব দালালদের দারুণ সখ্যতার সুযোগকে পুঁজি করে সাধারান লোকজনের কাছ থেকে জমির নানাবিধ সমস্যা নিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। পেকুয়া ভূমি অফিসে সম্প্রতি সময়ে দালালদের এভাবে উৎপাত বৃদ্ধি পেলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ভ’মি অফিসে আগত দালালদের বিরুদ্ধে রহস্যজনক কারণে কোন ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করছেনা বলে স্থানীয় সচেতন মহল অভিযোগ করেছেন। ভূমি অফিসে সিসি ক্যামেরাও রয়েছে। প্রতিনিয়তই দালালদের তৎপরতার ভিডিও চিত্র সিসি ক্যামেরায় রেকর্ড হচ্ছে। কর্তৃপক্ষ চাইলে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ চেক করে দালালদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থাও গ্রহণ করতে পারবে বলে মন্তব্য করেছেন সচেতন মহল।

স্থানীয় সচেতন মহল জানায়, পেকুয়া উপজেলা ভূমি অফিসে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় দালালদের সংখ্যা দিন দিন আশংকাজনকভতারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর এই্ সুযোগে পেকুয়া উপজেলার ৭ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের ১৫জন চিহ্নিত দালাল প্রতিনিয়তই ভূমি অফিসের বিভিন্ন পদবীধারী কর্মচারীদের নাম ভাঙ্গিয়ে সাধারান লোকজনের কাছ থেকে জমির নানা সমস্যাকে পুঁজি করে অবৈধ উপায়ে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন। এক প্রকার পেকুয়া উপজেলা ভূমি অফিসকে জিম্মি করে রেখেছেন ওই আলোচিত ১৫ দালাল।

সরেজমিনে পেকুয়া ভূমি অফিসে গিয়ে দেখা গেছে, এসব দালালেরা ভূমি অফিসে দাপটের সাথে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। ভূমি অফিসের কর্মচারদের টেবিলে টেবিলে কাগজপত্র নিয়ে এদের দৌঁড়ঝাপ চোখে পড়ার মতো। স্থানীয় সুবিধাবাধী কিছু প্রভাবশালী ও ভূমি অফিসের গুটকয়েক অসৎ কর্মচারীদের ছত্রছায়ায় থাকা এসব দালালেরা কারো ধার ধারেনা। এরা কাউকেই মানেনা। অথচ, সরকারী অফিসে দালালদের প্রবেশে কড়াকড়ি থাকার কথা। কিন্তু ব্যতিক্রম পেকুয়া উপজেলা ভূমি অফিসে। এখানে অনায়েসেই দালালেরা প্রবেশ করে ভূমি অফিসের কর্মকাচারীদের কাছে নানা তদবীর বানিজ্যে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। দালাদের অবাধে আনাগোনার কারণে পেকুয়া ভূমি অফিসের নিরাপত্তাও প্রশ্নের সম্মুখীন বলে মনে করেন স্থানীয় সচেতন মহল। স্থানীয় সচেতন মহল অবিলম্বে এসব চিহ্নিত দালালদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে পেকুয়া ভূমি অফিসকে দালালমুক্ত করতে জরুরী ভিত্তিতে জেলার বর্তমান সৎ, নির্লোভ জেলা প্রশাসকের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

এ ব্যাপারে জানতে পেকুয়া ভুমি অফিসের কানুনগো সাজ্জাদ হোছাইনকে গতকাল ১৭ জুলাই সন্ধ্যায় বেশ কয়েকবার এ প্রতিবেদক তার মুঠোফোনে ফোন দিলেও তিনি কল রিসিভ না করায় বক্তব্য সংযোজন করা সম্ভব হয়নি।

 

পাঠকের মতামত: