নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া :: চকরিয়ার পালাকাটা-রামপুর পয়েন্টের সওদাগর ঘোনায় মাতামুহুরী নদীর ওপর নির্মিত রাবার ড্যামটি (রাবার ব্যারেজ)একেবারে গোড়ার মাটি খুঁড়ে নেওয়ায় চরম হুমকির মুখে পড়েছে । গত এক সপ্তাহ ধরে স্থানীয় একটি চক্র স্কেভেটর দিয়ে ড্যামের স্থায়ী ফুট ব্রিজের দক্ষিণাংশের গোড়াসহ নদী তীরের পূর্বাংশের অন্তত ১৫ ফুট গভীর থেকে মাটি কেটে অপসারণ করছে।
স্থানীয় লোকজন বলছেন, ২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক নির্মিত এই ড্যামটি যেকোনো মুহূর্তে অকার্যকর হয়ে যেতে পারে। এতে ভাঙনের কবলে পড়ে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে বিশালায়তনের তীর, অসংখ্য বসতিসহ নানা স্থাপনা। অন্যদিকে শুষ্ক মৌসুমে নদীর পানি ব্যবহার করে ফসল ফলিয়ে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন চুরমার হয়ে যাবে হাজারো কৃষকের।
সরেজমিন দেখা গেছে, মাটি খেকো ৭-৮ জনের একটি সিন্ডিকেট মাতামুহুরী নদীর এই রাবার ড্যামটির স্থায়ী ফুট ব্রিজের দক্ষিণাংশের পিলারের একেবারে গোড়া থেকে পূর্বাংশের অন্তত ১০০ মিটারের মাটি কেটে সরিয়ে ফেলছে। স্কেভেটর দিয়ে অন্তত ১৫ ফুট গভীর থেকেও মাটি কেটে তা ডাম্পার ট্রাকভর্তি করে অন্যত্র নিয়ে যাচ্ছে শ্রমিকরা। এই মাটি বিক্রির মাধ্যমে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে মোটা অংকের টাকা।
অভিযোগ রয়েছে, যে স্থান থেকে এই মাটি কেটে নেওয়া হচ্ছে তা সরকারের এক নম্বর খাস খতিয়ান এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের জায়গা। সেই জায়গা অবৈধ দখলে রেখে কেউ কেউ সবজির আবাদও করেছেন। তবে ফাঁকা পড়ে থাকা ড্যামের ফুট ব্রিজের দক্ষিণ-পূর্বাংশের বিশালায়তনের খাস জায়গায় নজর পড়ে মাটি খেকোচক্রের। তারা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে দিনরাত সমানে স্কেভেটর দিয়ে কেটে মাটি অপসারণ করছেন।
ঘটনাস্থলে কথা হয় সওদাগর ঘোনা চারা বটতল গ্রামের শামসুল আলমের ছেলে নাজেম উদ্দিনের সঙ্গে। মাটি কেটে নেওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি দৈনিক চকরিয়া নিউজকে বলেন, আমি এই জায়গার মালিক নই। যারা এই জায়গার দখলে রয়েছেন তারা জনৈক হেলাল কোম্পানিকে এই মাটি বিক্রি করেছেন। কোম্পানির হয়ে আমি স্কেভেটর দিয়ে মাটি কেটে ডাম্পারভর্তি করে বিভিন্নস্থানে নিয়ে যাওয়ার কাজ দেখভালে নিয়োজিত রয়েছি।
এভাবে মাটি কাটার ফলে রাবার ড্যাম, ফুট ব্রিজ হুমকির মুখে পড়বে- এমন প্রশ্ন করা হলে অবৈধ দখলদার আবুল ফজল বলেন, আমার দখলীয় জমির মাটি এতদিন বিক্রি করিনি। আমার পাশের জায়গা যাদের দখলে রয়েছে তারা মাটি বিক্রি করেছেন। প্রতি গাড়ি মাটি ১ হাজার থেকে ১২শ টাকায় বিক্রি করা হয়েছে। তাদের দেখাদেখি আমিও দখলীয় জমির মাটি বিক্রি করছি।
অবৈধ দখলদারেরা দাবি করেছেন, এই মাটি কেটে বিক্রি করা হলেও বর্ষা মৌসুমে মাতামুহুরী নদীতে উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানির সঙ্গে পলি এসে আবারও ভরাট হয়ে যাবে। তাই খাস জায়গা যাদের দখলে রয়েছে, তারাই মাটি বিক্রি করছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পালাকাটা-রামপুর পয়েন্টের রাবার ড্যামটির দেখভালে নিয়োজিত থাকা স্থানীয় একজন দৈনিক চকরিয়া নিউজকে বলেন, যেখান থেকে মাটি লুট করা হচ্ছে তা সরকারের এক নম্বর খাস খতিয়ান এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিয়ন্ত্রণাধীন জায়গা। সেই জায়গায় রাজত্ব কায়েম করেছে স্থানীয় মাটি খেকোচক্র। প্রথমদিকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করা হলেও তাতে কোনো কাজ হয়নি।
এ ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের চিরিঙ্গা শাখা কর্মকর্তা শাহ আরমান সালমান চকরিয়া নিউজকে বলেন, রাবার ড্যামের ফুট ব্রিজের গোড়াসহ পূর্বাংশের মাটি কেটে লুট করার বিষয়টি অবগত হওয়ার পর ঊর্ধতন কর্মকর্তাদের অবহিত করা হয়েছে। এছাড়া জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সহায়তা চাওয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেপি দেওয়ান বলেন, যারা মাটি কাটছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই অবৈধ কর্মকাণ্ড বন্ধে যদি উপজেলা প্রশাসনের সহায়তার দরকার পড়ে তাহলে সহায়তা দেওয়া হবে।
পাঠকের মতামত: