অনলাইন ডেস্ক :::
১২ লাখ টাকার চুক্তিতে হত্যা করা হয় বাংলা চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় নায়ক সালমান শাহকে। সালমান শাহ হত্যা মামলার আসামি রিজভী ১৯৯৭ সালের জুলাইয়ে আদালতে ১৬৪ ধারায় দেওয়া জবানবন্দিতেই ১২ লাখ টাকার বিষয়টি জানিয়েছিলেন।
জবানবন্দিতে রিজভী বলেন, সালমানকে হত্যা করতে সামিরার মা লাতিফা হক, ডন, ডেভিড, ফারুক, জাভেদের সঙ্গে ১২ লাখ টাকার চুক্তি করেন। তাতে উল্লেখ করা হয়, সালমানকে শেষ করতে কাজের আগে ৬ লাখ ও কাজের পরে ৬ লাখ টাকা দেওয়ার চুক্তি হয়। বৃহস্পতিবার একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের এক প্রতিবেদনে নতুন করে এ তথ্য উঠে এসেছে। আদালতের জবানবন্দিতে রিজভী বলেন, রাতে সালমানের বাসায় প্রবেশ করে আসামিরা। সালমানকে ঘুমাতে দেখে আসামিরা তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। ফারুক পকেট থেকে ক্লোরোফোমের শিশি বের করে এবং সামিরা তা রুমালে দিয়ে সালমানের নাকে চেপে ধরে। ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে মামলার তিন নম্বর আসামি আজিজ মোহাম্মদ ভাই এসে সালমানের পা বাঁধে এবং ইনজেকশন পুশ করে। এতে সামিরার মা ও সামিরা সহায়তা করে। পরে ড্রেসিং রুমে থাকা মই নিয়ে এসে, ডনের সঙ্গে আগে থেকেই নিয়ে আসা প্লাস্টিকের দড়ি আজিজ মোহাম্মদ ভাই সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলায়। টেলিভিশন চ্যানেলটির প্রতিবেদনে বলা হয়, জবানবন্দিতে ডন, ডেভিড, ফারুক, জাভেদ ও আসামি রিজভী ছাড়াও ছাত্তার ও সাজু নামে আরও দুজনের নাম উল্লেখ করা হয়। কিন্তু প্রত্যক্ষ আসামির এই জবানবন্দির পরও যাদের নাম পাওয়া যায় তারা সবসময়ই ছিল ধরাছোঁয়ার বাইরে। হত্যার এক বছর পর সিআইডির রিপোর্টে বলা হয়— এটি আত্মহত্যা। ১২ বছর পর দেওয়া জুডিশিয়াল ইনকোয়ারির রিপোর্টে একই কারণ দেখানো হয়। কিন্তু কোনো আসামি বা সংশ্লিষ্ট তদন্ত কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদের কোনো অস্তিত্ব নেই রিপোর্টগুলোতে। দুবারই নারাজি দেন সালমানের পরিবার। ২০১৫ সালে র্যাবকে এই মামলার তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হলে আইনি জটিলতায় তাও বন্ধ থাকে। ২০১৬ সালে মামলাটি নিম্ন আদালতে পাঠানো হলে তদন্তভার দেওয়া হয় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই)। এদিকে সালমানকে হত্যার পরিকল্পনা আগে থেকেই রুবি জানতেন তা বোঝা যায় রিজভীর জবানবন্দিতে। হত্যার আগে রুবির বাসায় যান হত্যাকারীরা।
আজিজ মোহাম্মদকে চড় মেরেছিলেন সালমান : এদিকে নায়ক সালমান শাহ হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে ফেসবুক লাইভে সালমানের ভাই শাহরান বলেছেন, সালমান আত্মহত্যা করেননি তাকে খুন করা হয়েছে। সালমান শাহ আত্মহত্যা করলে তার রুমের দরজায় কেন দায়ের কোপ থাকবে? দেয়ালে কেন ধস্তাধস্তির চিহ্ন থাকবে? আমি নিজে দেখেছি সেসব। আমার ভাই মার্লবোরো গোল্ড ব্র্যান্ডের সিগারেট খেত, সেখানে অন্য ব্র্যান্ডের সিগারেটের খোসা আসল কোথা থেকে? কারা খেয়েছিল এই সিগারেট? শাহরান বলেন, সালমান শাহ হত্যার পুরো ঘটনা ধামাচাপা দেওয়া হয়েছে। আমরা যখন সালমানকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাই, তখন আমাদের সঙ্গে চালাকির আশ্রয় নেওয়া হয়। আমার বাবা-মাকে আলাদাভাবে সরিয়ে দিয়ে দ্রুত পোস্টমর্টেম করতে নিয়ে যাওয়া হয়। আমি পোস্টমর্টেমের সময় থাকতে চাইলেও আমাকে থাকতে দেওয়া হয়নি। সালমান শাহ যদি আত্মহত্যাই করে তাহলে সকালে ঘুম থেকে উঠে কেন করল? মানুষ তো ঘুম থেকে উঠে এ রকম করতে পারে না। সে যদি ফ্যানে ঝুলে আত্মহত্যা করবে তাহলে ফ্যান একটুও বাঁকা হলো না কেন? ফ্যান তো ভেঙে পড়ার কথা। শাহরান বলেন, সামিরাকে (সালমানের স্ত্রী) ‘কিস’ করার জন্য আজিজ মোহাম্মদ ভাইকে (হত্যা মামলার অন্যতম আসামি) সালমান সোনারগাঁও হোটেলে প্রকাশ্যে চড় মেরেছিল। এই বিষয়টা সবাই জানে। দাফনের আগে আমি তাকে গোসল করিয়েছিলাম। তার গলায় ফাঁসির কোনো চিহ্ন ছিল না, একটা টেলিফোনের তার জড়ানোর চেষ্টা করা হয়েছিল।
সামিরা ও ডনের যে ছবি ভাইরাল : সালমান শাহর স্ত্রী সামিরাকে নিয়ে আলোচনা থামছেই না। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করা একাধিক ভিডিওতে সম্প্রতি সালমান হত্যা মামলার অন্যতম আসামি রুবি সামিরাকে অভিযুক্ত করেন। দাবি করেন, সালমানের হত্যার পেছনে আছে এই সামিরার হাত। আবার নিজের এসব বক্তব্য অসংলগ্ন এবং মানসিক চাপ থেকে বলেছেন বলে পুনরায় ভিডিওবার্তা দিয়েছেন রুবি। এরই মাঝে সামিরার সঙ্গে সালমান হত্যা মামলার আরেক আসামি ঢালিউডের খল অভিনেতা ডনের একটি ছবি ভাইরাল হয়েছে। ছবিটিতে ডনের সঙ্গে বেশ অন্তরঙ্গ অবস্থায় দেখা গেছে সামিরাকে। ‘ডিভোর্স’ শব্দটিই সালমানের মৃত্যুফাঁদ— এই শিরোনামে ‘অপরাধ চক্র’ সাময়িকীতে কয়েক বছর আগে একটি প্রতিবেদন করেন মঞ্জুশ্রী বিশ্বাস। সেই প্রতিবেদনে বেশ কয়েকটি ছবি জুড়ে দেওয়া হয়। তার মধ্যে ডন-সামিরার ওই ছবিটিও ছিল। যা সম্প্রতি ভাইরাল হয়েছে। ছবিতে দুজনকে অসংলগ্ন অবস্থায় শুয়ে থাকতে দেখা যায়। কেউ কেউ বলছেন, এ ধরনের ছবি কী ইঙ্গিত দেয় তা এখন স্পষ্ট। ছবিটি ভাইরাল হওয়ার পর সালমান শাহ হত্যা ইস্যু আরও বেগবান হচ্ছে। ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর মৃত্যু হয় সালমান শাহর। নায়কের পরিবারের দাবি, তিনি খুন হয়েছেন। আর খুনের সঙ্গে সালমানের স্ত্রী সামিরা জড়িত। তবে সামিরা ও তার পরিবারের দাবি সালমান আত্মহত্যা করেছেন। ২১ বছর পেরিয়ে গেলেও এই হত্যাকাণ্ডের কোনো কূলকিনারা হয়নি।
পাঠকের মতামত: