ঢাকা,সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪

সংঘাত এড়াতে চায় বিএনপি

bnpঅনলাইন ডেস্ক :::

নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন ইস্যুতে রাষ্ট্রপতির সংলাপ চলমান অবস্থায় বিএনপি সংঘাত এড়িয়ে চলার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। তাই দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তিন বছর পূর্তির দিন আজ ৫ জানুয়ারি সরকারের প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপি ঢাকায় কোনো কর্মসূচি নেয়নি।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ঢাকায় আজ সমাবেশ ডাকলেও বিএনপির ভাষায় ৫ জানুয়ারি ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ উপলক্ষে আগামী ৭ জানুয়ারি ঢাকায় সমাবেশ করার অনুমতি চেয়েছে। সমাবেশে চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপস্থিতি দলটি নিশ্চিত করতে চায়। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় হাজিরা দিতে আজ আদালতে যাওয়ার কথা রয়েছে খালেদা জিয়ার। তাই দুই দিন পর ওই সমাবেশ ডাকা হয়েছে, যদিও গতকাল পর্যন্ত ওই অনুমতি পাওয়া যায়নি।

 গত বছর ৫ জানুয়ারি পাল্টাপাল্টি সমাবেশ ডাকার মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি মুখোমুখি অবস্থানে চলে গেলেও শেষ পর্যন্ত দুই দলের শান্তিপূর্ণ সমাবেশের মধ্য দিয়ে দেশে স্বস্তি ফিরে আসে। তবে এর আগের বছর ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারির কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। ওই সময় গাজীপুর ও ঢাকায় কোথাও বিএনপিকে সমাবেশ করতে না দেওয়ায় ঘটনার সূত্র ধরে টানা অবরোধ ও হরতালের মধ্য দিয়ে প্রায় চার মাস দেশে অচলাবস্থা চলে।

আজকের এই দিনে বিএনপি ঢাকায় কোনো কর্মসূচি রাখেনি। বিকেল ৩টায় নয়াপল্টন কার্যালয়ে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে দলটির যৌথ সভা অনুষ্ঠিত হবে। আর সারা দেশে পালিত হবে কালো পতাকা উত্তোলন ও কালো ব্যাজ ধারণ কর্মসূচি। এ ছাড়া দেশের সব জেলা ও মহানগরীতে দলটি কালো পতাকা মিছিল বের করবে। এসব কর্মসূচি সংঘাত ও সংঘর্ষ এড়িয়ে শান্তিপূর্ণভাবে পালনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে কেন্দ্র থেকে।

জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘৫ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনের দিনে আমরা জেলা ও মহানগরীতে শান্তিপূর্ণ কালো পতাকা মিছিল কর্মসূচি দিয়েছি। সেখানে কোনো সংঘাত হবে না। সরকার উসকানি না দিলে সংঘাতের আশঙ্কাই দেখছি না। ’

বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান মোহম্মদ শাহজাহান বলেন, ‘৫ জানুয়ারির কর্মসূচি অত্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে পালনের জন্য আমরা নির্দেশনা দিয়েছি। সব ধরনের সংঘাত-সংঘর্ষ এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছি। আশা করি পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণই থাকবে। ’

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও বরিশাল মহানগরী বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ার বলেন, ‘শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালনের জন্য বরিশালে যাচ্ছি। গণ্ডগোল করার ইচ্ছা বা প্রস্তুতি কোনোটাই নেই। এখন প্রশাসন বা ক্ষমতাসীনরা যদি পায়ে পাড়া দিয়ে ঝগড়া করে, সেটি অন্য কথা। ’

রাজশাহী বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বলেন, ‘রাজশাহী বিভাগের ৯টি জেলায় শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালনের নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে। কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবেই পালন করতে পারব বলে আশা করি। ’

আজকের দিনে ঢাকায় দুটি সমাবেশ করার কথা রয়েছে আওয়ামী লীগের। সারা দেশের জেলা ও উপজেলায়ও অনুরূপ কর্মসূচি পালন করবে দলটি। বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করবে ঢাকা মহানগরী আওয়ামী লীগের দক্ষিণ কমিটি। আর ধানমণ্ডির রাসেল স্কয়ারে সমাবেশ করবে মহানগরী উত্তর কমিটি।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘৫ জানুয়ারি সংঘাত-সংঘর্ষ কিংবা অশান্তি হওয়ার কোনো কারণ দেখি না। ’ তাঁর মতে, কোথাও কোনো কর্মসূচি পালন করতে হলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অর্থাৎ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অনুমতি লাগে। কারণ দেশে শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব তাদের। সুতরাং কোথাও কোনো নাশকতার আশঙ্কা থাকলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীই তাদের প্রতিরোধ করবে। তা ছাড়া দেশের জনগণও এখন আর অশান্তি চায় না। বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাস দেখতে দেখতে তারা ক্লান্ত— যোগ করেন আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী এই নেতা।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের শরিকরা অংশ নেয়। অন্যদিকে বিএনপিসহ ২৮টি রাজনৈতিক দল ওই নির্বাচন বর্জন করে। ভোটগ্রহণের আগেই ১৫৪ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। একতরফা ওই নির্বাচনের দিনটিকে বিএনপি প্রথম বছর থেকেই ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ এবং আওয়ামী লীগ ‘গণতন্ত্রের বিজয় দিবস’ হিসেবে পালন করে আসছে।

বাধা উপেক্ষা করে কর্মসূচি পালনের ঘোষণা রিজভীর : সরকারি দলের হুমকি-ধমকি উপেক্ষা করে ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ উপলক্ষে দেশের সব জেলা ও মহানগরে কেন্দ্রঘোষিত কালো পতাকা মিছিল অনুষ্ঠিত হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী। তিনি বলেছেন, বিএনপি ক্রমাগত আন্দোলনের মধ্যে রয়েছে। বিভিন্ন ইস্যুতে বিক্ষোভ, মানববন্ধন কর্মসূচি দিয়ে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে। ৫ ও ৭ জানুয়ারি গণতন্ত্র হত্যা দিবস উপলক্ষে যে কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে তা-ও শান্তিপূর্ণ হবে। সরকার বাধা দিলে তা উপেক্ষা করেই কর্মসূচি পালন করা হবে। গতকাল বুধবার দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে রিজভী এ কথা বলেন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে রিজভী বলেন, বর্তমান গণতন্ত্রহীন দেশে যেভাবে রক্তাক্ত পন্থায় নির্বাচনব্যবস্থাকে ধ্বংস করা হয়েছে, তাতে একটি স্বাধীন, শক্তিশালী ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন ছাড়া আগামী দিনে কোনো নির্বাচন যে সুষ্ঠু হবে না সেটি বাংলাদেশের জনগণ দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে। নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে রাষ্ট্রপতির আশাবাদের বাস্তব প্রতিফলন ঘটলে দেশের প্রতিটি মানুষ সেটিকে অন্তরের অন্তস্থল থেকে স্বাগত জানাবে। বিএনপিও দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল হিসেবে সেটিকে স্বাগত জানাবে।

এক প্রশ্নের জবাবে রিজভী বলেন, ‘রাষ্ট্রপতির সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিস্থিতি তৈরির ওপর নির্ভর করছে বিএনপির পরবর্তী কর্মসূচি। তিনি বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করা হলে আমরা আন্দোলনে যাব না। অন্যথায় পরিস্থিতি বুঝে পরবর্তী কর্মসূচি নিয়ে ভাববে বিএনপি। ’

আরেক প্রশ্নের জবাবে বিএনপির এই নেতা বলেন, সংবিধান অনুসারেই গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য উদ্যোগ নিতে পারেন রাষ্ট্রপতি। তিনি এ বিষয়ে আন্তরিক হলে প্রশ্ন উঠবে না। সরকারের প্রভাবে প্রভাবিত হবে না এমন লোক দিয়ে সার্চ কমিটি গঠন করতে হবে, যাঁরা সবার আস্থাভাজন হবেন।

রিজভী আরো বলেন, আওয়ামী লীগের অন্তঃকোন্দলে দেশব্যাপী খুনাখুনির ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটেই চলেছে। কিন্তু নিজেদের অপরাধ ঢেকে রাখার জন্য বেসামাল হয়ে দলের নেতারা প্রতিনিয়ত মিথ্যাচার ও দোষারোপের রাজনীতি শুরু করেছে, যার সঙ্গে বাস্তবতার কোনো মিল নেই। নিজেদের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে মূলত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে প্রতিপক্ষ দমন ও নিপীড়নে ব্যবহার করার কারণেই সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতি।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মজিবর রহমান সরোয়ার, খায়রুল কবির খোকন, কেন্দ্রীয় নেতা আব্দুস সালাম আজাদ, তাইফুল ইসলাম টিপু, মুনির হোসেন, বেলাল আহমেদ, নির্বাহী কমিটির সদস্য আমিনুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

পাঠকের মতামত: