‘আটকের’ ১৫ দিন পর ঝিনাইদহ সদর উপজেলার তেতুলবাড়িয়া এলাকায় পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে ইসলামী ছাত্রশিবিরের দুই নেতা নিহত হয়েছেন।
নিহতরা হলেন- ঝিনাইদহ পলিটেকনিক কলেজের সাবেক শিবির নেতা আনিসুর রহমান ও বর্তমান শিবির নেতা শহিদ আল মাহমুদ।
বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে নলডাঙ্গা ইউনিয়নের তেতুলবাড়িয়া গ্রামের উত্তরের মাঠে এ ঘটনা ঘটে।
বুধবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি আতিকুর রহমান ও সেক্রেটারি জেনারেল ইয়াছিন আরাফাত বলেন, ‘গত ১৩ জুন ঝিনাইদহ থেকে শিবির নেতা শহিদ আল মাহমুদকে ও ১৬ জুন রাতে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে মোহাম্মদীয়া হাউজিং সোসাইটির ৯ নাম্বার রোডের ১১ নাম্বার বাসার ৬ তলা থেকে ছাত্রশিবির ঝিনাইদহ শহর শাখার সাবেক সভাপতি ইবনুল ইসলাম পারভেজ, একই শাখার ছাত্রকল্যাণ ও আইন সম্পাদক এনামুল হক, ঝিনাইদহ পলিটেকনিকের সাবেক ছাত্র আনিসুর রহমানকে সাদা পোশাকদারী পুলিশ গ্রেপ্তার করে। তাদের সন্ধানের দাবিতে সংগঠন ও পরিবারের পক্ষ থেকে বিবৃতি প্রদান করা হয়। গত ২১ জুন স্বীকারোক্তির নাটক সাজিয়ে শিবির নেতা এনামুলকে গোপনে আদালতে হাজির করে পুলিশ। কিন্তু গ্রেপ্তারের পর ১৪ দিন পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত বাকি ৩ নেতাকে আদালতে হাজির করা হয়নি।’
শিবিরের বিবৃতিতে দাবি করা হয়, ‘গত ১৩ জুন ঝিনাইদহ শহরের বদনপুর গ্রাম থেকে গ্রেপ্তারের সময় উপস্থিত জনতা তাদের মধ্য থেকে এসআই আমিনুর ও এসআই উজ্জলকে চিনতে পারে। অন্যদিকে রাজধানীতে গ্রেপ্তার হওয়া ৩ জনের মধ্যে একজনকে হাজির করে পুলিশ গ্রেপ্তারের বিষয়টির প্রমাণ দিয়েছে।’
এর আগে, গত ১৩ এপ্রিল সকাল ৮ টার দিকে যশোর সদরের হৈবতপুর ইউনিয়নের জোড়াদহ গ্রামের একটি পুকুর থেকে ঝিনাইদহের কালিগঞ্জ পৌরসভা ছাত্রশিবিরের সভাপতি আবুজর গিফারি ও অপর নেতা শামীম হোসেনের গুলিবিদ্ধ লাশ পাওয়া যায়। গত ১৮ মার্চ শুক্রবার জুম্মার নামাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে ঝিনাইদহ জামতলা মোড় থেকে দু’টি মোটরসাইকেলযোগে ৪ ব্যক্তি পুলিশ পরিচয়ে যশোর এমএম কলেজের ছাত্র আবুজর গিফারি এবং ২৫ মার্চ ঝিনাইদহ কে সি কলেজের অনার্স ২য় বর্ষের ছাত্র শামীম হোসেনকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় বলে অভিযোগ করেছিল তাদের পরিবার ও ছাত্রশিবির।
পুলিশের ভাষ্য
শিবির নেতা আনিসুর রহমান ও বর্তমান শিবির নেতা শহিদ আল মাহমুদ কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ার সময় তিনজন পুলিশ সদস্যও আহত হয়েছেন বলে দাবি ঝিনাইদহ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাসান হাফিজুর রহমানের।
তার দাবি, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশ জানতে পারে, তেতুলবাড়িয়া এলাকায় একদল দুর্বৃত্ত নাশকতা সৃষ্টির জন্য অবস্থান করছে। এ সংবাদের ভিত্তিতে ঝিনাইদহ সদর থানার টহল পুলিশ তেতুলবাড়িয়ার রাস্তায় টহল দিচ্ছিল। পরে তেতুলবাড়িয়া গ্রামের উত্তর মাঠের মধ্যে পৌঁছালে দুর্বৃত্তরা পুলিশের গাড়ি লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করে। আত্মরক্ষার্থে পুলিশও পাল্টা গুলি চালায়। এ সময় উভয়পক্ষের মধ্যে প্রায় ২০ মিনিট গুলি বিনিময় হয়। এতে পুলিশের এসআই প্রবীর, সদস্য রাব্বি ও তরিকুল আহত হন। এক পর্যায়ে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়। পরে এলাকাবাসীর সহযোগিতায় পুলিশ দু’জনের গুলিবিদ্ধ মরদেহ উদ্ধার করে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।
ওসির দাবি, ঘটনাস্থল থেকে দেশে তৈরি একটি স্যুটার গান, ২ রাউন্ড গুলি, ৬টি হাসুয়া ও ৫টি বোমা উদ্ধার করা হয়।
পাঠকের মতামত: