বিনোদন ডেস্ক ::
অপু বিশ্বাসকে ডিভোর্স লেটার পাঠিয়েছেন শাকিব খান। গত দু’দিন ধরে শোবিজ অঙ্গন থেকে শুরু করে গোটা দেশের মানুষের কাছে অন্যতম আলোচিত ইস্যু এটি। যেখানে ডিভোর্সের পেছনে দুটি কারণ উল্লেখ করেছেন ঢালিউড অভিনেতা। অপু বিশ্বাস তাদের একমাত্র সন্তান আব্রাম খান জয়কে তালাবন্দি করে কলকাতায় ঘুরতে যান। এবং যেখানে তার সঙ্গে ছিল বয়ফ্রেন্ড। তবে বুধবার একটি জাতীয় দৈনিককে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বিস্ময়সূচক কণ্ঠে নায়িকা বলেন, যে দুটি কারণ দেখিয়ে আমাকে ডিভোর্স লেটার পাঠানো হয়েছে সেসব সত্যিই আমার কাছে বোধগম্য নয়।
জয়কে তালাবন্দি করা সম্পর্কে অপু বিশ্বাস বলেন, আমার শারীরিক অবস্থা বেশ খারাপ থাকায় আমি আব্রামকে রেখে যেতে বাধ্য হয়েছিলাম। যদিও জয়কে নিয়েই আমার ভারত যাওয়ার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু তাকে দেখাশোনার জন্য আমার বাসায় সেলিনা আক্তার (শেলী) নামে যে মেয়েটি থাকে তার ভারতীয় ভিসার মেয়াদ ছিল না। তাই বাধ্য হয়ে একদিনের জন্য আমি একাই চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়ার জন্য ভারতে যাই। এবং ডাক্তার দেখানোর পরদিনই আবার ফিরে আসি।
ভারতে যাওয়ার আগে শাকিবের এক কাজিনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছিলেন জানিয়ে এই চিত্রনায়িকা বলেন, কিন্তু তিনি ওই সময় ব্যাংককে শাকিবের সঙ্গে ছিলেন। শারীরিক অবস্থা খারাপ না থাকলে আমি দ্রুত চলে যেতাম না। এটা ডিভোর্সের কোনো ইস্যু হতে পারে না। তাছাড়া একদিনের জন্য ভারত গেলেও আব্রামকে দেখাশুনা করার জন্য আমি বাসার কাজের মেয়েসহ আমার কাজিনকে রেখে গিয়েছিলাম।
বয়ফ্রেন্ড প্রসঙ্গে অপু বিশ্বাস বলেন, কথিত বয়ফ্রেন্ড বলে নায়ক বাপ্পিকে ঘিরে আমাকে নিয়ে যে মন্তব্য করা হচ্ছে এটা শুনে আমি বিস্মিত হয়েছি। আমি চিকিৎসা করাতে ভারতে গিয়েছিলাম, কোনো বয়ফ্রেন্ডের সঙ্গে না। এটা কেন সাজানো হচ্ছে আমি জানি না। আর বাপ্পির কথা এখানে কিভাবে এলো। বাপ্পি তো আমার জুনিয়র। আমাকে দিদি ডেকে সে সবসময়ই সম্মান করে।
যদিও হায়দরাবাদে ‘নোলক’ ছবির শুটিংয়ে থাকা শাকিবের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ডিভোর্স দেওয়ার সিদ্ধান্তে অটল বলে জানান। শাকিব বলেন, আমি আমার ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে আর কোনো কথা বলতে চাই না। ডিভোর্স সংক্রান্ত বিষয়ে আমার আইনজীবী যা বলার বলবেন। ছেলে আবরাম খান জয় প্রসঙ্গে শাকিব খান বলেন, সে তো আমারই সন্তান। আমার সন্তানের ভালোর জন্য যা যা করার দরকার, আমি অবশ্যই তা করব।
এদিকে চলচ্চিত্রকারদের মধ্যে অনেকে নাম না প্রকাশ করার শর্তে বলেছেন, অপু শাকিবকে স্বামী হিসেবে দাবি করলেও স্বামীর প্রতি স্ত্রীর দায়িত্ব কখনো সে পালন করেনি।
কোনো বিষয়ে স্বামীর অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন মনে করেনি। টিভি চ্যানেলসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গিয়ে শাকিবের বিরুদ্ধে বিষোদগার করেছে। সে এখন পর্যন্ত তার নাম ‘অপু বিশ্বাস’ রেখেছে। বিয়ের সময় ধর্ম পাল্টে মুসলমান হিসেবে তার নাম রাখা হয়েছে ‘অপু ইসলাম খান’। এরপরেও এতদিন পর্যন্ত শাকিব চরম ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছেন। শেষ পর্যন্ত সম্প্রতি শিশু সন্তান জয়কে বাসায় কাজের লোকের কাছে রেখে শাকিবের অনুমতি না নিয়ে অপু কলকাতায় চলে গেলে শাকিব হার্ডলাইনে যেতে বাধ্য হন। শাকিবকে ডিভোর্সের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার অনুরোধ জানিয়ে অপু বলেন, না হলে আমার আর কোনো পথ থাকবে না। প্রয়োজনীয় যা করার সবই করতে হবে আমাকে। অপু বলেন, আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সহায়তা চাইছি। কারণ ধর্মান্তরিত করে বিয়ে করার পর আজ আমাকে শাকিব তালাক দিতে চাইছে। আমি এখন কোথায় গিয়ে দাঁড়াব। আমার সম্প্রদায় তো এখন আমাকে আর স্বাভাবিকভাবে মেনে নেবে না। অপু বলেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত সহনশীল ও সুবিবেচনাপ্রসূত মনের মানুষ। তার সহমর্মিতা অতুলনীয়। আমি দেশের একজন প্রথম শ্রেণির নাগরিক। শাকিবের একরোখা সিদ্ধান্তে আমার জীবন এখন বিপন্ন। প্রধানমন্ত্রীর সদয় হস্তক্ষেপই এই দুর্বিষহ অবস্থা থেকে আমাকে মুক্ত করতে পারে। মানবাধিকার ও নারী সংগঠনগুলোকেও পাশে চান অপু। তিনি বলেন, সেলিব্রেটি হলেও আমার সামাজিক মর্যাদা রয়েছে। ডিভোর্সের মতো একটি ন্যক্কারজনক সিদ্ধান্ত কখনো মেনে নেওয়া যায় না। অপুর কথায়, সংসারে ঝগড়া, ঝামেলা থাকা অস্বাভাবিক কিছু নয়। শাকিবের সিদ্ধান্ত মেনে নিতাম যদি একই ধর্মের হতাম। আমাকে ও জোর করে ধর্মান্তরিত করেছে, বিয়ে করেছে। তাই তার এই অমানবিক সিদ্ধান্ত কোনোভাবেই মেনে নেব না। অপু বলেন, যদিও এখন পর্যন্ত ডিভোর্সের কোনো চিঠি পাইনি তারপরও বিষয়টি শুনে অবাক হয়েছি। কারণ গত মাসের ২৮ তারিখে সন্তান জয়কে নিয়ে শাকিবের বাসায় গিয়েছি। জয়কে শাকিবের কাছে রেখে দুদিনের জন্য গ্রামের বাড়ি বগুড়া গিয়েছি। শাকিবের মা, বাবাকে বলেছি আমি নামাজ, রোজা, হজ আদায় করব আর শাকিবের সঙ্গে সুখে সংসার করব। তারাও আমার কথায় সম্মত হয়েছিলেন। এরপর এমন কী ঘটনা ঘটল যে, সে আমাকে ডিভোর্স দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল। অপু বলেন, জয়ের জন্ম নিয়েই শাকিবের সঙ্গে তার সম্পর্কের অবনতি ঘটে। সন্তানের জন্ম হোক এটি শাকিব চায়নি। জয়ের জন্মের আগে শাকিবের আপত্তির মুখে তিনবার অ্যাবরশন করাতে হয়েছে তাকে।
অপু বলেন, জয় যখন গর্ভে আসে তখন অ্যাবরশন করানোর জন্য আমাকে ব্যাংককের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে পাঠায় শাকিব। সেখানকার চিকিৎসক জানান, যেহেতু আগে তিনবার অ্যাবরশন হয়েছে আর নতুন করে কনসেপ্টের সময় ৪ মাস হয়েছে, সেহেতু অ্যাবরশন করানো ঝুঁকিপূর্ণ। এরপর শাকিব আমাকে কলকাতা পাঠায় অ্যাবরশন করানোর জন্য। সেখানে শাকিব তখন ‘শিকারি’ ছবির শুটিং করছিল। শাকিব তার চাচাতো ভাই মুনিরকে দিয়ে আমাকে কলকাতার একটি হাসপাতালে পাঠায়। সেখানকার চিকিৎসকরাও অ্যাবরশন ওই সময় ঝুঁকিপূর্ণ জানিয়ে তা করতে অস্বীকার করেন। তখন আমি সন্তান জন্মদানের সিদ্ধান্ত নেই। আর এতেই শাকিব আমার ওপর খেপে যায়। তার সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি ঘটে। সে আমার সঙ্গে কথা বলা বন্ধ করে দেয় এমন কি আমার মোবাইল নাম্বারও ব্লক করে দেয়। এতে মুনিরের মাধ্যমে শাকিবের সঙ্গে আমার যোগাযোগ চলতে থাকে। যে কোনো বিষয়ে শাকিবের অনুমতি নিতে মুনিরের মাধ্যমে তাকে জানিয়ে আসছি। অপু বলেন, শাকিবের কারণে আমি আমার নাম অপু ইসলাম খান বলে প্রকাশ করতে পারিনি। কারণ বিয়ের ব্যাপরটি ৮ বছর ও জয় গর্ভে আসার পর থেকে টিভি চ্যানেলে তা প্রকাশ করা পর্যন্ত দেড় বছর শাকিবের নির্দেশে বিয়ে ও সন্তানের বিষয়টি গোপন রাখতে হয়েছে। আমার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, পাসপোর্ট থেকে শুরু করে সব জায়গায় ‘অপু বিশ্বাস’ নাম রয়ে গেছে। এসব বদলাতে তো সময়ের দরকার। শাকিব আমার সঙ্গে কথা বলে সব ঠিক করলে এক্ষেত্রে আর কোনো সমস্যা হওয়ার কথা ছিল না। এখন সব ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘটিয়ে শাকিব ও জয়কে নিয়ে সুখে শান্তিতে বসবাস করতে চাই।
পাঠকের মতামত: