লামা প্রতিনিধি :: বান্দরবানের লামা উপজেলার প্রায় ৭৫ শতাংশ ফসলি জমিতে তামাক চাষ চলছে। এক কথায় ফসলি জমিতে তামাকের রাজত্ব বললেই চলে। বসতবাড়ির আঙ্গিনা থেকে শুরু করে নদীর দু’পাড়, সমতল ভূমি, পাহাড়ি ঢালু জমি পর্যন্ত সব দিকেই চলছে এই বিষবৃক্ষের বিচরণ।
পুরো উপজেলা জুড়েই একটা সময় ছিল ধানক্ষেত এবং বিভিন্ন ধরনের সবুজ শাক-সবজি ও ফলমূলে ভরা চাষীদের জমি। কিন্তু ১৯৮৪ সালের দিকে বিভিন্ন তামাক কোম্পানীরা অত্র উপজেলায় এসে চাষিদেরকে স্বল্প সময়ে অধিক লাভের লোভ দেখিয়ে শুরু করায় তামাকের চাষ। তখন থেকে শুরু হয়ে গেলো তামাকের আগ্রাসন। এক সময় একে একে সব তামাক কোম্পানীরা ঢুকে পড়ে লামা উপজেলায়। ফলে দখলে চলে আসে উপজেলার ৭৫ শতাংশ জমি তামাক চাষের অধীনে ।
সরকারী, বেসরকারী জরিপ এবং স্থানীয়দের মতে, লামা উপজেলায় বর্তমান মৌসুমে ১৩ হাজার হেক্টর জমিতে তামাক চাষ হয়েছে তবে কৃষি অধিদপ্তর এ তথ্য মানতে নারাজ।
বিষয়টি নিয়ে কথা হয় লামা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সানজিদা বিনতে সালামের সাথে। তিনি বলেন, “বর্তমানে ১৭,৫৯৫ হেক্টর আবাদী জমির মধ্যে ৭১০ হেক্টর জমিতে তামাক চাষ হচ্ছে এবং তামাকের চাষ দিন দিন কমেই আসছে। গত বছর ছিল ৭৫০ হেক্টর তামাকের চাষ।”
জনৈক এক তামাক চাষী বলেন, “তামাক চাষে আমাদের দু-এক বছর লাভের মুখ দেখলেও পরের বছরে বিভিন্ন প্রাকৃতিক এবং কৃত্রিম কারনে অনেক আর্থিক ক্ষতির সম্মুখিন হতে হয়। কিন্তু করছি যখন হঠাৎ ছেড়ে তো দিতে পারি না। আর তাছাড়া তামাক কোম্পানীগুলো সহজ শর্তে আমাদের ঋণ বা টাকা দিচ্ছে।”
তামাক চাষ বিষয়ে কথা হয় ইউনাইটেড ঢাকা টোব্যাকো হরিণঝিরি ডিপো ম্যানেজার খগেন্দ্র চন্দ্র দাশের সাথে। তিনি বলেন, “তামাক একটি অর্থকরী ফসল। যদিও পরিবেশগত কিছু ক্ষতি রয়েছে তবে তামাক চাষে মানুষ লাভবান হচ্ছে।”
সচেতন কিছু কৃষক বলেন, “সরকার যদি কোম্পানীর মতো সহজ শর্তে ঋণসহ ফসল কেনার নিশ্চয়তা দেয় তাহলে আমরা তামাক চাষ ছেড়ে দিয়ে অন্যান্য ফসল চাষ করবো।”
এ ব্যাপারে লামা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মহিউদ্দিন মাজেদ চৌধুরী চকরিয়া নিউজকে বলেন, “তামাক শোধনের সময় নির্গত নিকোটিনের কারণে এলাকার লোকজন হাঁপানি, কাশি এবং ক্যান্সারসহ নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে।” তামাক চাষে কৃষকদের নিরুৎসাহিত করতে তিনি অনুরোধ করেন।
পাঠকের মতামত: