ঢাকা,মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪

লামায় আলহাজ্ব মো. ইসমাইল এর জানাজায় মানুষের ঢল

মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, লামা ::
শোকার্ত হাজার হাজার মানুষের অংশগ্রহণের মধ্যদিয়ে লামা উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মোহাম্মদ ইসমাইল এর নামাজে জানাজা সম্পন্ন হয়েছে। শনিবার (১৬ ফেব্রুয়ারী) বাদে জোহর ২টা ২০ মিনিটে লামা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত ১ম নামাজে জানাজায় বান্দরবান ও কক্সবাজার জেলা সহ বৃহত্তর চট্টগ্রামের হাজার হাজার মানুষের ঢল নামে। বিশাল স্কুল মাঠটি জানাজায় অংশগ্রহণকৃত সাধারণ মানুষে পরিপূর্ণ হয়ে যায়। দ্বিতীয় জানাজা বিকাল ৩টায় বমুবিলছড়ি ইউনিয়ন পরিষদ মাঠ প্রাঙ্গনে অনুষ্ঠিত হয়। শেষে বমুবিলছড়ি পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
আলহাজ্ব মোহাম্মদ ইসমাইল ১৯৬২ সালে ২১ শে জানুয়ারী কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলার বমুবিলছড়ি ইউনিয়নের পশ্চিমপাড়া গ্রামে এর সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। মৃত্যুকালীন তার বয়স হয়েছিল ৫৭ বছর ২৪ দিন। তার বাবার নাম মৃত কবির আহাম্মদ, মাতার নাম চেমন আরা।
জানাজা শুরুর আগে লামা বাজার ও আশপাশের স্থান সমূহ সাধারণ মানুষের উপস্থিতিতে জনসমুদ্রে পরিণত হয়। জানাজায় ইমামতি করেন লামা কেন্দ্রীয় মসজিদের খতিব মাওলানা মো. ইব্রাহিম। জানাজার পূর্বে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন আলহাজ্ব মোহাম্মদ ইসমাইল এর ছোট ভাই মো. নাছির উদ্দিন, বান্দরবান জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ইসলাম বেবী, বান্দরবান জেলা পরিষদ সদস্য মোস্তফা জামাল, আওয়ামীলীগ নেতা মঞ্জুরুল কাদের।
ছোট ভাই নাছির উদ্দিন আগত জনতার প্রতি তার পরিবারের পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা জানান ও বড় ভাইয়ের সকল ভুলত্রুটি ক্ষমা প্রার্থনা করেন। তিনি বলেন, লামা সহ বান্দরবানের মাটি ও মানুষের নেতা আলহাজ্ব মোহাম্মদ ইসমাইল শুক্রবার রাতে স্ট্রোক করার পর থেকে মানুষ তার প্রতি যে অকৃত্রিম ভালবাসা দেখিয়েছে তাতে আমাদের পরিবার এলাকাবাসির কাছে কৃতজ্ঞ। জানাজায় হাজার হাজার মানুষের ভিড় প্রমাণ করে তিনি বান্দরবান ও কক্সবাজার বাসীর কত আপন ছিলেন। আমার বড় ভাই আলহাজ্ব মোহাম্মদ ইসমাইল এর জীবদ্দশায় যদি কোন ভুল করে থাকেন অথবা কারো মনে যদি কোন কষ্ট দিয়ে থাকেন তার জন্য বড় ভাইয়ের পক্ষ থেকে ক্ষমা চান।
নামাজে জানাজায় পার্বত্য মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি, বান্দরবানের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আলী হোসেন, সহকারী জেলা প্রশাসক, আলীকদম সেনা জোনের জোন কমান্ডার লেঃ কর্ণেল সাইফ শামীম পিএসসি সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা শরিক হন।
প্রসঙ্গত, শুক্রবার (১৫ ফেব্রুয়ারী) রাত সাড়ে ৮টায় লামা বাজারস্থ জেলা পরিষদ গেস্ট হাউজের ২য় তলায় আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে প্রস্তুতিমূলক মিটিংয়ে আলহাজ্ব মোহাম্মদ ইসমাইল স্ট্রোক করেন। এসময় দ্রুত তাকে লামা হাসপাতালে জরুরী বিভাগে ভর্তি করা হয়। অবস্থার আরো অবনতি হলে দ্রুত উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম নেয়ার পথে কক্সবাজারের চকরিয়ায় জমজম হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। তার মৃত্যু খবর ছড়িয়ে পড়লে বান্দরবান, কক্সবাজার জেলা সহ সমগ্র এলাকায় শোকে ছায়া নেমে আসে।
আলহাজ্ব মোহাম্মদ ইসমাইল ১৯৯২ সালে প্রথমবারের মত লামা সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তারপর ২০০২ সালে লামা পৌরসভার ১ম পরিষদের প্রথম মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হন। তিনি ২০০৮ সালে ৩য় উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে লামা উপজেলা চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হয়েছিলেন। এছাড়া লামা উপজেলায় অসংখ্য স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, মসজিদ, মন্দির, ক্যাং, গির্জা ও প্রতিষ্ঠান তিনি নির্মাণ করেন। সমগ্র লামা উপজেলায় তার উন্নয়নের চিহ্ন রয়েছে। সর্বজন গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিত্ব আলহাজ্ব মোহাম্মদ ইসমাইলকে হারিয়ে লামাবাসি সত্যিকারের একজন অভিভাবক হারিয়েছে।

পাঠকের মতামত: