মো. নুরুল করিম আরমান, লামা :: দীর্ঘদিন ধরে সংস্কারের অভাবে সড়কের শতাধিক স্থানে মিনি গর্ত আর কিছু দূর পরপর ইট উঠে খানাখন্দে ভরপুর হয়ে গেছে বান্দরবান জেলার লামা উপজেলার জনগুরুত্বপূর্ণ ইয়াংছা-ঈদগড় সড়কটি। এতে সড়কে চলাচলকারী যানবাহন ও এলাকাবাসীদের প্রতিনিয়ত চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
উপজেলা সদর থেকে ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়ন সদর, বনপুর বিজিবি ক্যাম্প ও পাশের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঈদগড় যাতায়াতের ক্ষেত্রে এ সড়কের বেশ গুরুত্ব রয়েছে। রাত দিন পাথর ও গাছের গাড়ি চলাচলসহ সাম্প্রতিক সময়ে টানা বর্ষণের ফলে সড়কের উপর পাহাড়ের মাটি ধসে পড়ে ও ইয়াংছাখালের ভাঙ্গনে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়ে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে সড়কটি।
সরকার যেখানে গ্রামে শহরের সুযোগ-সুবিধা প্রদান করতে বধ্য পরিকর সেখানে গ্রামীন এই সড়কের বেহাল দশার দীর্ঘ সময় পার হলেও তা সংস্কার করার কোনও খবর নেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। এতে জনমনে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। সড়কটি কার্পেটিং করা এখন এলাকাবাসীর প্রাণের দাবি।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, বিশেষ করে ইয়াংছা-ঈদগড় সড়কের গয়ালমারা পর্যন্ত শতাধিক স্থানে ইট উঠে ছোট বড় গর্ত আর খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। যেন পা ফেলানোর তিল পরিমান ঠাঁই নেই। এছাড়া সড়কের বাশখাইল্লাঝিরির মুখে, ছোট পাড়ার নিচে ও শফু সর্দারের বাড়ীর নিচে একটি বিদ্যুতের খুঁটি সহ ইয়াংছা খালে ধসে গেছে। যার কারণে সড়কটি দিয়ে যানবাহনের পাশাপাশি পায়ে হেঁটে চলাচল করাও বেশ কষ্ট সাধ্য হয়ে পড়েছে।
সড়কে সৃষ্ট গর্তে জমা থাকা পানিতে পায়েহেটে চলাচলকারীদের পরিধেয় কাপড় চোপড় নষ্ট হচ্ছে প্রতিনিয়ত। ভাঙা ও খানাখন্দকে ভরা সড়ক দিয়ে প্রতিনিয়ত ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে যানবাহন। সড়কের বেহাল দশার কারণে গাড়ির ঝাঁকুনি দিয়ে সড়ক দিয়ে যাতায়াতকারী অসুস্থ রোগী প্রসূতি মা এবং বয়োবৃদ্ধদের কষ্টের সীমা থাকছে না।
এদিকে শুকনো মৌসুমে কোনোমতে চলাচল করা গেলেও বর্ষা মৌসুমে চলতে গেলেই ঘটে দুর্ঘটনা। এই সড়ক দিয়ে প্রতিদিন ক্ষুদ নৃ-গোষ্টিসহ প্রায় ১০ হাজারেরও বেশি মানুষরা চলাচল করে। যাতায়াত করতে পারে না ভ্যানগাড়ী, সাইকেল, রিক্সাসহ ছোটখাটো যানবাহন। সড়কটি আগে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের অধিনে ছিল, বর্তমানে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরে স্থানান্তর করা হয়েছে।
কথা হল এ সড়ক দিয়ে প্রতিনিয়ত যাতায়াতকারী আবু সুফিয়ানের সাথে। তিনি জানান, বেশ কয়েক বছর ধরে সংস্কারের অভাবে সড়কটিতে সৃষ্ট গর্ত আর কাদায় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্টি ছোটপাড়া, বড় পাড়া, বনপুর বাজার, তীরেরডিবা, রাজা পাড়া, বাঁশ খাইল্লাঝিরি পাড়া, গয়ালমারা, ইউনিয়ন সদরে চলাচল করতে প্রতিনিয়ত নানা দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
এমন কি বিজিবিদের চলাচলেও বিঘ্ন ঘটে এ সড়কে। অন্যদিকে সড়কটি দিয়ে নিয়মিত জীপ গাড়ি চালক শাহ আলম ও মো. জালাল জানান, সড়কে সৃষ্ট গর্তের কারণে প্রায় সময় তাদের গাড়ির বিভিন্ন যন্ত্রাংশ নষ্ট হচ্ছে। ‘জীবিকার তাগিদে গাড়ি না চালিয়ে পারি না। তাই বাধ্য হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়েই এ সড়কে গাড়ি চালাই।’ তাই দ্রুত সড়কটি সংস্কারের দাবি জানান তিনি।
ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্টি ছোট পাড়ার কারবারী অংসিপ্রু মার্মা, বড়পাড়ার কৃষক নুরুল আবচার, নুরুল আলম, মো. ছোটনমো. আলমগীরসহ অনেকেই এক সূরে বলেন, আমরা চরম অবহেলিত এলাকায় বসবাস করি। যার কারণে দীর্ঘ সময় পার হলেও গ্রামীণ এই অবহেলিত মরণ ফাঁদ সড়কে এখনও পর্যন্ত আধুনিকতার কোন ছোঁয়াই লাগেনি।
তারা আরো বলেন, সড়কের কোথাও কোথাও পুরো অংশ ভেঙে গেছে, কোন কোন অংশ আবার ইয়াংছা খালে ধসে পড়েছে, আবার কোথাও ইট উঠে গিয়ে মিনি পুকুরে পরিণত হয়েছে। এতে প্রতিনিয়তই স্কুল কলেজ শিক্ষার্থী ও কৃষকসহ সাধারণ মানুষদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে আর ঘটেই চলেছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য আপ্রুচিং মার্মা চকরিয়া নিউজকে জানায়, ইয়াংছা-ঈদগড় সড়কটির বনপুর পর্যন্ত শুষ্ক মৌসুমে কোনমতে পায়ে হেঁটে চলাচল করা গেলেও বর্ষ মৌসুমে গাড়িতো দূরের কথা পায়ে হাঁটা কষ্ট সাধ্য হয়ে পড়ে। দ্রুত সড়কটি সংস্কার করা না হলে যোগাযোগ স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যেতে পারে। স্থানীয় প্রশাসনকে বিষয়টি অনেকবার জানানোর পরও সড়কটি এখনও বেহাল দশায় পড়ে আছে।
সড়কের বেহাল দশা নিয়ে কথা হলে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. মোস্তফা জামাল চকরিয়া নিউজকে জানান, সড়কটি কার্পেটিং কাজ করার জন্য উপজেলা এলজিইডির মাধ্যমে প্রকল্প পাঠানো হয়েছে। কোভিড-১৯ এর কারণে প্রকল্পটি এখনো অনুমোদন হয়নি। অনুমোদন হলে দ্রুত সময়ের মধ্যে সড়কের কাজ শুরু করবে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর।
এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের লামা উপজেলা প্রকৌশলী মাহফুজুল হকের সাথে আলাপ কালে চকরিয়া নিউজকে বলেন, ইয়াংছা-ঈদগড় সড়কটির কার্পেটিং কাজের প্রাক্কল তৈরি করে প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। কোভিড-১৯ এর কারণে প্রকল্পটি এখনো অনুমোদন হয়নি। আশা করি দ্রুত সময়ের মধ্যে অনুমোদন সাপেক্ষে টেন্ডার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রকল্পের কাজ শুরু করতে পারবো।
পাঠকের মতামত: