ঢাকা,বুধবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৪

যুদ্ধ বাধলে আশপাশের দেশও ক্ষতিগ্রস্ত হবে

shamser-mobin-chyভারত-পাকিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতি গোটা দক্ষিণ এশিয়ার জন্য উদ্বেগজনক বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শমসের মবিন চৌধুরী। তিনি বলেন, পাশাপাশি দুই দেশ যুদ্ধ বাধলে আশপাশের দেশও কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। দক্ষিণ এশিয়ার শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্যই ভারত-পাকিস্তানকে সংযত হওয়া উচিত। আর বাংলাদেশ কখনই যুদ্ধ চায় না, শান্তি চায়। বাংলাদেশের অবস্থান সব সময় যুদ্ধবিরোধী।

ভারত পাকিস্তানের উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় এসব কথা বলেন বিএনপির সাবেক এই ভাইস চেয়ারম্যান। শমসের মবিন চৌধুরী বলেন, ‘ভারত-পাকিস্তানের এখনকার অবস্থা কারগিল পরিস্থিতির মতোও নয়। তাই আমার কাছে মনে হয়, পুরোপুরিভাবে দুই দেশের সামরিক যুদ্ধ লাগার আশঙ্কা নেই।’ তিনি বলেন, ভারত-পাকিস্তানের চলমান বৈরী আচরণের কারণে সার্ক সম্মেলনও স্থগিত হয়ে গেছে। এটা কোনোভাবেই কাম্য ছিল না। বিশেষ করে সার্ক সম্মেলনের আগে দুই দেশের এমন পরিস্থিতিতে আসা উচিত হয়নি। এতে সার্কের সফলতাও প্রশ্নের সম্মুখীন হবে। তবে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ থেকে সরে এলে নির্ধারিত সময়ে না হলেও পরবর্তী সময়ে যত দ্রুত সম্ভব সার্ক সম্মেলন হতে পারে। সার্কের উদ্যোক্তাদের এ নিয়ে কাজ করা উচিত। সাবেক এই কূটনীতিক বলেন, ‘আজকাল যুদ্ধ দুই দেশের মধ্যেই শুধু সীমাবদ্ধ থাকে না, এর প্রভাব আশপাশের রাষ্ট্রের ওপরও পড়ে। ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ বাধলে আমরাও ক্ষতিগ্রস্ত হব। দক্ষিণ এশিয়ায় অশান্তি বিরাজ করবে। সামরিক যুদ্ধ হলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়। আশা করি তারা সে পর্যায়ে যাবে না। দুই দেশেরই রাজনৈতিক পক্ষ বলছে, আমরা যুদ্ধ চাই না, শান্তিপূর্ণ সমাধান চাই।’

তিনি বলেন, ‘ভারত সম্প্রতি পাকিস্তান-বেষ্টিত কাশ্মীর সীমান্তে যে অপারেশন চালিয়েছে, এর পাল্টা জবাব দিয়েছে পাকিস্তান। আমার মনে হয়, এটা ওই জায়গার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে। পুরোদমে যুদ্ধ বলতে আমরা যা মনে করি, সে ধরনের সামরিক যুদ্ধ হওয়ার আশঙ্কা খুবই কম। কারণ যুদ্ধ হলে যে দেশই ভালো করুক না কেন, ক্ষতিগ্রস্ত কমবেশি সবাই হয়। এখানে দুই দেশই পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্র। দুই দেশেরেই মিসাইল নিক্ষেপ করার ক্ষমতা রয়েছে। আগে এর চেয়েও খারাপ পরিস্থিতি হয়েছিল কারগিলে। সেখানে একটা এলাকা নিয়ে দুই সামরিক বাহিনী যুদ্ধ করে। এর পরও পুরোপুরি যুদ্ধ হয়নি। আমার মনে হয় না, দুই দেশই এখানে তাদের ইতি টানবে।’

আশাহত হয়ে সাবেক এই পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘সার্কের আগে এ ধরনের অবস্থান কাঙ্ক্ষিত নয়। আমি আশা করি ভারত-পাকিস্তানের শুভ বুদ্ধির উদয় হবে। তারা সার্কে অংশ নেওয়ার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি করবে। এর চেয়ে আর অবনতি কেউ চায় না। সার্কে শুধু ভারত নয়, বাংলাদেশ, ভুটান, আফগানিস্তানও না যাওয়ার কথা বলেছে। সেখানে বাংলাদেশ তার অবস্থান জানিয়েছে। সে ব্যাপারে পাকিস্তান কী করবে, তা স্পষ্ট নয়। ভুটান ও আফগানিস্তানও পৃথকভাবে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। সে ব্যাপারেও পাকিস্তান তাদের অবস্থান জানায়নি। তবে আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে, সার্কের বিষয়টি কয়েক দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি হবে না। কিছুদিন সময় লাগবে।’ তিনি বলেন, যুদ্ধের পক্ষে বাংলাদেশ কোনো দিনই অবস্থান নেবে না। বাংলাদেশের অবস্থান হবে যুদ্ধবিরোধী। সেখানে কোনো ধরনের আর যেন অবনতি না হয়, সে অবস্থানেই বাংলাদেশ। তবে এ মুহূর্তে বাংলাদেশের উচিত দক্ষিণ এশিয়ার শান্তির জন্য ভারত-পাকিস্তানকে তাদের অবস্থান থেকে সরে আসার আহ্বান জানানো।

ভারত-পাকিস্তানের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ আর দুই দেশের গণমাধ্যমের অবস্থান সম্পর্কে তিনি বলেন, সামরিক যুদ্ধে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করা হয়। এটা হয়েই থাকে। যুদ্ধের সময় মিডিয়ার বড় ধরনের প্রপাগান্ডা হয়। ভারত-পাকিস্তানের এ যুদ্ধেও হয়েছে। সামরিক হামলা হলে এ ধরনের প্রপাগান্ডা সব সময়ই হয়। এটা যুদ্ধেরই অংশ।
উৎসঃ মানব জমিন

 

পাঠকের মতামত: