ঢাকা,মঙ্গলবার, ১২ নভেম্বর ২০২৪

পাহাড়-নদীর অপরূপ মিতালীতে নতুন দার্জিলিং

মানিকপুরের নিভৃতে নির্সগ পার্ক পর্যটন শিল্পে সম্ভাবনার হাতছানি

এম.জিয়াবুল হক, চকরিয়া :: পাহাড়-নদীর অপরূপ মিতালীতে মিলেমিশে একাকার কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার মানিকপুর নিভৃত নির্সগ র্পাক পর্যটনশিল্পে সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে। এখানে প্রাকৃতিক পরিবেশে গড়ে উঠা অপরূপ সৌর্ন্দয্য প্রতিমুর্হুতেই হাতছানি দিচ্ছে ভ্রমনপিপাসু পর্যটক-দর্শনাথীদের।

মাতামুহুরী নদীটি বান্দরবানের আলীকদমের পাহাড় থকে উৎপত্তি হয়ে লামা হয়ে কক্সবাজারের চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলার ওপর দিয়ে ১৪৮ কিলোমিটার পানিপথ অতিক্রম করে আঁকাবাঁকা পথে মিলিত হয়েছে বঙ্গোপসাগরে।

১৪৮ কিলোমিটার পথের মধ্যে নদীর তীরে বেশিরভাগ পাহাড়ি জনপদের অবস্থান আলীকদম লামা উপজেলার পাশাপাশি চকরিয়া উপজেলার দুর্গম সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়নে পড়েছে।

বিশেষ করে চকরিয়ার মানিকপুর এলাকার অন্তত ১০ কিলোমিটার নদীর বুকচিয়ে দুই তীরে উঁচু–নিচু অসংখ্য পাহাড়ের মিতালী যেন মাতামুহুরী নদীর স্বচ্ছ পানিতে অপরূপ সৌর্ন্দয্যকে আরো বেশি আকর্ষণীয় করে তুলেছে। নদীর স্বচ্ছ পানিতে ডিঙি নৌকায় চলতে চলতে আপনার মনে হবে স্বপ্নের কোন এক জগতে প্রবেশ করছেন। নদীর কিনারে থাই দাঁিড়য়ে থাকা শ্বেতপাথরের অর্পুব প্রতিচ্ছবি কিংবা পাহাড় নদীর মিতালী স্বচক্ষে দেখতে দেখতে হারিয়ে যাবেন অন্যজগতে। কথাগুলো বলছি, সর্ম্পুন প্রাকৃতিক পরিবেশে গড়ে উঠা কক্সবাজারের নতুন পর্যটনস্পট মানিকপুর নিভৃতে নির্সগ পার্কের বাস্তবতা। প্রকৃতি সবটুকু ঢেলে দিয়েছেন এখানে।

মানিকপুর নিভৃতে নির্সগ পার্কটির অবস্থান চট্টগ্রাম শহর থেকে একশ কিলোমিটার দক্ষিনে ও কক্সবাজার শহর থেকে প্রায় ৫৫ কিলোমিটার উত্তরে চকরিয়া উপজেলার সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়নে।

চকরিয়া উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় পুরো পার্কটির তত্ত্বাবধান করছে স্থানীয় সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়ন পরিষদ। ইউপি চৌকিদার সাইফুল ইসলামের নেতৃত্বে স্বেচ্ছাসেবী পার্কটি দেখাশোনা করছেন। পার্কে প্রবেশে টাকা দিতে হয় না।

পরিষদের চৌকিদার সাইফুল ইসলাম বললেন, প্রতিদিন এই ঘাট দিয়ে হাজারো মানুষ লামাবাজার আসা–-যাওয়া করছেন। এর মধ্যে অন্তত ৩০০ জন পর্যটক। সকাল সাতটা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত নদীভ্রমণ সবার জন্য উন্মুক্ত।

সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও পার্কের উদ্যোক্তা আজিমুল হক আজিম চকরিয়া নিউজকে বলেন, নিভৃতে নির্সগ পার্কটি সুচনালগ্নে স্থানীয় পর্যটক-দর্শনার্থী আসলেও এখন কিন্তু সারাদেশ থেকে এখানে পর্যটক আসছেন।

ভ্রমণে আসা বেশিরভাগ মানুষ ডিঙি নৌকা নিয়ে পাহাড় নদীর অপরূপ মিতালী ঘুরে ঘুরে দেখছেন। পর্যটকেরা বেশ আনন্দ পাচ্ছেন। তবে বিনোদনের আরও সুযোগ-সুবিধার পাশাপাশি যোগাযোগব্যবস্থার উন্নতি দরকার। নিরাপত্তা নিশ্চিতে টুরিষ্ট পুলিশ ইউনিট ও সাবক্ষনিক বিদ্যুৎ প্রয়োজন।

ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, ইতোমধ্যে পর্যটন মন্ত্রানালয়ের সচিব মহোদয় নিভৃতে নির্সগ পার্ক দেখতে এসেছেন। তিনি আমাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন। আমরা নির্সগ পার্ককে একটি আধুনিকমানের পর্যটনজোন হিসেবে গড়ে তুলতে প্রায় পাঁচ কোটি টাকার অবকাঠামোগত উন্নয়নে প্রকল্প প্রস্তাবনা দিয়েছি। এগুলো বাস্তবায়ন হলেও নিভৃতে নির্সগ পার্ক পূর্ণাঙ্গ পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে পর্যটনশিল্প বিকাশে ভূমিকা রাখবে। এতে যেমন পার্কে দর্শনাথী আগমন বাড়বে, তেমনি পার্কে কর্মসংস্থানের মাধ্যমে স্থানীয় জনগনের মাঝে আর্থিক উন্নতি ঘটবে।

চকরিয়া উপজেলা প্রশাসন পরিচালিক দুর্গম জনপদের নতুন পর্যটন স্পটের নামকরণ ‘নিভৃতে নিসর্গ পার্ক’ দিয়েছেন চকরিয়া উপজেলার সদ্য বিদায়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দ সামসুল তাবরীজ। ২০২০ সালের ডিসেম্বর কক্সবাজারের সাবেক জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন এটির আনুষ্টানিক উদ্বোধন করেন।

নিভৃতে নির্সগ পার্কের প্রধান উদ্যোক্তা চকরিয়া থেকে সদ্য বদলী হওয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বর্তমানে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের রাজস্ব কর্মকর্তা সৈয়দ সামসুল তাবরীজ চকরিয়া নিউজকে বলেন, পার্কটির সর্বসাধারণের জন্য উর্ন্মুথ করে উদ্বোধনের পর মূলত এরপর থেকে পর্যটকেরা ‘নিভৃত নিসর্গ’ দেখতে ছুটে আসছেন। ক্রমে পর্যটকের আগমন বাড়ছে।

প্রতিদিন নৌকা নিয়ে নদী ভ্রমণে নেমেছেন দুই থেকে তিন শতাধিক পর্যটক। প্রায় ৬৬ কোটি টাকায় নির্মাণাধীন (ইয়াংছাঘাট পর্যন্ত) ১৯ কিলোমিটারের ‘জিন্দাবাজার-ইয়াংছাঘাট সড়কটি’ পাকা হয়ে গেলে যোগাযোগ সহজ হবে। নিভৃত নিসর্গ পার্কে বিদ্যুৎ–সংযোগ কাজও চলছে দ্রুতগতিতে।

পার্কের তথ্য কর্মকর্তা ও চকরিয়া উপজেলা ডিজিটাল সেন্টারের পরিচালক এরশাদুল হক বলেন, সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্র ও শনিবার দুইদিন স্থানীয়দের পাশাপাশি সারাদেশ থেকে বেশি পর্যটক আগমন ঘটে। তবে অন্য দিন তুলনামুলক একটু কম।

তিনি বলেন, পর্যটকদের নদী ভ্রমণের জন্য সেখানে আছে ৪০টির অধিক নৌক বোট আছে। প্রবেশ ফি না থাকলেও নৌকা ভ্রমন করতে ভাড়া দিতে হয়। এখন থেকে লামা যেতে নৌকাভাড়া (রিজার্ভ) লাগে ১ হাজার ২০০ টাকা। প্রতিটি নৌকায় ওঠেন ১৫-২০ জন।

যেভাবে যেতে হয়

কক্সবাজার অথবা ঢাকা থেকে সড়কপথে (চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক) প্রথমে চকরিয়া পৌরসভা বাসস্টেশনে নামতে হবে। সেখান থেকে জিপ অথবা সিএনজি অটোতে উঠে পুর্বে ১২ কিলোমিটার গেলে মানিকপুর ফরেষ্ট অফিস। সেখান থেকে যেতে হবে নতুন পর্যটন স্পট ‘নিভৃতে নিসর্গ’।

চকরিয়া থেকে নিভৃত নিসর্গ পার্কে যেতে ভাড়া পড়বে ৫০ টাকা। প্রাইভেট কারেও যাতায়াত করা যায়। কক্সবাজার শহর থেকে সকালে গিয়ে বিকেলে ফিরে আসা যায়। ইচ্ছা করলে ফিরতি পথে চকরিয়া বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক ঘুরে বেড়ানো সম্ভব।

পাঠকের মতামত: