পেকুয়া সদর ইউনিয়নের মইয়্যাদিয়াস্থ ১৯৯৯ সালে প্রায় তিনশতাধিক ভূমিহীন, অসহায়দের পূর্ণবাসনের জন্য প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার তৎকালীন সরকার কতৃক স্থাপিত হয় ‘মইয়্যাদিয়া আশ্রয়ন প্রকল্প’। সেই আশ্রয়ন প্রকল্পে পূর্ণবাসিত হওয়া পরিবারগুলোর মধ্যে ২০পরিবার গত ১৫দিন যাবৎ আশ্রয়হীন হয়ে খোলা আকাশের নিচে। মাতারবাড়ি-পেকুয়া-আনোয়ারা গ্যাস পাইপ লাইন কেড়ে নিয়েছে তাদের মাথা গোঁজার ঠাইটুকু। গ্যাস লাইন স্থাপনকারী কোম্পানী দ্যা পাইপ লাইন ইঞ্জিনিয়ার্স এন্ড এসোসিয়েট লিমিটেড (পিইএল) ভোক্তভোগী ২০পরিবারকে কোন প্রকার আগাম পূর্ণবাসন বা নোটিশ না করে গুড়িয়ে দিল তাদের বসতি। সেই সাথে উক্ত আশ্রয়ন কেন্দ্রে বসবাসরত শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার একমাত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি (আনন্দ স্কুল) গুড়িয়ে দেয়া হয়। যার ফলে, শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে স্কুলপড়–ুয়া শতাধিক ছাত্র-ছাত্রী। এব্যাপারে ভোক্তভোগী পরিবার গুলো গত মঙ্গলবার(৮মার্চ) পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে লিখিত অভিযোগ করেছেন। যার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মারুফুর রশীদ খান। সরেজমিনে গত বুধবার ৯ মার্চ দুপুরে মইয়্যাদিয়া আশ্রয়ন প্রকল্পে গেলে, দেখা যায় ভুক্তভূগী ২০পরিবারের মানবেতর জীবন যাপনের চিত্র। সমাজের নি¤œবিত্ত শ্রেণীর খেটে খাওয়া মানুষের বসতি ভেঙ্গে দেওয়ার তারা একপ্রকার গৃহহীন হয়ে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছে। ফাল্গুনের তপ্ত রোদ এবং রাতের হিম কুয়াশায় ভিজে অত্যন্ত মানবেতর ভাবে কাটছে তাদের প্রতিটি দিন। মালেকা বেগম, নুরুন্নাহার, আবছার মিয়া, শাহেনা বেগম, রুজিনা বেগমসহ বেশ কয়েকজন ভুক্তভূগী গৃহহীন হয়ে পড়ায় তাদের দূর্ভোগের কথা প্রতিবেদককে বলতে গিয়ে ভেঙ্গে পড়েন অঝোর কান্নায়। বর্ণনা করেন, ছোট-ছোট সন্তানসহ পুরো পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবন যাপনের কথা। অনাহারে-অর্ধাহারে জীবন কাটে যাদের, তারা কিভাবে নতুন করে ঘর তুলবেন বলে প্রতিবেদকের কাছে প্রশ্নও ছুড়ে দেন। তারা আক্ষেপের সাথে জানান, পিইএল কোম্পানী ক্ষতিপূরণের আশ্বাস দিয়ে শুধু কালক্ষেপন করে চলেছে। তারা ন্যায্য ক্ষতিপূরণের জন্য জেলা প্রশাসকের সুদৃষ্টি কামনা করেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে পিইএল কোম্পানীর উক্ত প্রজেক্টের দায়িত্বরত কর্মকর্তা মোঃ রিপন বলেন, গ্যাস পাইপ লাইন স্থাপনের জন্য উক্ত জমি জেলা প্রশাসকের নির্দেশনা অনুযায়ী অধিগ্রহন করা হয়েছে। আর এতে ক্ষতিগ্রস্তদের পরবর্তী প্রক্রিয়ায় পূর্ণবাসন করা হবে। ইন্ড্রাষ্ট্রিয়াল রিলেশন অফিসার মাহমুদুুল হাসানের কাছে নোটিশ দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, দুুই-তিন মাস আগে নোটিশ প্রদান করা হয়েছে। ক্ষতিপূরণের বিষয়ে বলেন, ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে। কবে নাগাদ দেওয়া হবে জানতে চাইলে তিনি তা নিশ্চিত করে বলতে পারেন নি। এবিষয়ে উক্ত প্রজেক্টের প্রধান কর্মকর্তা (সিনিয়র কন্সট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ার) মাহমুদুল আলম’এর সাথে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি সাংবাদিক পরিচয় পাওয়া মাত্রই তিনি তার ব্যবহৃত মুঠোফোন সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মারুফুর রশীদ খান বলেন, গ্যাস পাইপ লাইন স্থাপন একটি সরকারী উদ্যোগের উন্নয়নমূলক প্রকল্পের কাজ। উপজেলার উজানটিয়া ইউনিয়ন থেকে পেকুয়া সদরের ওই স্পট পর্যন্ত পাইপ লাইন স্থাপনে যাবতীয় সমস্যা সামাধানে স্থানীয় প্রশাসন সক্রিয় রয়েছে। আশ্রয়ন কেন্দ্রের বিষয়টিও যথাযথ সমাধান করা হবে। ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলোকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ প্রদান এবং পূণর্বাসন প্রক্রিয়া চলছে।
################
পেকুয়ায় ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জামায়াতের গোপন বৈঠক : এলাকায় উত্তেজনা
স্টাফ রিপোর্টার. পেকুয়া ::
আসন্ন ৩১ মার্চ ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পেকুয়া উপজেলা ও ইউনিয়ন জামায়াতের নেতৃবৃন্দরা ব্যাপক তৎপরতা শুরু করেছে। নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ও নিজস্ব ব্যানারে কর্মকান্ড চালাতে না পারায় ভিন্ন কৌশল হিসাবে উপজেলার সাত ইউনিয়নে গোপন বৈঠক করে করণীয় নির্ধারণ করছেন। ইতিমধ্যে তারা সাত ইউপির মধ্যে বারবাকিয়া, টইটং, মগনামা ও রাজাখালীতে চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসাবে উপজেলা জামায়াতের শীর্ষ ৪ জামায়াত নেতাকে মনোনয়ন দিয়েছে। এছাড়াও মেম্বার প্রার্থী হিসাবে বেশ কয়েকজনকে দলীয় মনোনয়ন দিয়েছে তারা। এরই ধারাবাহিকতায় ধারাবাহিক বৈঠকে অংশ হিসাবে গতকাল ১১ মার্চ শুক্রবার ২টায় বারবাকিয়া ইউনিয়নে পূর্ব জালিয়াকাটায় অবস্থিত বাইতুল মামুর জামে মসজিদে গোপন বৈঠক অনুষ্টিত হয়। এ নিয়ে এলাকায় চরম উত্তেজনা দেখা দিয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বারবাকিয়া ইউনিয়ন জামায়াতে সেক্রেটারী মৃত বজল আহমদের ছেলে মনজুর আলম গোপন বৈঠকে নেতৃত্ব দেয়। এ সময় উপজেলা জামায়াত-শিবিরের সিনিয়র নেতাসহ ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড নেতা, সাথী ও কর্মী সমর্থক মিলে ৫০ জনের মত উপস্থিত ছিলেন। সরোজমিন বৈঠকের স্থানে গিয়ে জামায়াত-শিবিরের সিনিয়ন কয়েকনেতাসহ মনজুর আলমকে কথা বলতে দেখা গেছে। বৈঠকে আসন্ন বারবাকিয়া ইউপি নির্বাচনে তাদের মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী মৌলানা বদিউল আলমকে জিতিয়ে আনতে সব ধরণের কৌশল নিবেন বলেও জানা গেছে। এমনকি বিগত সময়ে যুদ্ধাপরাধীদের আটক ও রায় প্রদানের ক্ষেত্রে জামায়াতের নাশকতা হয়েছিল এ এলাকায় সবচেয়ে বেশি। সে সময় তাদের ভয়ে সাধারণ জনগন থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তির মাঝে দেখা দিয়েছিল চরম আতংক আর উদ্বেগ। বর্তমান বারবাকিয়া ইউনিয়ন জামায়াতের সেক্রেটারী মনজুর আলম ওই ভয়টাকে সামনে এনে নতুন কৌশলে মাঠে নেমেছে। তাদের সোর্সদের মাধ্যমে বিগত সময়ের নাশকতাসহ অপরাধ কর্মকান্ড সাধারণ জনগণকে বলে বেড়াচ্ছে। এমনকি ভোটের দিন কেন্দ্রে আতংক ও নাশকতার মতো কর্মকান্ডও চালাতে পারে বলে স্থানীয় ভোটারেরা আশংকা করছেন।
বারবাকিয়ার স্থানীয় অনেক ভোটার নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, বারবাকিয়ায় জামায়াত-শিবির এক আতংকের নাম। তাদের অতীত কর্মকান্ড আমাদেরকে ভয় ধরিয়ে দিচ্ছে। প্রশাসনের কাছে আমাদের জোরদাবী বারবাকিয়ার জামায়াত শিবিরের চিহ্নিত অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা হউক। না হলে ভোটের দিন অনেক ভোটার ভোট কেন্দ্রে উপস্থিত থাকবেনা।
উপজেলা জামায়াতের আমির আবুল কালাম আজাদের কাছে গোপন বৈঠক কেন করা হচ্ছে জানতে চাইলে গোপন বৈঠকের কথা অস্বীকার করে জানান, বারবাকিয়ায় জামায়াতের বৈঠক হলে আমি জানব কি করে। আপনারা বারবাকিয়া জামায়াতের নেতৃবৃন্দের সাথে যোগাযোগ করুন বলে মোবাইল বিচ্ছিন্ন করে দেন।
পেকুয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মিয়া মোস্তাফিজ ভুইয়া জানান, জামায়াত-শিবির মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতাকারী একটি দল। যারা মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযুদ্ধাদের বিশ্বাস করেনা তাদের কোন ছাড় আমার কাছে নাই। আমি নিজেই জামায়াতের গোপন বৈঠকের বিষয়টি তদন্ত করবো।
পাঠকের মতামত: