ঢাকা,মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪

বিলুপ্তির পথে গ্রামীণ ঐতিহ্যের ছনের ঘর

নিজস্ব প্রতিবেদক ::image_179136_0

গ্রাম বাংলার চিরচেনা ছনের ছাউনির ঘরের প্রচলন দিনে দিনে কমে আসছে। হারিয়ে যেতে বসেছে আবহমান কালের গ্রামীণ ঐতিহ্যের এই চিহৃটি।

আধুনিকতার উৎকর্ষতায় বর্তমানে ছনের তৈরি ঘর বিলুপ্তির পথে বললেই চলে। খুব বেশিকাল আগে যেখানে প্রতিটি গ্রামের দু’চারটি ছনের তৈরি ঘর চোখে পড়ত বর্তমানে কয়েকটি ইউনিয়ন মিলেও এই ধরনের ঘর চোখে পড়েনা।

এদিকে টিনের অত্যধিক ব্যবহারের ফলে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। কারণ, দেশে উৎপাদিক অধিকাংশ টিন পরিবেশ বান্ধব নয়। তবে উপজেলা বিভিন্ন উপজাতি পাড়ায় এখনো কয়েকটি ছনের ঘর চোখে পড়ে।

ইতিহাসবিদ ও স্থানীয় বৃদ্ধদের সাথে কথা বলে জানা যায়, আজ থেকে বিশ-পঁচিশ বছর আগেও গ্রামের প্রায় প্রতিটি বাড়িতে ছনের ছাউনির ঘর ছিল। মিরসরাইয়ের পাহাড়ের পাওয়া যেত বিপুল পরিমাণ ছন। যা ব্যবহার করা হতো ঘরের ছাউনি ও পানের বরজের কাজে। নিম্নবিত্তের মানুষ এই ছন দিয়ে ঘরের ছাউনি দিতো।

এ ছাড়া কাঠুরীয়ারা ছন বিক্রি করে সংসার চালাতো। স্থানীয় ভাবে গরীরের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘর বলে পরিচিত ছিল এই ছনের ছাউনির ঘর। উচ্চবিত্তরাও শখের বসে পাকা ঘরের চিলি কোটায় ছন ব্যবহার করতো।

উপজেলার ৪ নম্বর ধুম ইউনিয়নের কালামিয়া হাজী বাড়ির বাসিন্দা শিক্ষক আশরাফ হোসেন বলেন, বছর ৫ আগেও আমাদের বাড়িতে বেশ কয়েকটি ছনের ঘর ছিল। তিনি তার বাবার রেখে যাওয়া ছনের ছাউনির ঘরে থাকতেন। কিন্তু কয়েক বছর আগে তিনি ছনের ছাউনি ফেলে টিনের ছাউনি দেন। শীত ও গরম উভয় মৌসুমে আরামদায়ক ছনের ছাউনির ঘর।

জানা গেছে, ছনের ছাউনির ঘর তৈরির জন্য গ্রামে কিছু কারিগর ছিল। তাদের মজুরি ছিল ৫শ থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত। বিশেষ কায়দায় ছনকে সাজিয়ে কয়েকটি ধাপের মাধ্যমে ছাউনি দেয়া হতো। ছাউনির উপরে বাঁশ ও বেত দিয়ে শক্ত করে বেঁধে দিয়ে পানি ছিটানো হতো। যাতে করে সহজে ছনগুলো বাঁশের উপর বসে যায়।

সাধারণত বন্যা, ভূমিকম্প, ঝড় কিংবা প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এসব ঘর শতাধিক বছর পর্যন্ত টিকে থাকে। তবে পূর্ব পুরুষের স্মৃতি ধরে রাখতে অনেকেই দু-একটা মাটির ঘর টিকিয়ে রেখেছেন।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল ভারত থেকে সৃষ্ট উজানের পানির ভয়াবহ বন্যা সারা দেশের সাথে মিরসরাইয়েও ক্ষতি সাধিত করে। এ সময় এখানকার ছনের তৈনি ঘরগুলোর ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়। এরপর থেকে মানুষ মাটি ও ছনের ঘর তৈরির আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। শুরু হয় পাকা দেয়াল, টিনের বেড়া ও চাউনি দিয়ে ঘর তৈরির রেওয়াজ। এ ছাড়া বছর বছর ছন পরিবর্তন করতে হয় বিধায় একে অনেকে ঝামেলা মনে করে।

সেই থেকে ছনের ছাউনি ঘরের সংখ্যা কমতে শুরু করে। বর্তমানে এই ঘর খুব একটা চোখে পড়েনা। হারিয়ে যেতে বসেছে বাঙালীর ঐতিহ্যের এই চিহৃটি। হয়ত সেদিনটি খুব বেশি দূরে নয়; যেদিন ছনের ছাউনির ঘরের কথা মানুষের মন থেকে চিরতরে হারিয়ে যাবে। আর আগামী প্রজন্ম রুপকথার গল্পেই এই ঘরকে স্থান দিতে স্বাচ্ছন্দবোধ করবে।

পাঠকের মতামত: