ঢাকা,মঙ্গলবার, ১২ নভেম্বর ২০২৪

আতঙ্কে মামলার বাদি ও ভিকটিমের দিনমুজুর পরিবার!

পেকুয়ায় আলোচিত রেখামনি ধর্ষণ-হত্যা মামলার অভিযুক্ত আসামিরা অধরা

নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া ::

কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার রাজাখালী ইউনিয়নে মাদরাসা পড়ুয়া অষ্ঠম শ্রেণীর ছাত্রী তাবাসসুম জান্নাত রেখামনিকে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় মামলা হলেও গেল ছয়মাসে এজাহারনামীয় তিন আসামি গ্রেফতার হয়নি। উল্টো অভিযুক্ত আসামিরা এলাকায় বহাল তবিয়তে থেকে দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছে। এ অবস্থার কারণে হত্যাকাণ্ডের শিকার রেখামনির পরিবার ও মামলার বাদি দিনমুজুর বাবা চরম উদ্বেগ-আতঙ্কে ভুগছেন বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

জানা গেছে, ২০২১ সালের ২৬ জুলাই উপজেলার রাজাখালী ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড হাজীর পাড়ার আয়ুব আলীর অষ্টম শ্রেণীতে পড়ুয়া মেয়ে তাবাসসুম জান্নাত রেখামনি (১৪) কে রাতে রাতে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে বখাটেরা পরিত্যক্ত একটি বাসায় আটকে রেখে ধর্ষণ করে। এরপর ঘটনাটি যাতে কাউকে জানাতে না পারে সেইজন্য বখাটেরা রেখামনিকে ধর্ষষের পর বিষ খাইয়ে হত্যা করে। পরদিন সকালে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে।

রেখামনি পেকুয়া উপজেলার রাজাখালী বেশারাতুল উলূম কামিল মাদ্রাসার অষ্ঠম শ্রেণীতে অধ্যায়নরত ছিল। হত্যার ঘটনায় ৩ জনকে আসামি করে নিহতের বাবা আয়ুব আলী বাদি হয়ে পরদিন ২৭ জুলাই পেকুয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।

নিহত তাবাসসুম জান্নাত রেখামনির দিনমজুর বাবা আয়ুব আলী বলেন, ‘গত বছর ২৪শে জুলাই আমি ও আমার স্ত্রী বাড়িতে না থাকার সুবাদে চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার ছনুয়া ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের হলুরঘাট এলাকার মকছুদ আহমদের ছেলে আবুল কাশেম (২০), রাজাখালী ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড মিয়াপাড়ার মৃত আবুল হোছাইন প্রকাশ বাশারের ছেলে আলমগীর (২২) ও একই ইউনিয়নের হাজীর পাড়া এলাকার নুরুল হকের ছেলে রবিউল আলম (১৯) মিলে আমার মেয়েকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ করে বিষ খাইয়ে হত্যা করে। পরে আমার বড় ছেলে ঘটনাটি আমাকে ফোন করে এ খবর জানায়।

পরবর্তীতে আমি পেকুয়া থানায় মেয়েকে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত তিনজনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করি। এরপর থেকে দীর্ঘ ৬ মাস সময় অতিবাহিত হলেও পুলিশ মামলার এজাহারনামীয় একজন আসামিকেও গ্রেফতার করতে পারেনি। উল্টো আসামিরা এলাকায় বহাল তবিয়তে থেকে ঘুরাফেরা করছে। এতে আমি আতঙ্কে ভুগছি।

এদিকে ধর্ষণের পর হত্যাকাণ্ডের শিকার রেখামনির দিনমুজুর বাবা আয়ুব আলী একমাত্র মেয়ে হত্যার বিচারের আশায় ঘুরছেন প্রশাসনের দুয়ারে দুয়ারে। তিনি এভাবে ঘুরতে ঘুরতে এখন হতাশ হয়ে পড়েছেন। অন্যদিকে রেখামনি হত্যাকাণ্ডের পর সেসময় গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ ছাড়াও সর্বমহলে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। ওই সময় কয়েকদিন প্রশাসন বিষয়টি নিয়ে একটু সরব থাকলেও পরে তাদের তৎপরতা থেমে যায়। এরইমধ্যে ৬ মাস পার হয়েছে। কিন্তু গ্রেপ্তার হয়নি একজন আসামিও।

জানতে চাইলে রাজাখালী বেশারাতুল উলূম কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা কফিল উদ্দিন ফারুক বলেন, হত্যাকাণ্ডের শিকার রেখামনি গরীব ঘরের সন্তান। সে প্রচণ্ড মেধাবী ছিল। তাঁর বাবা একজন দিনমুজুর। একমাত্র মেয়ে রেখামনিকে হারিয়ে পরিবারটি আজ একেবারে দিশেহারা। আমরা চাই, এইধধরণের ঘটনায় যারাই জড়িত থাকুক না কেন আইনের আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তির মুখোমুখি করা হোক। প্রশাসনের কাছে আমাদের এটাই চাওয়া।

বিষয়টি প্রসঙ্গে পেকুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আলী বলেন, মামলাটি রুজু হবার পর অফিসার ইনর্চাজ তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন। তিনি বদলী হলে তদন্তভার ন্যাস্ত হন ওসি তদন্তের কাছে। তিনি ছুটিতে আছেন। তিনি কর্মস্থলে ফিরলে মামলার অগ্রগতি ও এজাহারনামীয় আসামি গ্রেফতারে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কক্সবাজার জেলা পুলিশের চকরিয়া সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মো. তফিকুল আলম বলেন, মামলার তদন্ত কার্যক্রম চলমান, আসামি ধরার জন্য পুলিশের নিয়মিত অভিযান অব্যাহত আছে।

 

পাঠকের মতামত: