ঢাকা,সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪

ঘূর্ণিঝড় আয়ান-এর আঘাত

ফ্লোরিডায় চরম দূরাবস্থায় দিন কাটছে ২ হাজার বাংলাদেশির

ইমা এলিস, নিউ ইয়র্ক: যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার উপকূলীয় এলাকায় শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ‘আয়ান’ -এর আঘাতে প্রায় ২ হাজারেও বেশি বাংলাদেশি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। গত বুধবার (২৮ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৩টায় কায়ো কোস্টা দ্বীপের কাছে ঘূর্ণিঝড়টি প্রথম আঘাত হানে। এতে ফ্লোরিডার পশ্চিমাঞ্চলের ফোর্ট মায়ার্স, সেন্ট পিটার্সবার্গ, নেপলস, সারাসোটা ও কেপ কোরালসহ প্রায় ১০টি অঞ্চলে বসবাসকারী প্রায় ২ হাজার বাংলাদেশির ব্যবসা ও বাড়িঘরের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে বলে স্থানীয় বাসলাদেশিদের সূত্রে জানা গেছে। এ খবর জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম বাংলা প্রেস।
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ফ্লোরিডার সভাপতি ও বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ ফ্লোরিডা শাখার সাবেক সাধারন সম্পাদক মোহাম্মদ রহমান জহির এ প্রতিনিধিকে জানান, ফ্লোরিডার পূর্বাঞ্চলে যেসকল বাংলাদেশিরা বসবাস করছেন তাদের তেমন কোনই ক্ষতি হয়নি। শুধু হাল্কা বৃষ্টি ও বাতাসের ধাক্কা পেয়েছেন। তবে বাড়ি ঘরে পানি ঢোকেনি এমনকি কারও ব্যবসার কোন ক্ষতি হয়নি।
অন্যদিকে, ফ্লোরিডার পশ্চিমাঞ্চলের ফোর্ট মায়ার্স, সেন্ট পিটার্সবার্গ, নেপলস, সারাসোটা ও কেপ কোরাল,বনিতা স্প্রিংস, অ্যাপালাচিকোলা, সিয়েস্তা কী, পেনসাকোলাসহ প্রায় ১০/১২টি অঞ্চলে বসবাসকারী প্রায় ২ হাজার বাংলাদেশির ব্যবসা ও বাড়িঘরের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে। অনেকের বাড়ির ছাদ পর্যন্ত পানি উঠেছে। যা সর্বকালের রেকর্ড ভঙ্গ করেছে বলে জানান মোহাম্মদ রহমান জহির।
ফোর্ট মায়ার্সের একজন বাংলাদেশি ব্যবসায়ী জানান, এখানকার বাংলাদেশিরা গ্যাস ষ্টেশন, কনভিনেন্স স্টোর ও গ্রোসারি ইত্যাদি ব্যবসার সাথে জড়িত। গত ৩ দিনের শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ‘আয়ান’-এর আঘাতে সব লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। বাড়িঘরে ডুবে গেছে। অনেকের বাড়ির ছাদ পর্যন্ত পানি উঠেছে। এ এলাকার বাংলাদেশিসহ লাখ লাখ মানুষ চরম দূরাবস্থায় দিন কাটাচ্ছে।
জানা গেছে ফ্লোরিডার নেপলস শহর এখনও ৪ ফুট পানির নিচে। বিদ্যুতবিহীন বেশ কয়েকটি শহর।
ফুট মায়ার্সে বখতিয়ার রহমান জানান ১৫০ মাইল বেগে ঘূর্ণিঝড় ‘আয়ান’ এর আঘাতে ফুট মায়ার্সের অনেক ক্ষয়ক্ষতি করেছে। অনেক বাড়িঘর ভেঙ্গে গেছে। ক্যাটাগরি ৫-এ ফুট মায়ার্সের বিচের আশপাশের বাড়িঘর ভেঙ্গে গেছে। বাংলাদেশি পরিবারগুলো নিরাপদে আছেন বলে তিনি জানিয়েছেন। অনেকে বাড়িঘর ফেলে নিরাপদ আশ্রয়স্থলে উঠেছেন। ১০ মাইলের বেশি বেগে হ্যারিকেন স্যারাসোটা স্তনানাতরিত হয়ে টেম্পা বে অতিক্রম করে। সেন্ট্রাল ফ্লোরিডার হোম ডিপো, লউস নামের দোকানগুলোতে ছিল উপচে পড়া ভিড়। জেনারেটর, কাঠ, মাটি, বালি, যে যা পেরেছেন বুধবার দিনে যে কিছুটা সময় খোলা ছিল, কিনে রেখেছেন। রাত ৬টা থেকে ৭টার দিকে ফুট মায়ার্সের পাশে পোন্টা গার্ডেন এলাকায় ১৪০ মাইলে ইয়ান আঘাত হানে। সে সব জায়গায় ছিল ভারি বৃষ্টি ও দমকা বাতাস।
ক্যাটাগরি ৪-এ লণ্ডভণ্ড করে ফেলে। ৯ মাইল বেগে স্থানান্তরিত হতে থাকে ল্যান্ডফল ইয়ান। ইয়ান ১৫০ মাইল গতিতে স্টর্ম সার্চ, সাউথ ইস্ট ফ্লোরিডা অতিক্রম করছে। ক্রেগ ফিগাট নামের সাবেক
ফেমা কর্মকর্তা বলেন, ফেডারেল ইমার্জেন্সি ম্যানেজমেন্ট- ফেমা যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় ১৩০০ ফেডারেল রেসপন্স ওয়ার্কার প্রস্তুত রেখেছে। সাথে ইকুইপমেন্ট প্রস্তুত। তিনি জানান, ১,২৮,০০০ গ্যালন প্যাসোলিন রেডি ফর রেপিড রেসপন্স। ৩০০ এম্বুলেন্স স্টান্ডবাই, ৩.৭ মিলিয়ন মিল ( খাদ্য) ও ৩.৫ মিলিয়ন পানির বোতল প্রস্তুত। ২৫০০ রেডক্রস রেসপন্ডার ও ৬ হাজার মানুষের জরুরি আশ্রয়ের ব্যবস্থা করে রাখা হয়েছে।
সেরাসোটার মেয়র এরিক এরও বলেন, বিদ্যুৎ সহসাই ফিরে আসবে। ইমার্জেন্সি ক্রুরা দিনরাত কাজ করছেন। অনেক শেল্টার সেন্টার বাড়ানো হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা প্রস্তুত আছি, জেনারেটর প্রস্তুত, অনেককেই নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। ৪ থেকে ১৮ ইঞ্চি ফ্লাডিং সম্ভাবনার কথা জানানো হয়েছে। সাউথ-ইস্ট পোট সারলেটকে ধ্বংস করে গেছে ইয়ান। সম্পূর্ণ শহর গোস্ট টাউন।
গভর্নর ডি সানটোস জানান, ১ দশমিক ৮ মিলিয়ন বিদ্যুতহীনতার আওতায়। ৩ মিলিয়ন মানুষদের নিরাপদে সরিয়ে নেয়ার আওতায় আনা হয়েছে। ডাউন টাউন ফোর্ট মায়ার্সের একতলা হোটেল ডুবে গেছে। সেরাসোটাতে ৯৬ শতাংশ এলাকায় বিদ্যুত নেই।
বাসা-বাড়িতে সবাই আতঙ্কিত ও শংকায় রাতযাপন করছেন। ফ্লোরিডার ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ হ্যারিকেন ইয়ান নাগরিকদের মনোবল ভেঙ্গে দিয়েছে। এ রিপোর্ট লেখার সময় সেন্ট্রাল ফ্লোরিডায় দিকে প্রবাহিত হচ্ছে বাতাস। শোঁ শোঁ বাতাসে আতঙ্কিত সবাই। এই মুহূর্তে বুধবার রাত ১১ টায় ক্যাটাগরি ২-এর আওতায় ওরলান্ডো। অনেক ছোট-বড় গাছ পড়ে গেছে। ২৮ সেপ্টেম্বর পুরো রাতটাই কাটবে উদ্বেগ উৎকণ্ঠায়। ভারী বৃষ্টিতে সেন্ট্রাল ফ্লোরিডা নিমজ্জিত। বাসা-বাড়িতে বাচ্চারা আতঙ্কিত। টিভিতে ইয়ানের তাণ্ডব দেখে সারা বিকাল-সন্ধ্যা ৬ বছরের আয়েশা চিৎকার করে উঠে বাঁচাও শব্দ করে।
ওরলান্ডোর ডিউক এনার্জি জানায়, ৮০ হাজার নাগরিক বিদ্যুতবিহীন থাকবেন ওরলান্ডো সিটিতে। শহরজুড়ে কারফিউ জারি করা হয়েছে। যদি কেউ বের হন ২ ডিগ্রি চার্জে গ্রেপ্তার হবেন। শহরের নানা জায়গার বাংলাদেশিদের ফোন দিয়ে জানা গেল, সবাই আতঙ্কিত। বিশেষ করে নেপলস ও সেরাসোটার ভয়াবহ ডেমেজড দেখে সবাই আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করছেন।

পাঠকের মতামত: