ঢাকা,মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪

পেকুয়ায় রাজাখালীতে পাউবোর তিন কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ!

মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন, পেকুয়া

কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার উপকূলীয় রাজাখালী ইউনিয়নের পেছু মিয়ার বাড়ি থেকে বকশিয়া ঘোনা পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার পাউবো নিয়ন্ত্রিত বেড়িবাঁধ চরম ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। ফলে সাগর উপকূলবর্তী এ ইউনিয়নের অন্তত ১০হাজার মানুষ চরম ঝুঁকিতে রয়েছে। জরুরী ভিত্তিতে বেড়িবাঁধের ক্ষতিগ্রস্থ পয়েন্টে সংস্কার না হলে চলতি বর্ষা মৌসুমে সাগরের জোয়ারের পানি লোকালয়ে প্রবেশ করে পুরো ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম সিকদার বাবুল।

ইউপি চেয়ারম্যান বলেন,উপকূলবর্তী রাজাখালী ইউনিয়নের পশ্চিম অংশে কুতুবদিয়া চ্যানেল তীরবর্তী পেচু মিয়ার বাড়ি থেকে বকশিয়া ঘোনা পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার পাউবোর বেড়িবাঁধ মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ ও অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) নিয়ন্ত্রিত এসব বেড়িবাঁধ গত ৫ বছর ধরে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এভাবে সংস্কারবিহীন থাকলে বেড়িবাঁধ অচিরেই বিলীন হয়ে যাবে।

সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, পেকুয়া উপজেলার রাজাখালী ইউনিয়নের পশ্চিম অংশে পেচু মিয়ার বাড়ি থেকে বকসিয়া ঘোনা পর্যন্ত বিভিন্ন অংশে প্রায় তিন কিলোমিটার বেড়িবাঁধ সংস্কারবিহীন রয়েছে। তবে তিন কিলোমিটারের পরে কিছু অংশে বেড়িবাঁধে সিসি ব্লক বসানো করা হয়েছে। কিছু অংশে ব্লক স্থাপন করা হলেও এর পরের অংশের মাটির বেড়িবাঁধ সংস্কারবিহীন অবস্থায় রয়েছে। মাটির বেড়িবাঁদের অংশে সেখানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। সাগরের অমবশ্যা আর পূর্ণিমার জোয়ারের পানির স্্েরাতে বেড়িবাঁধ থেকে মাটি সরে যাচ্ছে। পেছু মিয়ার বাড়ি থেকে বকসিয়া ঘোনা পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার বেড়িবাঁধ অংশে গত পাঁচ বছরে একাধিক পয়েন্টে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এ তিন কিলোমিটার বেড়িবাঁধের অংশে মাটিদ্বারা ভরাটের কাজ অসমাপ্ত রয়েছে। তিন কিলোমিটারের মধ্যে সর্বাধিক ঝুঁকিতে আছে দেড় কিলোমিটার। রাজাখালী ইউনিয়নের পশ্চিমাংশে পেচু মিয়ার বাড়ি থেকে পশ্চিম অংশে এবং দক্ষিণ অংশে সম্পূর্ণ অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে। সাগরের ঢেউয়ের আঘাতে এ পয়েন্টে পাউবোর বেড়িবাঁধ সম্পূর্ণ বিলীন হওয়ার পথে। এরপরেও বেড়িবাঁধ সংস্কারে পাউবোর কোন উদ্যোগ দেখা যাচ্ছেনা।

জানা যায়, বিগত পাঁচ বছর ধরে রাজাখালীতে বেড়িবাঁধের উক্তদ পয়েন্টে বেড়িবাঁধের অবস্থা বেহাল। বর্তমানে সেখানে স্থানীয়রা জোয়ারের পানি প্রবেশ ঠেকাতে রিং বাঁধ দিয়েছে। চলতি বর্ষা মৌসুমেই এই দুই পয়েন্টে মাটি ভরাটের কাজ বাস্তবায়ন না হলে নিশ্চিত রাজাখালী ইউনিয়ন সাগরের জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম সিকদার বাবুল তার ইউনিয়নের বেড়িবাঁধের আশেপাশে বসবাসরত দশ হাজার মানুষের জানমাল রক্ষা করতে দ্রুত সময়ে ক্ষতিগ্রস্থ বেড়িবাঁধ সংস্কারে জরুরী অর্থ বরাদ্দ প্রদানের জন্য পাউবোর কাছে জোরালো দাবি জানিয়েছেন।

স্থানীয় পরিবেশকর্মী সুমন জানিয়েছেন, উপকূলীয় এলাকায় জলবায়ুতে পরিবর্তন এসেছে। সাগরের পানির উচ্চতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। পেকুয়া উপজেলার রাজাখালীসহ বিভিন্ন ইউনিয়নে বেড়িবাঁধ ভেঙে যাচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড কয়েক বছর যাবৎ বাঁধ করবে বলেও কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি। এ কারণে সাগরের লোনা পানি প্রায় সময় লোকালয়ে প্রবেশ করছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ব্যাপারটি বর্তমানে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি ইস্যু। আগে উপকূলীয় এলাকার বেড়িবাঁধের বাইরের চরে বন বিভাগের ঝাউ ও প্যারাবন ছিল। সময়ের পরিক্রমায় স্থানীয় সংঘবদ্ধ বনদস্যুরা তা কেটে উপকূলকে অরক্ষিত করে তুলেছে। সে কারণেও সাগরের পানি সরাসরি বেড়িবাঁধকে ক্ষতিগ্রস্থ করছে।

জানা যায়, কয়েক বছর পূর্বে পেকুয়া ও চকরিয়ার বেড়িবাঁধ সমুহ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সরকারের পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে বান্দরবান পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে ন্যাস্ত করেছে। পেকুয়া ও চকরিয়া পাউবোর কক্সবাজার জেলার অধীন হলেও পাউবোর বেড়িবাঁধগুলো রক্ষণাবেক্ষনের জন্য বান্দরবান পাউবোর অধীনে ন্যাস্ত করায় সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। পেকুয়ায় পাউবোর শাখা কার্যালয় না থাকায় কোন কর্মকর্তাকে পাওয়া যায়না।

 

পাঠকের মতামত: