ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৪

পেকুয়ায় মগনামাতে ২ পয়েন্টে নেই বেড়িবাঁধ, প্লাবন শংকায় ৩০ হাজার মানুষ

নাজিম উদ্দিন, পেকুয়া ::  পেকুয়ায় মগনামা ইউনিয়নে দুই পয়েন্টে নেই বেড়িবাঁধ। এতে করে সাগর উপকুলবর্তী ওই ইউনিয়নের অন্তত ৩০ হাজার মানুষ প্লাবিত হওয়ার শংকায় রয়েছে। দ্রুত সময়ে বেড়িবাঁধের ক্ষতিগ্রস্ত এ দু’অংশ সংষ্কার কাজ বাস্তবায়ন না হলে জোয়ারের পানি লোকালয়ে প্রবেশ করে এ ইউনিয়নের বিস্তীর্ন এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। উপকুলবর্তী ওই ইউনিয়নের পশ্চিম অংশে কুতুবদিয়া চ্যানেল সংশ্লিষ্ট সাগর এলাকায় কাঁকপাড়া মাজার পয়েন্ট ও উত্তর মগনামা শরতঘোনা পয়েন্টে পৃথক দুটি স্থানে প্রায় ২০ চেইন বেড়িবাঁধ মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ন অবস্থায় অরক্ষিত। পাউবো নিয়ন্ত্রিত এ সব বেড়িবাঁধ গত ৫ বছর যাবৎ ঝুঁকিপূর্ন হয়ে গেছে। কুতুবদিয়া চ্যানেলের প্রচন্ড ঢেউয়ের আঘাতে এ সব বেড়িবাঁধ বিলীন হয়ে যায়। বিলীন হওয়া ওই অংশ দিয়ে সাগরের লোনা পানি একাধিকবার মগনামায় লোকালয়ে প্রবেশ করে। ওই সময় এ ইউনিয়ন একাধিকবার প্লাবিত হয়েছে। এ দিকে সুত্র জানায়, পাউবো নিয়ন্ত্রিত বেড়িবাঁধ সংষ্কার কাজ বাস্তবায়ন করতে সরকার বরাদ্ধ দেয়। টেকসই বেড়িবাঁধ সংষ্কার বাস্তবায়ন করতে প্রায় ৩শ কোটি টাকা বরাদ্ধ দেয়া হয়েছে। মগনামায় ৮ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে। অধিক টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন করতে পাউবো কার্যাদেশ দেয়। প্যাকেজ ওয়ারী বেড়িবাঁধ বাস্তবায়ন কাজ চুড়ান্ত করতে ঠিকাদারী প্রতিষ্টানসমুহ কাজের কার্যাদেশ পায়। সুত্র জানায়, ওই ইউনিয়নের ৮ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ সংষ্কার কাজ গত ২ বছর আগে থেকে শুরু হয়েছে। উন্নয়ন ইন্টারন্যাশনাল নামক ঠিকাদারী প্রতিষ্টান এ ইউনিয়নের বেড়িবাঁধ সংষ্কারকাজ বাস্তবায়ন করছে। প্রথম ধাপে তারা বেড়িবাঁধে মাটি ভরাট কাজ শুরু করে। পাউবো কারিগরী ও প্রযুক্তিগত সমন্বয়ে টেকসই বাঁধ নির্মাণে কার্যাদেশ ঘোষনা করে। ওই কাজ সম্পাদন করতে প্রায় ৩শ কোটি টাকার অর্থ বরাদ্ধ দেয়। ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে পেকুয়ায় বেড়িবাঁধ সংষ্কারের জন্য ওই অর্থ ছাড় দেয়। সুত্র জানায়, মাটি ভরাট, জিউ টেক্সটাইল ও কনফেকশনসহ পরবর্তীতে বেড়িবাঁধের মাটি ভরাট অংশে আরসিসি ব্লক স্থাপনে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়। সমুদ্রের প্রচন্ড ঢেউ ও খর¯্রােতা সাগরের পানির আছড় প্রতিরোধ করতে পাউবোর ওই টেকনিক্যাল প্ল্যান। মগনামায় পশ্চিম অংশে বেড়িবাঁধ সংষ্কার কাজ বাস্তবায়ন হচ্ছে। তবে ৮ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ অংশে গত ২ বছরে সাড়ে ৫ কিলোমিটারে মাটি ভরাট কাজ বাস্তবায়ন হয়েছে। প্রায় আড়াই কিলোমিটার বেড়িবাঁধ অংশে মাটি ভরাট কাজ অসমাপ্ত রয়েছে। আড়াই কিলোমিটারের মধ্যে সর্বাধিক ঝুঁকিতে আছে প্রায় ২০ চেইন বেড়িবাঁধ। এ ইউনিয়নের সর্বদক্ষিনে সাগরের খর¯্রােতা অংশ কাঁকপাড়া মাজার পয়েন্টে প্রায় ৭ চেইন বেড়িবাঁধ অরক্ষিত। সাগরের ঢেউয়ের আঘাতে এ পয়েন্টে পাউবোর বেড়িবাঁধ সম্পূর্ন বিলীন হয়েছে। লোকালয় ও সাগর চর পয়েন্ট প্রায় একাকার। অপরদিকে শরতঘোনা চরখানায় মোকামে প্রায় ১৩ চেইনে বেড়িবাঁধ নেই। গত ৫ বছর যাবৎ ওই পয়েন্টে বেড়িবাঁধের বেহাল দশা। বর্তমানে রিংবাঁধ আছে সেখানে। মৎস্য চাষীরা রিংবাঁধ দিয়ে আপাতত প্লাবন ঠেকায়। চলতি বর্ষা মৌসুমে আগে এ ২ পয়েন্টে মাটি ভরাট কাজ বাস্তবায়ন না হলে নিশ্চিত মগনামা ইউনিয়ন প্লাবিত হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। এ দিকে বেড়িবাঁধ সংষ্কার কাজ বাস্তবায়ন দাবী জোরালো হচ্ছে মগনামায়। যে সব স্থানে বেড়িবাঁধ নেই সেখানে দ্রুত সময়ে মাটি ভরাট কাজ বাস্তবায়ন দাবীতে এলাকাবাসী সোচ্চার হচ্ছে। মগনামাবাসী জানায়, আমরা বেড়িবাঁধ ঝুকিতে আছি। দ্রুত সময়ে বাঁধ সংষ্কার না হলে বর্ষা মৌসুমে মগনামা ইউনিয়ন প্লাবিত হবে। এতে নেই কোন সন্দেহ। ৩০ হাজার মানুষ চরম প্লাবিত শংকায় ভোগছে। এ দিকে বর্ষার আগে বেড়িবাঁধের ঝুঁকিপূর্ন অংশ সংষ্কার দাবীতে মগনামায় মিডিয়া কর্মীদের নিয়ে প্রেস ব্রিফিং করেছেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান শরাফত উল্লাহ চৌধুরী ওয়াসিম। ৩০ হাজার মানুষের জানমাল রক্ষা ও প্লাবিত শংকা থেকে রক্ষা করতে দ্রুত সময়ে বেড়িবাঁধ অংশে মাটি ভরাট কাজ বাস্তবায়ন করার জোরালো দাবী তোলেন এ তরুন চেয়ারম্যান। শনিবার ৬ এপ্রিল মগনামা ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে বেড়িবাঁধ সংষ্কার দাবীতে প্রেস ব্রিফিং অনুষ্টিত হয়। বিকেলে অনুষ্টিত ওই প্রেস ব্রিফিংয়ে ইউপি চেয়ারম্যান শরাফত উল্লাহ ওয়াসিম বক্তব্য দেন। এ সময় ইউপি কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে পেকুয়ার গণমাধ্যম কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। বক্তব্যে চেয়ারম্যান শরাফত উল্লাহ ওয়াসিম জানায়, আমার ইউনিয়নে ৩০ হাজার মানুষ দুর্যোগ ঝুঁকিতে রয়েছে। টেকসই বাঁধ সংস্কার কাজ বাস্তবায়ন করতে সরকার ৩শ কোটি টাকা বরাদ্ধ দেয়। উন্নয়ন ইন্টারন্যাশনাল নামক ঠিকাদারী প্রতিষ্টান নিন্মমান সংষ্কার কাজ বাস্তবায়ন করছে। মাটি ভরাটে অনিয়ম। ব্লক তৈরী ও লেবেলে অনিয়ম ও দুর্নীতিতে ব্যস্ত থাকায় সংষ্কার কাজ থেমে গেছে। সরকারী কোটি কোটি টাকা লোপাট হয়েছে। ঠিকাদার আতিকুল ইসলাম বাঁধ নির্মাণে গাফিলতি ও ধীরগতিতে কাজ করায় মগনামা বর্ষা মৌসুমে পানিতে তলিয়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে আছে। প্রধানমন্ত্রীর স্বচ্ছ এ কাজকে জনগনের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ করার উপক্রম হয়েছে এ ঠিকাদারের কারনে। আমি মিডিয়া কর্মীদের লেখনির মাধ্যমে আমার ইউনিয়ন বাসীর দুরবস্থা তুলে ধরতে আহবান করছি। একইভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, পানিসম্পদ মন্ত্রী, মাননীয় সাংসদ, সরকারী উর্ধতন মহলের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছি। বিগত ৩ বছরে মগনামায় ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। রাস্তাঘাট ও গ্রামীন অবকাঠামো সংষ্কার বাস্তবায়ন হয়েছে। গ্রামীন সড়কসমুহ মাটি ভরাট পাকাকরন করা হয়েছে। প্রায় ৭ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ পরিসমাপ্তি হয়েছে। বেড়িবাঁধ অংশে জোয়ারের পানি প্রবেশ করলে এ সব তলিয়ে যাবে।

পাঠকের মতামত: