ঢাকা,শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪

পেকুয়ায় এরশাদ আলী ওয়াকফ সম্পত্তি নিলামে ব্যাপক অনিয়ম, অপহৃত-১

পেকুয়া প্রতিনিধি ::
পেকুয়ায় এরশাদ আলী ওয়াকফ সম্পত্তি নিলামে ব্যাপক হট্রগোলসহ ধাওয়া ও পাল্টা ধাওয়া হয়েছে।  ৬ মে রবিবার দুপুরে পেকুয়ায় উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় নিলামে অংশগ্রহনকারী একজন ডাককারীকে অপহরন করা হয়েছে। ঘটনার জের ধরে পেকুয়ায় উপজেলা প্রশাসনের কার্যালয়, চৌমুহনী কলেজ গেইট মোড়সহ আশপাশের বেশ কিছু স্থানে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। নিলামকে কেন্দ্র করে ভাড়াটে লোকজন উপজেলার প্রশাসনিক কার্যালয়ের অভ্যন্তরে ঢুকে পড়ে। এ সময় নিলামের একক আধিপত্য নিতে ওয়াকফ স্টেটের সাবেক মোতাওয়াল্লী হানিফ চৌধুরীর অনুগত লোকজন ব্যাপক মহড়া ও শক্তি প্রদর্শন করে। তারা উপজেলা কার্যালয়ে মানব বলয় তৈরী করে।

নিলামে অংশ না নিতে অপর ডাককারীদের লাঞ্চিতসহ মারধর করে। এমনকি এর সুত্র ধরে ওয়াকফ স্টেটের নিলামে অংশ গ্রহনকারী পেকুয়া বিছমিল্লাহ এন্টারপ্রাইজের স্বত্তাধিকারী ও চৌমুহনী কলেজ গেইট বনফুল এন্ড কনফেকশনারীর মালিক ব্যবসায়ী মহিউদ্দিনকে উপজেলা কম্পাউন্ড থেকে অপহরন করে। পুলিশের উপস্থিতিতে তাকে ব্যাপক মারধরসহ একটি সিএনজি গাড়িতে তুলে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়।

এর প্রেক্ষিতে ব্যবসায়ী অপহরন ও টেন্ডার লুটপাটের ঘটনায় পেকুয়া থানায় লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছে। টেন্ডার কে কেন্দ্র করে হানিফ চৌধুরীর অনুগত লেলিয়ে দেয়া সন্ত্রাসীরা ব্যাপক তান্ডব চালায় পেকুয়া উপজেলা প্রশাসন কার্যালয়ে। তবে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এডাতে পুলিশ মোতায়েন ছিল সকাল থেকে।

পুলিশের উপস্থিতি ও ইউএনওর দায়িত্ব অবহেলা ও ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেয়। খোদ নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে এ ধরনের ঘটনায় জনমনে উদ্বেগ ও অসন্তোষ দেখা দেয়। তবে ওই দিন ওয়াকফ স্টেটের জমির নিলাম পেকুয়ায় সম্পন্ন হয়েছে।

অভিযোগ, হট্রগোল ও লাঞ্চিত হওয়ার পরেও পেকুয়ায় এরশাদ আলী ওয়াকফ জমির নিলাম বাস্তবায়ন হয়েছে। সর্বোচ্চ ডাককারী হিসেবে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অধীন ওই জমি হানিফ চৌধুরীর অনুকুলে যায়। সর্বোচ্চ ডাককারী হিসেবে তার ডাক ছিল ১ কোটি ২৫ লক্ষ টাকা। সুত্র জানায়, এরশাদ আলী ওয়াকফতে ৬০৭ কানি লবণ চাষের জমি আছে। এ ছাড়া ৪৮ একর ফসলী জমি আছে। ওই দিন নিলাম অংশ নিয়েছিলেন ৫ জন ডাককারী। তবে মহিউদ্দিন সহ অপর একজন ডাককারীকে ডাকে অংশ নিতে দেয়নি। নিলামে ৩ জন অংশ নেয়। হানিফ চৌধুরী, মেহের সল্টের মালিক শাহাদাত আলী সিকদার ও জয়নাল আবেদীন নামের ৩ জন সর্বশেষ ডাকে অংশ নেয়।

অভিযোগ উঠেছে এ ৩ জন একই সিন্ডিকেটের অনুকুলে ডাকে অংশ নেয়। জয়নাল ও রাজাখালীর সাবেক চেয়ারম্যান শাহাদাত আলী সিকদার হানিফ চৌধুরীর ব্যবসায়িক পার্টনার। আইনী জটিলতা নিরসনে ওই দিন তারা ৩ জন ঐক্যমতে নিলামে অংশ নেয়। সুত্র জানায়, সরকারের ওয়াকফ প্রশাসনের এ সম্পত্তি পানির দরে নিলাম পায় বিএনপি নেতা হানিফ চৌধুরী।

চলতি বছরসহ আগামী দুই বছরের জন্য ওই জমি নিলাম আহবান করে। গেল বছর এক বছরের জন্য জমির নিলাম মুল্য ধার্য্য ছিল এক কোটি ১৫ লক্ষ টাকা। লবণ চাষের জমির আগাম লাগিয়ত আকাশ চুম্বী। সে ক্ষেত্রে প্রতি কানি জমির লাগিয়ত প্রায় ৪০ হাজার টাকা। সে হিসেবে ২ বছরে এরশাদ আলী ওয়াকফের জমি লাগিয়ত টাকা হবে প্রায় ৮ কোটি টাকার উপর। গেল বছরের এক বছরের লাগিয়ত এক কোটি ১৫ লক্ষ টাকা ছিল। তবে ওই দিন নিলাম হয়েছে ২ বছরে।

নিলামে সর্বোচ্চ মুল্য এক কোটি ২৫ লক্ষ টাকা। এতে করে এরশাদ আলী ওয়াকফের নিলামে ওই দিন ব্যাপক দরপতন হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে প্রায় ৪ কোটি টাকার স্বাভাবিক নিলাম থামিয়ে দেয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে ইউএনও, ওসি ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা হানিফ চৌধুরীর সাথে জোটবদ্ধ হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

উপজেলা বিএনপির সভাপতি বাহাদুর শাহ ও যুবদলের সাধারন সম্পাদক কামরান জাদীদ মুকুট ওই দিন হানিফ চৌধুরীকে পরোক্ষ সহায়তা করেছে। তারা জনবল নিয়ে উপজেলায় অবস্থান নেয়। এদের পক্ষে উপজেলা যুবলীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম লোকজন নিয়ে উপজেলায় সরাসরি জড়ো হয়। ওই দিন নিলামে জাহাঙ্গীরের অনুগত ও বাহাদুর শাহ অনুগত লোকজন হানিফ চৌধুরীর পক্ষে শক্তি প্রদর্শন করে।

নাম প্রকাশ না করার পক্ষে নিলামে অংশ গ্রহনকারী ইউনিয়ন যুবদলের এক শীর্ষ নেতা জানায়, বাহাদুর শাহ ও মুকুট আমাকে নিলাম প্রত্যাহার করতে চাপ দেয়। আমি বাধ্য হয়ে পিছনে হটেছি। তবে ওয়াকফ তিন কোটি টাকা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। রাজস্ব থেকে সরকার বঞ্চিত হয়েছে ২০ লক্ষ টাকা। আমি বিএনপি করি হানিফ চৌধুরীও বিএনপি করে তবে বিএনপি আমাকে অনুরোধ করতে পারে।

হানিফ চৌধুরী জানায়, আমি সর্বে্চ্চা ডাককারী হিসেবে সম্পত্তির নিলাম পেয়েছি। এখানে এ সব ঘটনার জন্য প্রশাসন দায়ী। তারা আইনশৃংখলার নিরাপত্তা দেবে। এ ক্ষেত্রে কেউ অপহরন ও হয়রানি হলে এর জবাব তারা দিবে।

পেকুয়া থানার ওসি জহিরুল ইসলাম খান জানায়, অপহরন হয়েছে সেটি আমি অবগত নই। এ সম্পর্কে খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে।

উপজেলা আ’লীগের সাধারন সম্পাদক আবুল কাসেম জানায়, ইউএনও ও ওসি এ পরিস্থিতির জন্য দায়ী। আ’লীগের ব্যবসায়ীরা নিলামে অংশ নিতে গিয়েছিল। এদেরকে লাঞ্চিত ও মারধর করা হয়েছে। হানিফ চৌধুরী বিএনপির অর্থযোগানদাতা। বাহাদুর শাহ ও মুকুট সেখানে বাড়াবাড়ি করেছে।  বুঝতে হবে এ সব তারা পরিকল্পনামাফিক করছে।

ইউএনও মাহাবুব উল করিম জানায়, এখানে কেউ যদি অপহৃত হয়ে থাকেন থানায় অভিযোগ দিতে বলেন। এটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর ঘটনা। এ সব পুলিশ বুঝবে। আমি কাউকে বাড়িতে গিয়ে নিরাপত্তা দিতে পারব না।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক কামাল হোসেন জানায়, বিষয়টি নিয়ে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। হানিফ চৌধুরী ওনি কে? ইউএনওর সাথে বিস্তারিত জেনে এ সম্পর্কিত বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

পাঠকের মতামত: