আইডিয়া ও ডায়ালগ : তানভীর আহমেদ
ইকবাল খন্দকার ::
আমার এক ছোটভাইয়ের সঙ্গে পিয়াজের বর্তমান বাজারদর নিয়ে কথা হচ্ছিল। আমার ধারণা ছিল সে চরম অসন্তোষ প্রকাশ করবে। কিন্তু আমি পরম বিস্ময়ে খেয়াল করলাম, তার মুখে হাসি ফুটেছে। সন্তুষ্টির হাসি। খোঁচা মেরে বললাম, পিয়াজের দামের কথা শুনে খুব খুশি হচ্ছিস যে? পিয়াজের গুদাম আছে নাকি? ছোটভাই বলল, আরে না, সেই ধরনের কিছু না। আমি পিয়াজের আকাশচুম্বি দামের কথা শুনে খুশি হয়েছি এ কারণে, যেহেতু বাড়তি দামের কারণে প্রতিবেশীর কাজের মেয়ের সঙ্গে আমাদের কাজের মেয়েটার আর সেভাবে ঝগড়াঝাটি হচ্ছে না। আমি অবাক হয়ে বললাম, মানে? ছোটভাই বলল, আগে আমাদের কাজের মেয়েটা করত কী, পাশের বাসার কাজের মেয়েটাকে ঢিল ছুড়ত। উল্টো সেও ছুড়ত। এরপর লেগে যেত ঝগড়া। আর এই ঝগড়া ছড়িয়ে পড়ত দুই ফ্যামিলির মধ্যে। পিয়াজের দাম বাড়ার পর এখন আর সেই ছোড়াছুড়িও নেই, ঝগড়াও নেই। বুঝতেই পারছেন ঢিলটা কী দিয়ে ছুড়ত? জি, ঠিক ধরেছেন। পিয়াজ দিয়ে। এখন বাসায় খাওয়ার পিয়াজও নেই, ছোড়াছুড়ির পিয়াজ পাবে কোথায়? আমার এক প্রতিবেশী বললেন, বুঝলেন ভাই সাহেব, কখন যে কার কপাল খুলে যায়, বলা দুষ্কর। টিভিতে যাওয়ার জন্য জীবনে কত চেষ্টা-তদবিরই না করলাম। কোনো চেষ্টা তদবিরই কাজে আসেনি। ফলে টিভিতেও চেহারা দেখানোর সৌভাগ্য হয়নি। অবশেষে ভাগ্যের শিঁকে ছিঁড়ল। গতকাল একযোগে পাঁচটা চ্যানেলে আমাকে দেখাল। আসলে কাজের মতো কাজ করলে সেটার মূল্যায়ন অবশ্যই পাওয়া যায়। আমি অতিমাত্রায় কৌতূহলী হয়ে বললাম, আপনি কী এমন কাজ করেছিলেন, যার মূল্যায়নস্বরূপ আপনাকে এতগুলো টিভিতে দেখাল? প্রতিবেশী বললেন, এক বস্তা পিয়াজ কিনেছিলাম। বস্তাটা কেনার পরই ক্যামেরাওয়ালা সাংবাদিকরা আমার পিছু নিল, একদম বাসা পর্যন্ত চলে এলো। এর মধ্যে দুই চারজন লাইভও করল। আমি বললাম, অতি উত্তম, অতি উত্তম। এবার প্রতিবেশী বললেন, যা-ই বলেন ভাই সাহেব, টিভিতে চেহারা দেখানোর ব্যাপারস্যাপারটাই অন্যরকম। বলতে পারেন এখন আমার মধ্যে টিভিতে চেহারা দেখানোর একটা জোশ চলে এসেছে। এ জন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছি রোজ এক বস্তা করে পিয়াজ কিনব। আমি বললাম, খুবই ভালো সিদ্ধান্ত। কিন্তু এত টাকা পাবেন কোথায়? প্রতিবেশী বললেন, টাকা নিয়ে চিন্তা করছি না। আপনার ভাবী তার গয়নাগাটি বিক্রির ব্যাপারে তার মূল্যবান সম্মতি জ্ঞাপন করেছে। পাশাপাশি ছোট একটা শর্ত দিয়েছে। শর্তটা হচ্ছে, পিয়াজের বস্তা কিনে নিয়ে বাড়ি ফেরার সময় এখন থেকে তাকেও সঙ্গে রাখতে হবে। আসলে টিভিতে মুখ দেখানোর খায়েশ তারও আছে তো! আবারও কাজের মেয়েবিষয়ক ঘটনা। আমাদের বাসায় যে মেয়েটা ‘ছুটা’ কাজ করতে আসে, তাকে বেশ মনমরা দেখা যাচ্ছিল। জিজ্ঞেস করলাম, কী হয়েছে? মেয়েটা বলল, আর বলেন না ভাইজান। আমি সকালের দিকে যে বাসাটায় কাজ করতে যাই, আগে সেখানে যেতে-আসতে কোনো সমস্যা হতো না। এখন বিরাট সমস্যা। সিসি টিভি তো ফিট করছেই, দারোয়ানেও চেক করে। আমি অবাক হয়ে বললাম, হঠাৎ এত কড়াকড়ি নিরাপত্তা? কারণ কী? মেয়েটা বলল, কোন বাসার কাজের ছেমড়ি নাকি তিন পিস পিয়াজ নিয়ে পালাতে গিয়ে ধরা খাইছে। আর যাতে কেউ এ কাম করতে না পারে, এ জন্য এত ‘সিকুরিটি’। আমার এক বন্ধু বলল, পিয়াজের দাম বেড়ে তো মনে হচ্ছে ভালোই হয়েছে। ওপরতলার লোকজনের সঙ্গে আর কেওয়াজ হচ্ছে না। আমি বললাম, কী রকম? বন্ধু বলল, আগে ওপর থেকে সামনে পিয়াজের খোসা উড়ে এসে বারান্দায় পড়ত। বেশ কদিন হলো, আসে না। আমার এক দার্শনিক টাইপ বড়ভাই বললেন, বুঝলি, কোনো জিনিসই তার ‘ন্যাচার’ বদলায় না। জন্মগতভাবে যা, তা-ই থাকে। যেমন পিয়াজ। কাটতে গেলেও কাঁদায়, এখন কিনতে গেলেও কাঁদাচ্ছে। বিডি প্রতিদিন
পাঠকের মতামত: