ডেস্ক নিউজ ::
অতীতে তারা ছিলেন নৌকার মাঝি, সময়-অসময়ে বিএনপির কঠোর সমালোচনায় থাকতেন মুখর। বিএনপিকে প্রতিহত করাই ছিল তাদের ধ্যান-জ্ঞান। অথচ সময়ের পরিক্রমায় এখন আওয়ামী লীগের বিরোধীতায় সরব তারা। এমনই বেশ কয়েকজন সাবেক আওয়ামী লীগ নেতার হাতে এবার শোভা পেতে যাচ্ছে ধানের শীষ।
আগামী ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এবারের নির্বাচনে মূলত দু’টি বড় জোটের মধ্যে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। এর একটি হচ্ছে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট; অপরটি হচ্ছে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২৩ দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।মহাজোটের প্রধান শরিক ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী তালিকা প্রকাশ হয়েছে রোববার (২৫ নভেম্বর)। সোমবার থেকে প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা প্রকাশ শুরু করেছে মাঠের বিরোধী দল বিএনপি।
এরই মধ্যে সাবেক বেশ কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতা ও তাদের পরিবারের সদস্য বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটে যোগ দিয়েছেন। তাদের মধ্যে আছেন বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিসভার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও বাংলাদেশের সংবিধানের অন্যতম প্রণেতা ড. কামাল হোসেন, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক আবু সাইয়িদ, ডাকসুর সাবেক দুই ভিপি মাহমুদুর রহমান মান্না, ও সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদ, ছাত্রলীগের সাবেক দাপুটে নেতা মোস্তফা মহসীন মন্টু। এ তালিকায় আরও আছেন সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়ার ছেলে অর্থনীতিবিদ রেজা কিবরিয়া, সিলেট জেলা যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক ও কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য নজরুল ইসলাম।
আসন্ন নির্বাচনে ড. কামাল হোসেন নিজে প্রার্থী না হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। বাকি সবাই লড়বেন। এরমধ্যে রেজা কিবরিয়া হবিগঞ্জ-১, মাহমুদুর রহমান মান্না বগুড়া-২, সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ মৌলভীবাজার-২ এবং মোস্তফা মহসীন মন্টু ঢাকার একটি আসনে এবং নজরুল ইসলাম সুনামগঞ্জ-৩ (জগন্নাথপুর-দক্ষিণ সুনামগঞ্জ) আসনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে ধানের শীষ প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। তাদের সঙ্গে লক্ষ্মীপুরের একটি আসন থেকে ধানের শীষে লড়বেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল- জেএসডির প্রধান আ সম আব্দুর রব।
এছাড়া মুক্তিবাহিনীর উপ-প্রধান, সাবেক বিমান বাহিনী প্রধান, সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের নেতা ও সাবেক পরিকল্পনা মন্ত্রী এ কে খন্দকারের হাতেও এবার শোভা পেতে পারে ধানের শীষ।
আর সোমবার রাতে সরাসরি বিএনপিতে যোগ দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ও মিডিয়ার পরিচিত মুখ গোলাম মাওলা রনি। ইতোমধ্যে তার মনোনয়নও চূড়ান্ত হয়েছে। পটুয়াখালী-৩ (গলাচিপা-দশমিনা) আসনে ধানের শীষ প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। এ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদার ভাগনে এস এম শাহজাদা সাজু।
বিএনপিতে যোগদানের বিষয়ে রনি বলেন, ‘আমি জেনে বুঝে সজ্ঞানে আওয়ামী লীগ থেকে বিএনপিতে যোগ দিলাম। আমি যতদিন বেঁচে থাকি, দেশ ও জনগণের সেবা করতে চাই। আমৃত্যু এই দলেই থাকব।’
এদিকে সাবেক আওয়ামী লীগ নেতাদের বিএনপি তথা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যোগ দেয়াকে স্বাগত জানিয়ে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ জাগো নিউজকে বলেন, বর্তমান সরকারের দুঃশাসন, নির্যাতনের বিরুদ্ধে মানুষ মুখ খুলতে শুরু করেছে। যারা আওয়ামী লীগ ত্যাগ করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যোগ দিয়েছেন মূলত তারা সরকারের সব অন্যায়-অত্যাচার, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে এবং দেশকে দুঃশাসনমুক্ত করতে সাহসী হয়েছেন। মানুষ এই সরকারের হাত থেকে মুক্তি চায়। আগামীতে আরও অনেকেই এই প্রক্রিয়ায় যুক্ত হবেন বলে জানান তিনি।
পাঠকের মতামত: