ঢাকা,রোববার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪

নাটকপ্রেমী তোফা গড়তে চান ই-লাইব্রেরি

wwwশামীউল আলীম শাওন :::
‘শুনেছো- ঠিকই শুনেছো। কেন সুনাম থাকবে না বলো? কতকাল ধরে কৃতিত্বের সঙ্গে এ কাজ করে আসছি’ শিবদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাটক সংগ্রহ গ্রন্থের ‘স্বর্গে কিছুক্ষণ’ নাটকের একটি সংলাপ এটি। এ সংলাপটি আমার অনেক ভালো লাগে। তাই মাঝে মধ্যেই এ গ্রন্থটি বের করে পড়তে চেষ্টা করি। কথাগুলো এক নাগারে বললেন নজরুল ইসলাম তোফা।
নজরুল ইসলাম তোফা একজন নাট্য গ্রন্থপ্রেমী মানুষ। তিনি নাটকের সমগ্র (নাট্যগ্রন্থ) পড়তে ভালোবাসেন। তাই তিনি দেশি বিদেশি লেখকদের লেখা নাটকের সমগ্র সংগ্রহ করেন। বর্তমানে তার সংগ্রহে রয়েছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, উৎপল দত্ত, বাদল সরকার, বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত, বুদ্ধদেব বসু, শরবিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়, অলোক রায়, শুম্ভ মিত্র, মনোজ মিত্র, রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত, নভেন্দু সেন, চন্দন সেন, লোকনাথ ভট্টাচার্য, ধনঞ্জয় বৈরাগী, ব্রাত্য রাইসু, সেলিম আল দীন, আব্দুল্লাহ আল মামুন, মামুনুর রশীদ, হুমায়ূন আহমেদ, মান্নান হীরা, মমতাজউদ্দীন আহমদ, রামেন্দ্র মজুমদার, আলী যাকের, ফাল্গুনি হামিদ, আহম্মেদ সফা, আবুল হোসেন, বাবুল বিশ্বাস, সিকান্দার আবু জাফর, প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক সহ দেশি বিদেশি খ্যাতিমান সব লেখকদের বাংলা ভাষায় লেখা নাটকের প্রায় সাড়ে তিন হাজার নাটক সমগ্র। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা চলাকালীন থেকেই বই সংগ্রহের নেশা নজরুল ইসলাম তোফার। তার সংগ্রহে রয়েছে তার প্রথম শ্রেণী থেকে শুরু করে শিক্ষাজীবনে কেনা সব বই-ই।
তবে তার নাটকের সমগ্র সংগ্রহের নেশা তৈরি হয় ১৯৯২ সালের দিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় চারুকলা বিভাগে ভর্তি হবার পরে। নাটকের গ্রন্থ সংগ্রহের বিষয়ে বলতে গিয়ে নজরুল ইসলাম তোফা বলেন, ‘২০১০ সালের দিকে আমি ধারাবাহিক নাটক ‘চোর কাব্য’তে কাজ করছি। তাই তখন শ্যুটিং এর জন্য ঢাকায় ছিলাম। সেইজন্য ‘টিভি নাটক সমগ্র’ গ্রন্থটি সংগ্রহ করার জন্য গেলাম ঢাকার নিলক্ষেতে। সেখানে গিয়ে আমাকে পড়তে হয় ভোগান্তিতে। আমার পরনে থাকা শার্ট ছিঁড়ে যায় রিকশায় বেঁধে। আমি ছিঁড়া শার্ট পরেই মার্কেটের ভিতরে ঘুরতে থাকি। নতুন শার্ট কেনার জন্য না, গ্রন্থটি কেনার জন্য।  মনটা খারাপ হলেও শার্ট কেনার জন্য কোন আগ্রহ ছিল না। কারণ শার্টের চেয়ে গ্রন্থটি আমার বেশি প্রয়োজন ছিল তখন’। আবেগ জড়িত কন্ঠে তিনি আরো বলেন,‘আর একটা বিষয় হলো সেই সময় চাইলেই হয়তো শার্ট কিনে নিতে পারতাম, তবে শার্ট কিনলে গ্রন্থটি কেনার টাকা হতো না। কারণ ঢাকা থেকে বাড়িতে ফেরার টাকা ব্যতিত পকেটে তখন ছিলো মাত্র পাঁচশো টাকার মত।’ তাঁর বাবা হঠাৎ একদিন বলে বসেন, এতো বই সংগ্রহ করছো কি হবে এতো?  উত্তরে তিনি বলেন, বই আমার অপূর্ণতাকে কাটিয়ে উঠার সহায়ক হচ্ছে, তাছাড়া তুমি তো একদিন থাকবে না। তখন আমার ছেলেকে বলবো, আমার বাবা আমাকে এই লাইব্রেরি করে দিয়েছে। তুমিও তোমার সন্তানকে  বলবে। নজরুল ইসলাম তোফার বাবা সেই সময় কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, তোমার চিন্তা চেতনার জায়গা আমি বুঝি। তারপর তাঁর বাবা বই সংগ্রহ নিয়ে কোন কথা বলেননি। এটি ছিলো তোফার বই সংগ্রহের বড় শক্তি।
গ্রন্থ সংগ্রহ করতে করতে বর্তমানে তার সংগ্রহে শুধুমাত্র নাটকের সমগ্র গ্রন্থ রয়েছে প্রায় সাড়ে তিন হাজারটি। তার সংগৃহীত বইয়ের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের খ্যাতিমান লেখকদের বাংলা ভাষায় লেখা নাট্যসমগ্র ও বাংলা অনুবাদ নাট্যসমগ্র গ্রন্থ। সেই গ্রন্থগুলো দিয়ে নিজের বাড়িতে তৈরি করেছেন একটা সংগ্রহশালা। শুধু তাই না সেই গ্রন্থগুলোকে ক্রমিক নম্বরের আওতায় এনে একটি ডায়রিতে ক্রমিক নম্বর অনুযায়ী লিপিবন্ধ করে রেখেছেন রীতিমত আনন্দ পেলাম হাতের লেখা দেখে একেবারে বিদ্যাসাগর টাইপ। আর হবেই বা না কেন? তিনি তো চারুকলার শিক্ষক। প্রয়োজনে গ্রন্থ খুঁজে পেতে  চমৎকার লেখাটি মনোযোগ আকর্ষণ করবে মনে করি।
কেন তিনি এতো নাট্যসমগ্র সংগ্রহ করেছেন ও এখনো সংগ্রহ করে যাচ্ছেন এবং সেগুলোকে সযত্নে সংরক্ষণ করেন জানতে চাইলে নজরুল ইসলাম তোফা বলেন, ‘আমি ছোট বেলা থেকেই নাটক করি আর নাটকে অভিনয় করতে ভালোবাসি। স্কুলে পড়াকালে মঞ্চ নাটকের মধ্যে দিয়ে শুরু হয় আমার নাটক বা অভিনয় করা। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবার পর নাট্যগুরু পরিচালক শিমুল সরকারের সঙ্গে থিয়েটারে যুক্ত হই। এভাবে নাটক করতে করতে একসময় টিভি নাটকে কাজের সুযোগ পাই। কিন্তু সেখানে গিয়ে কাজ করার সময় নিজের ভিতরে কিছু অপূর্ণতা আছে বলে মনে হয় আমার। সেই অপূর্ণতাকে কাটিয়ে উঠতে আর নাটক ও অভিনয় সম্পর্কে আরো বেশি জ্ঞানার্জনের লক্ষে বিভিন্ন খ্যাতিমান নাট্যকার ও লেখকদের লেখা নাট্যগ্রন্থ সংগ্রহ করে পড়তে শুরু করি। এভাবেই আমার সংগ্রহে জমা হতে থাকে একের পর এক নাট্যগ্রন্থ।
এসব নাট্যগ্রন্থ নিয়ে ভবিষ্যতে কিছু করার কোন পরিকল্পনা আছে কিনা জানতে চাইলে নজরুল ইসলাম তোফা বলেন, ‘এসব কাগজের গ্রন্থ তো বেশি দিন অক্ষত অবস্থায় সংরক্ষণ করা সম্ভব না। সে জন্য এসব মূল্যবান গ্রন্থগুলোকে অক্ষত অবস্থায় সংরক্ষণ করার জন্য আমি এগুলোকে ই-বুকে রূপান্তরিত করে ই-লাইব্রেরি (অনালাইন আর্কাইভ) তৈরির পরিকল্পনা করছি। যাতে সযত্নে নিজের সংগ্রহে রাখার পাশাপাশি গ্রন্থগুলোর দ্বারা অন্যদের জ্ঞানকে সমৃদ্ধ করার ক্ষেত্রে সহায়তা করতে পারি’।

পাঠকের মতামত: