টেকনাফ প্রতিনিধি ::
টেকনাফে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধনে গ্রাহক হয়রানি ও নানা অনিয়মের অভিযোগ ওঠেছে। সিম নিবন্ধনে রিটেইলার কতৃক গ্রাহকদের কাছ থেকে সিম প্রতি ফি আদায় এবং বাংলাদেশী নাগরিকদের জাতীয় পরিচয় পত্র ও আঙ্গুলের চাপ ব্যবহার করে জ্ঞাতে ও অজ্ঞাতে রোহিঙ্গাদের সাথে যোগসাজশে মোটা অংকের বিনিময়ে রোহিঙ্গাদের নিবন্ধিত সিম বিক্রয়েরও অভিযোগ পাওয়া যায়।
জাতীয় পর্যায়ে সারাদেশে ৩০ এপ্রিলের মধ্যে মোবাইল অপারেটর কোম্পানীগুলোকে গ্রাহকের সিম বাধ্যতামূলক বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে নিবন্ধনের সময়সীমা নির্ধারণ করে দেয়া হলে দেশের অন্যান্য স্থানের ন্যায় সীমান্ত শহর টেকনাফেও বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধনে সংশ্লিষ্ট অপারেটর মনোনীত রিটেইলারে সিম নিবন্ধনে গ্রাহকদের ভীড় বাড়তে থাকে। প্রথম দিকে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বায়োমেট্রিক সিম নিবন্ধনে গ্রাহকদের নিকট থেকে অর্থ আদায়ের অভিযোগ আসলে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী তারানা হালিম কোন প্রকার ফি আদায় না করতে নির্দেশ দেন এবং কেউ ফি আদায় করলে থানায় দেয়ারও কথা বলেন। কিন্তু সরকারের তরফ থেকে গ্রাহক হয়রানি এবং সিম নিবন্ধনে কোন প্রকার ফি আদায় না করতে কড়া নির্দেশনা থাকলেও টেকনাফের কিছু অসাধু রিটেইলার প্রকাশ্যে গ্রাহক প্রতি সর্বনি¤œ ২০ টাকা থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত আদায় করছে এমন অভিযোগ অহরহ। টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং, হ্নীলা, বাহারছড়া ও সাবরাং ইউনিয়নে খোঁজ নিয়ে এব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যায়। এমনকি অনেক দরিদ্র গ্রাহক বিনা ফিতে নিবন্ধন হবে জেনে রিটেইলারের কাছে গিয়ে নিবন্ধন শেষে টাকা না দিলে মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়ে টাকা আদায় করে না দেয়া পর্যন্ত একপ্রকার জিম্মি করে রাখা হয় বলেও জানা যায়। আবার এলাকাভিত্তিক দু’য়েক রিটেইলার সিম নিবন্ধনে কোন প্রকার ফি না নিতেও দেখা যায়।
জানা যায়, গ্রাহকদের সিম বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে নিবন্ধনের জন্য রিটেইলাররা সিম প্রতি সংশ্লিষ্ট অপারেটর হতে ১.৮০ টাকা হারে পাবে। এছাড়া বায়োমেট্রিক নিবন্ধনের জন্য প্রতি রিটেইলারকে অপারেটরের পক্ষ থেকে ট্যাবসহ আনুষাঙ্গিক প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম বিনামূল্যে অফেরযোগ্যভাবে প্রদান করা হয়েছে। এরপরও কিছু অসাধু রিটেইলার কতৃক গ্রাহকদের নিকট থেকে বিভিন্ন অংকের ফি আদায়ে অসচেতন গ্রাহকদের মাঝে সিম নিবন্ধনে অনাগ্রহ যেমন বাড়ছে তেমনি এটি সরকারের বায়োমেট্রিক পদ্ধতির সিম নিবন্ধনের নির্দেশনা বাস্তবায়নে অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া ফি আদায়ের পাশাপাশি রিটেইলারদের বিরুদ্ধে অভিযোগ হচ্ছে বাংলাদেশী নাগরিকদের জাতীয় পরিচয়পত্র ও আঙ্গুলের চাপ ব্যবহার করে তাদের জ্ঞাতে ও অজ্ঞাতে রোহিঙ্গা-রিটেইলার যোগসাজশে মোটা অংকের বিনিময়ে রোহিঙ্গাদের দেয়া হচ্ছে নিবন্ধিত সিম। সচেতন মহলের মতে, স্থানীয় পরিচয় পত্রধারীরা স্ব-ইচ্ছায় রোহিঙ্গাদের সিমে ভেরিফাই করলে সেটা অনিয়ন্ত্রিত, তবে রিটেইলার-স্থানীয় আইডি কার্ডধারী এবং রোহিঙ্গা পরস্পর যোগসাজশে ১ হাজার থেকে ক্ষেত্র বিশেষ ২০০০ টাকায় নিবন্ধিত সিম বিক্রিতে তারা উদ্বিগ্ন।
এব্যাপারে গ্রাহকের অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিতে টেকনাফ উপজেলার সাবরাং ইউনিয়নে সরেজমিন যাচাইয়ে গ্রাহকদের সাথে কথা বলে ফি আদায় সহ নানা অনিয়মের ব্যাপক অভিযোগ পাওয়া যায়। সাবরাং ইউনিয়নে যেসব রিটেইলারের বিরুদ্ধে গ্রাহকদের নিকট থেকে বায়োমেট্রিক সিম নিবন্ধনে অর্থ আদায়ের গুরতর অভিযোগ- সাবরাং বাজারের নুরুল আলম স্টোর, ইসমাইল স্টোর, সাবরাং ইউনিয়ন কমপ্লেক্স সংলগ্ন হেলাল স্টোর, শাহপরীর দ্বীপ মিস্ত্রি পাড়া বাজারের আল আমিন টেলিকম, রাস্তারমাথা বাজারের সাঈদ টেলিকম, সাদিয়া টেলিকম, ভাই ভাই টেলিকম, আতিক টেলিকম অন্যতম। গ্রাহকের কথা মতে, সাবরাং বাজারের ফজল টেলিকম, নোয়াপাড়া বাজারের খোরশেদ স্টোর, করিম স্টোর এবং শাহপরীর দ্বীপ রাস্তার মাথা বাজারের জনি টেলিকম গ্রাহকের নিকট থেকে কোন প্রকার ফি ছাড়া বায়োমেট্রিক সিম নিবন্ধন সুবিধা দিচ্ছে বলে জানা যায়।
এব্যাপারে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে মোবাইল অপারেটর রবি’র টেকনাফ থানা এরিয়া ইনচার্জ মোহাম্মদ ইউসুফ জানান,“ শুরু থেকে আমরা আমাদের রিটেইলারদের গ্রাহকের কাছ থেকে সিম নিবন্ধনে কোন প্রকার ফি না নিতে এবং হয়রানি না করতে জানিয়ে দিয়েছে এব্যাপারে নিয়মিত তাদের তাগিদ দেয়া হচ্ছে। তারপর আমরা খোঁজ নিয়ে দেখব, অভিযোগ পাওয়া গেলে কিংবা প্রমাণিত হলে অভিযুক্ত রিটেইলারের বিরুদ্ধে তড়িৎ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
স্থানীয় সচেতনমহলের মতে, সীমান্ত উপজেলা টেকনাফে মোবাইল সিমের বায়োমেট্রিক নিবন্ধনে কোন প্রকার ফি না নেয়ার সরকারী সিদ্ধান্তকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে যেসব রিটেইলার গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা আদায় করছে তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ খুবই জরুরী। তারা আরো মনে করেন, রোহিঙ্গাদের নিবন্ধিত সিম বিক্রিতে রিটেইলারদের যোগসাজশ থাকলে এবং আর্থিক লেনদেনের ঘটনার বিহীত ব্যবস্থা নেয়া দরকার।
পাঠকের মতামত: