ঢাকা,সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

টেকনাফে প্রতিনিয়ত বাড়ছে বাল্যবিবাহ

গিয়াস উদ্দিন ভুলু, টেকনাফ::::

টেকনাফ উপজেলায় তালাক, বিবাহ বিচ্ছেদ ও অবৈধ সর্ম্পকের কারণে নানান অপরাধ সংঘঠিত হচ্ছে। এর কারণ হচ্ছে, মাদকাসক্ত, বাল্য বিবাহ, বহু বিবাহ, রোহিঙ্গা নাputul biyeরীদের সাথে সম্পর্ক, অবৈধ উপার্জনসহ ইত্যাদি।

টেকনাফ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে খবর নিয়ে জানা যায়, এমন কোন পাড়া বা মহল্লা নেই যেখানে বাল্য বিবাহ, বহু বিবাহের কারণে সংসারে অশান্তি ও বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটছে না। তার পাশাপাশি মাদক সেবনকারীদের হার দিন দিন বেড়ে যাওয়ার কারণে ভাঙ্গছে ১০/২০ বছর আগের সাজানো সংসার। তথ্য সূত্রে আরো দেখা যায়, লেখাপড়া না জানা অনেক অশিক্ষিত পরিবারের ছেলেরা মরণ নেশা ইয়াবা ব্যবসার সাথে সংযুক্ত হয়ে রাতারাতি কোটি কোটি টাকার মালিক বনে অভিভাবকদের সম্মতি ছাড়ায় নিজের ইচ্ছেমত পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমার থেকে মেয়ে নিয়ে এসে বিয়ে করছে। আবার কিছু কিছু অশিক্ষিত, টাকা লোভী অভিভাবকরা তাদের কম বয়সি ছেলেরা অল্প সময়ে কোটি টাকার মালিক হওয়ায় ঝাঁকজমক ভাবে ছেলেকে বিয়ে করাচ্ছে। তাও আবার এলাকার কম বয়সী মেয়েদের সাথে। এসমস্ত বিবাহ আবার বেশ কিছুদিন যেতে না যেতেই সামান্য ঝগড়া-ঝাটি থেকে বিবাহ বিচ্ছেদ পর্যন্ত গড়ায়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গোপন সূত্রে টেকনাফ পোষ্ট অফিস থেকে জানা যায়, টেকনাফ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার বিবাহ বিচ্ছেদ সংক্রান্ত এক গাদা নোটিস আসে। বেশির ভাগ নোটিশগুলো হচ্ছে স্বামী, স্ত্রী, মেয়র, কাউন্সিলর, চেয়ারম্যান, মেম্বার ও স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গের বরাবরে আসা। ব্যাপারটি উদ্বেগজনক হলেও টেকনাফ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রতিমাসে ১০/১৫ দম্পতির বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটছে। এসমস্ত বিবাহ বিচ্ছেদের কারণ খোঁজতে গিয়ে আরো দেখা যায়, দিন দিন বাল্য বিবাহর সংখ্যা বৃদ্ধি, এক পুরুষের একাদিক বিয়ে, কম খরচে রোহিঙ্গা মেয়েকে বিয়ে করা এবং স্থানীয়রা টাকার লোভে পড়ে রোহিঙ্গাদের কাছে মেয়ে বিয়ে দেওয়া ইত্যাদি। এর মধ্যে অন্যতম কারণ হচ্ছে, নিজের স্বামী মাদকাসক্ত হয়ে যাওয়ায় ভেঙ্গে যাচ্ছে সাজানো সংসার।
গত কয়েক বছর ধরে এ উপজেলায় ১৫ থেকে ১৮ বছরের যুবক-যুবতিরা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হচ্ছে। এর মধ্যে অনেক যুবক-যুবতি স্বামী-স্ত্রীরা জানেনা সংসার কি জিনিস। অথচ তাদের মাতা-পিতারা বয়স এবং সহশীলতার ব্যাপারে কোন প্রকার চিন্তা না করে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করে দিচ্ছে। এছাড়া অনেক পরিবারের ছেলে-মেয়েরা তাদের নিজের ইচ্ছায় ফোনালাপের মাধ্যমে অভিভাবকের সম্মতি ছাড়া হলফনামা মূলে বিয়ে করছে।
টেকনাফ কাজী অফিস সূত্রে জানা যায়, প্রতিমাসে বিভিন্ন কারণে ১০/১৫টি তালাক সম্পন্ন হচ্ছে। এসমস্ত তালাকের কারণে সব চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে নি¤œ আয়ের কন্যা সন্তানের পরিবার ও তাদের সন্তানরা। আবার কিছু কিছু এলাকায় এমনও ব্যক্তি আছে যার ৩/৪টি বউ রয়েছে। এসমস্ত অসাধু ও নারী লোভী ব্যক্তিরা বিয়ে করতে দেরি নেই, আবার তালাক দিতেও দেরি নেই। ইদানিং টেকনাফ উপজেলায় এমন কিছু বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটছে, তাও নজরে পড়ার মত। তা হচ্ছে, ইয়াবা নিয়ে ধরা পড়ে র্দীঘদিন কারাগারে থাকার কারণে তাদের স্ত্রীরা কম বয়সী ছেলেদের সাথে অবৈধ সম্পর্ক স্থাপন করে স্বামীকে তালাক দিয়ে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করছে। সবকিছু মিলিয়ে এই উপজেলায় প্রতিমাসে ১০/১৫ দম্পতির বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটছে। এব্যাপারে সুশীল সমাজ ও স্থানীয় বয়োজ্যেষ্টদের অভিমত উঠতি বয়সী যুবক-যুবতীরা বাল্য বিবাহে আবদ্ধ হওয়ার মূল কারণ হচ্ছে, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা সঠিক বয়স নিরুপন না করে জন্ম নিবন্ধন ও ভোটার আইডি করিয়ে দেয়। এতে বাল্য বিবাহ সম্পন্ন করতে কোন বাধা থাকে না। আর যেসমস্ত উঠতি বয়সী যুবক-যুবতীদের জন্ম নিবন্ধন ও ভোটার আইডি নেই তারা কোর্টে গিয়ে ভুয়া আইডি এবং জন্ম নিবন্ধন প্রদর্শন করে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হচ্ছে।

এসমস্ত বাল্য বিবাহ, বহু বিবাহ ও বিবাহ বিচ্ছেদের ব্যাপারে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে টেকনাফ উপজেলা প্রশাসন কঠোর কর্মসূচী হাতে নিয়েছে। গত ৩১ আগস্ট টেকনাফ উপজেলা পরিষদের হলরুমে উপজেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের আয়োজনে এডভান্সমেন্ট এন্ড প্রমোটিং ওমেন্স রাইটস প্রকল্পের আওতায় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় উপজেলা মহিলা বিষয়ক অফিসার মোঃ আলমগীর কবিরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ শফিউল আলম এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার নুরুল আবছার, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সুব্রত কুমার ধর। উক্ত সভায় বক্তারা বাল্য বিবাহ, বহু বিবাহ ও বিবাহ বিচ্ছেদসহ সংগঠিত অপরাধগুলো প্রতিরোধ করতে টেকনাফ উপজেলার কাজী ও ইমামগণদের সচেতন হওয়ার আহবান জানান।

পাঠকের মতামত: