টেকনাফ প্রতিনিধি ::
টেকনাফে পুলিশি হয়রানির বিস্তর অভিযোগ মিলেছে। মাদক ব্যবসায়ীদের পক্ষ নিয়ে পুলিশ প্রতিবাদকারীদের হয়রানি এবং থানায় ধরে নিয়ে ‘ইয়াবা কারবারি’ বলে প্রমাণের চেষ্টা করছে। নির্যাতনের মাধ্যমে আদায় করা হচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকা। টাকা দিতে ব্যর্থ হলে আদালতে চালান করা হচ্ছে মাদক মামলায়। এ পরিস্থিতিতে টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল বশর গতকাল বৃহস্পতিবার লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন কক্সবাজারের পুলিশ সুপারের কাছে। সুনির্দিষ্ট ঘটনা উল্লেখ করে তিনি পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যাপক চাঁদাবাজি ও গ্রেপ্তার বাণিজ্যের অভিযোগ করেছেন।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার ড. এ কে এম ইকবাল হোসেন বলেন, ‘টেকনাফ থানা পুলিশের কিছু কর্মকর্তার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্তের জন্য অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে। ’
স্থানীয়রা জানায়, টেকনাফ থানা পুলিশ ইয়াবা কারবারিদের সঙ্গে সখ্য রাখতে বিরোধীদেরই শায়েস্তা করছে। ইয়াবা কারাবারিদের ধরতে যত অভিযান হয়, তার চেয়েও বেশি অভিযান চলে ইয়াবাবিরোধীদের ঘরে। দাবীকৃত টাকা না দিলে তাদেরই ইয়াবা মামলায় চালান করা হয় আদালতে। এ রকম অন্তত ২৫টি ঘটনায় সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে একজন এসআইয়ের বিরুদ্ধে। দেশের ইয়াবা পাচারের ‘গেটওয়ে’ হিসেবে পরিচিত টেকনাফ সীমান্তে বর্তমানে সবচেয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে পুলিশের হয়রানি নিয়ে। আর এ হয়রানির বেশির ভাগ শিকার তৃণমূল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।
সূত্র জানায়, টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং ফাঁড়ির পুলিশ বুধবার বিকেলে হাফেজ আহমদ নামে একজন মাছ ব্যবসায়ীকে ধরে নিয়ে যায়। হোয়াইক্যং ইউনিয়নের বাসিন্দা হাফেজ আহমদ ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। ফাঁড়ির এসআই মুফিজুল ইসলাম তাঁকে ছেড়ে দিতে ১০ লাখ টাকা দাবি করেন বলে অভিযোগ মিলেছে। রাতে দেড় লাখ টাকা দিয়ে হাফেজ মুক্তি পান বলে স্বজনরা জানিয়েছে।
বুধবার রাতেই ফেসবুক স্ট্যাটাসে আওয়ামী লীগ নেতা নুরুল বশর লেখেন, ‘আমার জানা মতে তাঁর (হাফেজ আহমদ) বিরুদ্ধে কোনো ধরনের মামলা-মোকদ্দমা বা অভিযোগ পর্যন্ত নেই। আইসি (ফাঁড়ির ইনচার্জ) সাহেব ওপরের আদেশে দেড় লাখ টাকা নিয়ে তাঁকে ছেড়ে দেন। টেকনাফ থানা পুলিশ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী নিধনে কৌশলে কারো এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে। ’
পুলিশের উখিয়া-টেকনাফ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার চাইলাউ মারমা এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘হোয়াইক্যং পুলিশ ফাঁড়ির ঘটনাটির তদন্ত ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। ’
টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল বশর গতকাল পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ দাখিল করেছেন। তাতে টেকনাফ পুলিশের দুজন উপপরিদর্শকের বিরুদ্ধে ব্যাপক চাঁদাবাজি ও গ্রেপ্তার বাণিজ্যের কথা উল্লেখ রয়েছে। তিনি জানান, টেকনাফ থানার কয়েকজন কর্মকর্তা বিভিন্ন অপকর্ম ছাড়াও ইয়াবা কারবারিদের সঙ্গেই সখ্য গড়ে টাকা আদায় করছেন। উপরন্তু ইয়াবা কারবারিদের পরামর্শে ইয়াবার বিরুদ্ধে সোচ্চার আওয়ামী লীগকর্মীদের বাছাই করে অত্যাচার-নির্যাতনসহ গণহারে হয়রানি করছেন।
টেকনাফ থানার এসআই মো. একরামুজ্জামান গত ১৯ জুন টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ফরিদ আহমদ রমজানকে ঘর থেকে থানায় ধরে নিয়ে যান। পরে তাঁকে ইয়াবা মামলায় জড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে নগদ এক লাখ টাকা নিয়ে ছেড়ে দেন। পুুলিশের এই এসআই ২২ জুন পবিত্র শবেকদরের রাতে টেকনাফের গুদারবিলের দুটি ঘরে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর করেন। যাতে গণরোষেরও সৃষ্টি হয়। ৫ জুলাই হোয়াইক্যং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি চিংড়ি ব্যবসায়ী শাহ আলমকে ঘর থেকে ধরে নিয়ে ৬০ হাজার টাকা আদায় করেন। থানায় ধরে আনার পর টাকা না দেওয়ায় কমপক্ষে ২৫ জন নিরীহ ব্যক্তির বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মামলা দায়েরের অভিযোগ উঠেছে। গত ১৭ জুন টেকনাফের হ্নীলা স্টেশনের টিনের দোকানি আবু তাহেরকে ধরে নিয়ে ইয়াবা মামলায় জড়ানোর ভয় দেখিয়ে দুই লাখ ২০ হাজার টাকা আদায় করেন আরেক এসআই আবদুর রহিম। ২০ জুন তারিখে তিনি টেকনাফের পূর্ব পানখালী গ্রামের এনজিও কর্মী মোহাম্মদ কামালকে ধরে নিয়ে তিন লাখ টাকা আদায় করেন।
এসব বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে অভিযুক্ত এসআই মো. একরামুজ্জামান বলেন, ‘ঘটনা যা হওয়ার হয়ে গেছে। আসলে এগুলো কোনো ঘটনাই নয়। তবে আমি অনুমতি পেলে আপনার (প্রতিবেদক) সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করব। ’ অভিযুক্ত এসআই আবদুর রহিমের মোবাইল নম্বরটি বন্ধ থাকায় তাঁর বক্তব্য জানা যায়নি।
টেকনাফ থানার ওসি মো. মাঈনুদ্দিন খান জানান, থানার অফিসারদের নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করা হচ্ছে।
পাঠকের মতামত: