ঢাকা,রোববার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪

জুমার নামাজের বাংলা বয়ান হোক গণকল্যাণমুখী

অনলাইন ডেস্ক :: জুমার নামাজ ইসলামের অন্যতম একটি নামাজ। (জুমু’আহ) শব্দটি আরবী । এর অর্থ একত্রিত হওয়া, সম্মিলিত হওয়া, কাতারবদ্ধ হওয়া। সপ্তাহের একটি নির্দিষ্ট দিন শুক্রবারে প্রাপ্ত বয়স্ক মু’মিন-মুসলমান একটি নির্দিষ্ট সময়ে একই স্থানে একত্রিত হয়ে জামা’আতের সাথে সে দিনের যুহরের নামাজের পরিবর্তে এই নামাজ ফরযরূপে আদায় করে।

জুমার নামাজ উপলক্ষ্যে এক হাদিসে হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি উত্তমরূপে অজু করে জুমার নামাজে হাজির হবে এবং মনোযোগের সঙ্গে খুতবা শুনবে ও চুপ থাকবে, এই জুমা থেকে অন্য জুমা পর্যন্ত তার সব গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে।’ -সহিহ মুসলিম।

হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) এবং খলিফারা প্রতি শুক্রবারে জুমার নামাজে ধর্মীয় বিষয়সহ সমাজের বিদ্যমান পরিস্থিতির আলোকে প্রয়োজনীয় আদেশ-উপদেশ সংবলিত খুতবা প্রদান করতেন মুসল্লিদের উদ্দেশে, যাতে মুসল্লিরা জ্ঞানলাভ করে তদনুযায়ী আমল করতে পারেন। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর রীতি ও পদ্ধতি অনুসরণে এবং তার খুতবা দানের অভীষ্ট লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সমুন্নত রাখতে পৃথিবীব্যাপী মসজিদগুলোতে খুতবা দেয়া হয়। এটাই খুতবা দানের প্রকৃত লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।

খুতবা যেহেতু আরবি ভাষায় দেয়া হয়, আর সেটা বাংলা ভাষাভাষী মুসল্লিদের বুঝতে অসুবিধা হয়, তাই খতিবরা খুতবার বিষয়বস্তুকে খুতবার আগে বাংলায় বলে দেন। খুতবাপূর্ব এই বয়ান বা ভাষণ এখন অনেকটাই জুমার নামাজের অনুষঙ্গ হয়ে গেছে। এছাড়া জুমার নামাজের নির্ধারিত সময়ের এক দেড় ঘণ্টা আগে মুসল্লিরা মসজিদে একত্র হন। তখন অনেকেই অপ্রয়োজনীয় গল্পগুজব করে সময় কাটান, সে কারণে খতিব সাহেব উপস্থিত মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে কোরআন ও হাদিস থেকে কিছু আলোচনা করেন। যাতে করে সময়টা কাজে লাগে। এভাবে জুমাপূর্ব বাংলা ওয়াজের প্রচলন শুরু হয়েছে। এটা বাংলা খুতবা নয়, কিংবা বিদয়াত কোনো আমল নয়।

বাংলাদেশে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় তিন লাখ মসজিদ রয়েছে। এসব মসজিদের প্রত্যেকটিতে জুমাপূর্ব বয়ান হয়। জুমাপূর্ব এসব বয়ান উপস্থিত মুসল্লিদের জন্য দ্বীন ও ইসলাম শিক্ষার অন্যতম একটি মাধ্যম। কারণ জুমার নামাজের আগে ইমাম-খতিবরা কমপক্ষে ১৫ মিনিট (অনেকেই বেশিও সময় নেন) করে বাংলায় খুতবার বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা করেন। সাধারণ মানুষকে ইসলামমুখী করতে, সচেতনতা বৃদ্ধিতে, ইসলামকে সুন্দরভাবে উপস্থাপনের ক্ষেত্রে এই মাধ্যমের চেয়ে শক্তিশালী কোনো মাধ্যম আছে বলে মনে করি না।

পবিত্র কোরআনের বহু জায়গায় আল্লাহতায়ালা তার সৃষ্টি বৈচিত্র্য অনুধাবন করার জন্য মানুষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। মানুষকে তিনি বিভিন্ন জাত, গোত্র ও বর্ণে বিভক্ত করেছেন পরিচিতির জন্য। এই বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা এবং ঐক্য চেতনার পরিপন্থী সব ধরনের বিভেদাত্মক পথপন্থা পরিত্যাজ্য। বিভক্তি মুসলিম মিল্লাতের কাম্য নয়, ঐক্যই তার চরম লক্ষ্য। এ বিষয়গুলোকে সামনে রেখে দেশব্যাপী ইমাম-খতিবরা যদি একটি সম্মিলিত পরিকল্পনার মাধ্যমে জুমাপূর্ব বয়ানগুলো রাখেন তাহলে মানুষ এর দ্বারা বেশি উপকৃত হবে।

তাই খুতবাপূর্ব বয়ানকে সমসাময়িক বিষয় দিয়ে সাজিয়ে সংক্ষিপ্ত আকারে মুসল্লিদের সামনে পেশ করা উচিত যাতে একই বিষয় মুসল্লিদের বারবার শুনতে না হয়। প্রত্যেক সপ্তাহে নিত্যনতুন বিষয়ে মানুষকে উপদেশ দেওয়া, জানানো ও মানুষের জীবনঘনিষ্ঠ সমস্যার সমাধান দেওয়ার চেষ্টা করা খুতবার উদ্দেশ্য। শুধু ফজিলতের কথা না বলে সামাজিক বিভিন্ন অনাচার ও সমস্যা নিয়েও কথা বলা উচিত।

পাঠকের মতামত: