নিউইয়র্ক টাইম্সের একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশের এই হত্যাকাণ্ড দ্বারা বোঝা যায়, আইএসের নজর এখন অন্যদিকে পড়েছে। তারা এখন মধ্যপ্রাচ্য থেকে সরে এসেছে এবং নিজেদের শক্তি অন্যান্য দেশে পরখ করছে।
রাজধানী ঢাকার গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারি নামের রেস্তোরাঁয় জঙ্গিরা শুক্রবার রাতের বিভিন্ন সময় তিন বাংলাদেশিসহ ২০ জন জিম্মিকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে হত্যা করে। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ১৭ জন বিদেশি নাগরিক। এর মধ্যে জাপান সরকার তাদের সাত নাগরিকের মৃত্যুর কথা নিশ্চিত করেছে। ইতালির নাগরিক নিহত হয়েছেন নয়জন। ভারতীয় নাগরিক নিহত হয়েছেন একজন। শুক্রবার রাতে অভিযান চালাতে গিয়ে মারা গেছেন পুলিশের দুই কর্মকর্তা। আর গতকাল শনিবার সকালে অভিযানে মারা গেছে ছয় সন্ত্রাসী। গ্রেপ্তার হয়েছে একজন। অভিযানে একজন জাপানি, দুজন শ্রীলঙ্কানসহ ১৩ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। এই হত্যার দায় প্রথম থেকে আইএস দাবি করে আসছে।
গুলশানের হলি আরটিসান বেকারিতে হামলার রাতে একজন বাবুর্চি ওয়াশরুমে ছিলেন। সন্ত্রাসীরা হোটেলে ঢুকে প্রথমেই বাঙ্গালীদের বের হয়ে যেতে বলে। যখন বাবুর্চি সুমির বরাই এবং আরও আটজন মানুষ বাথরুম থেকে বের হয় তখন দুইজন কিশোর ছেলেকে দেখতে পায়।
তারা জিন্স ও টি-শার্ট পরিধান করেছিল। তারা সুমিরকে বলতে লাগল, ‘তোমাদের ভয় পাবার কোন কারণ নেই। আমরা শুধু বিদেশীদের হত্যা করব।’ এরপর মেঝেতে তাকাতেই দেখা যায়, ৬,৭ টা লাশ পরে আছে। তাদের প্রথমে গুলি করা হয়েছিল এবং পরে জবাই করা হয়।
বন্দুকধারীরা তাদের হত্যাকাণ্ড খুব শীঘ্রই সামাজিক মাধ্যমে প্রচারের জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়ে। প্রথমে রেস্তোরাঁর কর্মচারীদের ইন্টারনেট অন করতে বলা হয়, এরপর তারা সেখানে থাকা মানুষের মোবাইল নিয়ে লাশের ছবি তুলে ইন্টারনেটে ছেড়ে দেয়।
৯০ ভাগ মুসলমানের দেশ বাংলাদেশ। ইসলামী জঙ্গি সংঘটনে ২৫ বছরের কম বয়সী মুসলিমদের টার্গেট করা হয়। ইসলামিক দেশে এই সকল জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটে। ইরাক ও সিরিয়াতে ঘটে যাওয়া নিত্যদিনের হামলা এর প্রমাণ। পশ্চিমা গোয়েন্দা কর্মকর্তারা আইএসের বিভিন্ন মিশনের উপর নজরদারি করে থাকে।
বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব রিসার্চ ফেলোর পিস এ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজের গবেষক ডঃ শাফকাত মুনির বলেন, ‘সামগ্রিক হুমকির উপর আমাদের গুরুতর পদক্ষেপ নেয়া উচিৎ। আমাদের সামনে বিভিন্ন ধরণের সতর্কবার্তা, লক্ষণ এবং বিভিন্ন চিহ্ন ছিল। কিন্তু আমার মনে হয় না, কেউ কল্পনাও করেছিল এরকম কিছু একটা হতে চলেছে।’
সারারাত সবাইকে জিম্মি রেখে বিদেশীদের হত্যা করার পর সকালে এক পরিবারকে বাহিরে যেতে দেয় জঙ্গিরা। বরাই আরও জানান, তারা সারারাত টয়লেটে পালিয়ে ছিলেন। তিনি তার ভাইয়ের সাথে ফোনে যোগাযোগ করেন। টয়লেট ভেঙ্গে তাদের বের করার জন্যও অনুরোধ করেন তিনি। কিন্তু তা সম্ভব হয় নি।
বরাই আরও জানান, জঙ্গিরা নিজেদের মৃত্যু নিশ্চিত জেনে এই হামলা চালায়। তাদের মাঝে একজন বলছিলেন, ‘তোমরা দেখেছ আমরা এখানে কি করেছি।’
সকাল ৭ টা ৩০ মিনিটে জঙ্গিরা লাশগুলোকে উদ্দেশ্য করে বলে, ‘আপনাদের সাথে যা হয়েছে, এখন তা আমাদের সাথেও হবে। আমরা চলে যাচ্ছি। আপনাদের সাথে স্বর্গে দেখা হবে।’
তিনি আরও জানান, তারা যখন রেস্তোরাঁর গেট দিয়ে পুলিশের সামনে যাবার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল ঠিক তখনি সেনাবাহিনী জঙ্গিদের উপর হামলা শুরু করে।
পাঠকের মতামত: