এম.জিয়াবুল হক, চকরিয়া ::
চকরিয়া উপজেলা সাব রেজিস্ট্রার অফিসে এবার একটি সংঘবদ্ধ জালিয়াত চক্রের সন্ধান মেলেছে। মারা যাওয়া দুই ব্যক্তিকে দাতা সাজিয়ে আসল নকল দুইটি দলিলের নম্বর হুবুহু রেখে জমি রেজিস্ট্রি নেয়ার ঘটনা অনুসন্ধান করতে গিয়ে জালিয়াত চক্রের নজিরবিহীন অপর্কম ধরা পড়েছে। শুধু জমি দাতা নয়, ৬বছর আগে মারা যাওয়া একজন দলিল লেখককে জমি রেজিস্ট্রি কাজে ব্যবহার করেছে তাঁরা। এছাড়াও দলিলটি সম্পাদনের ক্ষেত্রে তৎকালীন সাব রেজিস্ট্রার মোহছেন মিয়ার স্বাক্ষরও জালিয়াতি করেছে অভিযুক্ত সংঘবদ্ধ চক্রটি। ঘটনাটি ঘটেছে চকরিয়া পৌরসভার বাটাখালী এলাকায়। কোটি টাকা দামের জমি দখলে নিতে এই ধরণের জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছেন চক্রের মুলহোতা হাবিবুন নবী। তিনি চকরিয়া পৌরসভার ৩নম্বর ওয়ার্ডের পশ্চিম বাটাখালী গ্রামের মৌলভী মোহাম্মদ ইয়াকুবের ছেলে।
জালিয়াতির এ ঘটনায় সম্প্রতি সময়ে চকরিয়া পৌরসভার এক সচেতন নাগরিক তদন্ত পুর্বক অভিযুক্ত জালিয়াত চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনে দূর্নীতি দমন কমিশন চট্টগ্রাম অঞ্চল-২ এর উপ-পরিচালকের কার্যালয়ে একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন।
অভিযোগটিতে হাবিবুন নবী ছাড়াও সহযোগি হিসেবে আরো সাতজনকে বিবাদি করা হয়েছে। তাঁর হলেন তৎকালীন চকরিয়া উপজেলা সাব রেজিস্ট্রার মো.মোহসেন মিয়া, চকরিয়া পুর্ব নিজপানখালী গ্রামের মরহুম জহির উল্লাহ মাস্টারের ছেলে দলিল লেখক জুহুরুল ইসলাম, ভাঙ্গারমুখ এলাকার আবুল কাসেমের ছেলে কম্পিউটার অপারেটর ছাব্বির আহমদ, বাটাখালী এলাকার আবুল খায়ের এর ছেলে মোহাম্মদ হোসেন, খোন্দকারপাড়া গ্রামের মৃত মোহাম্মদ কালুর ছেলে মনুর আলম, বাটাখালী এলাকার মৃত মকবুল আহমদের ছেলে কামাল হোসেন ও পশ্চিম বাটাখালী এলাকার মনছুর আলমের ছেলে মো.রিদুয়ান।
জালিয়াতির মাধ্যমে সম্পাদিত ৩৬৫৫ নম্বর দলিলটির লেখক সনাক্ত করতে চকরিয়া উপজেলা সাব রেজিস্ট্রার অফিসের দলিল লেখক সমিতির সভাপতি সাইফুল আজমের সঙ্গে যোগাাযোগ করা হয়। তিনি বলেন, দলিলটিতে লেখক হিসেবে যাকে দেখানো হয়েছে তিনি আমার বাবা। তাঁর প্রকৃত নাম জহুরুল হক। সেখানে জালিয়াত চক্র লিখেছেন, জুহুরুল ইসলাম। অপরদিকে আমার দাদার প্রকৃত নাম মরহুম রহিম উল্লাহ মাস্টার হলেও জালিয়াতির দলিলে লেখা হয়েছে মরহুম জহির উল্লাহ মাস্টার।
তিনি দাবি করেন, আমার বাবা ২০০১ সালে মারা গেছেন। অথচ মারা যাওয়ার ৬বছর পর ২০০৭ সালের ৭ জুলাই সম্পাদিত বানোয়াট দলিলটিতে জালিয়াত চক্রটি দলিল লেখক হিসেবে আমার বাবার নামটি ব্যবহার করেছে। মুলত এসব ঘটনা জালিয়াত চক্রের পরিকল্পিত অপর্কম।
২০০৭ সালের ৭ জুলাই চকরিয়া উপজেলা সাব রেজিস্ট্রার অফিসে সম্পাদিত জালিয়াতির দলিলে জমির ক্রেতা চকরিয়া পৌরসভার পশ্চিম বাটাখালী গ্রামের মৌলভী মোহাম্মদ ইয়াকুবের ছেলে হাবিবুন নবী, দাতা দেখানো হয়েছে একই এলাকার মৃত আবুল খাইর এর ছেলে মোহাম্মদ ইউনুছ ও মেয়ে হাবিবা খাতুনকে। জমি সনাক্ত করা হয়েছে চকরিয়া পৌরসভার বাটাখালী মৌজার বিএস ৭৪ নম্বর খতিয়ানের ১৭১, ১৯৩, ২১০, ৪৬৫, ৪৬৬ ও ৪৭০ দাগের আন্দর আপোষ চিহিৃত মতে বিএস ১৭১, ১৯৩, ২১০ দাগের মোয়াজি ১৫শতক জমি।
২০০৭ সালের ৭ জুলাই একই তারিখে চকরিয়া উপজেলা সাব রেজিস্ট্রার অফিসে জমির প্রকৃত সম্পাদিত দলিলের (নং ৩৬৫৫) বিপরীতে (যাহা উপজেলা সাব রেজিস্ট্রার অফিসের বালাম বহিতে রক্ষিত আছে) প্রকৃত জমির ক্রেতা লেখা হয়েছে আবদুল মোনাফ, দাতা হিসেবে আছেন জাহান আরা বেগম। জমি সনাক্ত আছে উপজেলার লক্ষ্যারচর মৌজার বিএস ৩২৫৯ নম্বর খতিয়ানের বিএস ১১, ১১৬ ও ১৬১ দাগের চিহিৃত মতে ১১৬ ও ১৬১ দাগের ১৫শতক জমি।
দূর্নীতি দমন কমিশনে দায়ের করা অভিযোগটিতে দাবি করা হয়েছে, জমির ক্রেতা হিসেবে হাবিবুন নবীর নামে ২০০৭ সালের ৭ জুলাই সম্পাদিত জালিয়াতির দলিলে জমির দাতা হিসেবে মোহাম্মদ ইউনুছ ও হাবিবা খাতুনকে দেখানো হলেও রেজিস্ট্রি সম্পাদনের কয়েকবছর আগে তাঁরা মারা গেছেন।
অপরদিকে জালিয়াতির মাধ্যমে জমি রেজিস্ট্রি সম্পাদনের প্রায় ৫বছর পর ২০১২ সালের ৮ এপ্রিল তারিখে উল্লেখিত জমির বিপরীতে উপজেলা ভুমি অফিস থেকে একটি নামজারী জমাভাগ খতিয়ানও (নং ৫২৯) সৃজন করে নিয়েছেন অভিযুক্ত হাবিবুন নবী।
এদিকে জালিয়াতির ঘটনার অভিযোগের ব্যাপারে জানতে গতকাল অভিযুক্ত হাবিবুন নবীর সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্ঠা করা হয়। তবে তাঁর মুঠোফোনের সংযোগ লাইন বন্ধ থাকায় বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
বিষয়টি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চকরিয়া উপজেলা সাব রেজিস্ট্রার (চলতি দায়িত্ব) মো.রিয়াজুল ইসলাম বলেন, ২০০৭ সালে সম্পাদিত দলিলে এই ধরণের জালিয়াতির ঘটনা আমর জানা নেই। কারণ আমি সবেমাত্র চকরিয়া উপজেলা সাব রেজিস্ট্রার হিসেবে যোগদান করেছি। তবে এ ধরণের জালিয়াতির ঘটনায় আমার অফিসের কোন কর্মকর্তা-কর্মচারী জড়িত আছে প্রমাণ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেব। প্রয়োজনে বিষয়টি উর্ধ্বতন প্রশাসনকে জানাবো। ##
পাঠকের মতামত: