নিজস্ব প্রতিবেদক :: আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে জোরপূর্বক জায়গা দখল, মারধরসহ নানা অভিযোগের মামলায় গতকাল রবিবার গ্রেপ্তারী পরোয়ানা জারি করা হয় চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন চৌধুরীর বিরুদ্ধে।
এর একদিন পর আজ সোমবার সকালে উপজেলা জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালত আদালতে আত্মসমর্পণ করে আইনজীবীর মাধ্যমে জামিনের আবেদন জানালে শুনানী শেষে তা মঞ্জুর করেন আদালতের বিচারক মো. জাহিদ হোসাইন।
বাদীপক্ষের মামলার কৌসুলী অ্যাডভোকেট মো. মঈন উদ্দিন নিশ্চিত করেছেন গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী আজ সোমবার সকালে আদালতে আত্মসমর্পণ করলে শুনানী শেষে জামিন মঞ্জুর করার বিষয়টি।
আদালত সূত্র জানায়- আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে জোরপূর্বক দিগরপানখালী মৌজার এক একর ১০ শতাংশ জায়গা জায়গা দখল, গাছপালা কেটে ফেলা ও স্থাপনা নির্মাণের অভিযোগে ভুক্তভোগী দুই ভাই আবুল হাসেম ও মো. জকরিয়ার দায়েরকৃত মামলায় (সিআর-১২৩৬/১৯) গিয়াসের বিরুদ্ধে এই পরোয়ানা জারি করেন আদালত।
সূত্র আরো জানায়-এর আগের ধার্য্য তারিখ ২০২২ সালের ১৩ নভেম্বর মামলাটির শুনানী হয়। এ সময় আদালত চলতি মাসের ২৯ তারিখ (গতকাল রবিবার) গিয়াস উদ্দিন চৌধুরীকে সশরীরে হাজির হওয়ার জন্য সমন জারি করেন। কিন্তু তিঁনি হাজির না হওয়ায় গ্রেপ্তারী পরোয়ানা জারি করেন আদালতের বিচারক মো. জাহিদ হোসাইন।
বাদীপক্ষের কৌসুলী উপজেলা জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতের আইনজীবী মো. মঈন উদ্দিন জানান- আবুল হাসেম ও জকরিয়ার ক্রয়কৃত এক একর ১০ শতাংশ জায়গা জোরপূর্বক দখলের চেষ্টা চালান গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী। এনিয়ে মালিকপক্ষ ২য় যুগ্ম জেলা জজ আদালত, কক্সবাজার-এ গিয়াসের বিরুদ্ধে মামলা করলে আদালত উকিল কমিশন নিয়োগ দেন। সরজমিন কমিশনের প্রতিবেদন পাওয়ার পর আদালত গিয়াসের বিরুদ্ধে স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। এর পরও গিয়াস উদ্দিন ক্ষমতার জোরে সেই জায়গা দখলে নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষে বাজার শেড নির্মাণের নামে দোকানঘর নির্মাণ শুরু করেন।
এনিয়ে মালিকপক্ষ ফের একই আদালতের দ্বারস্থ হন এবং আদালত অবমাননার অভিযোগ দাখিল করলে অবমাননার মামলা গিয়াসের বিরুদ্ধে চলমান থাকবে বলে আদেশ দেন। তখন গিয়াস ওই আদেশের বিরুদ্ধে আপীল করেন জেলা জজ আদালতে। সেখানে দাবি করেন জায়গাটি খাস। সেই জায়গায় ইউনিয়ন পরিষদের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছেন।
আইনজীবী মঈন উদ্দিন আরো জানান- এসব কিছুর পরও গিয়াস প্রভাব খাটিয়ে জায়গায় স্থায়ী স্থাপনা নির্মাণকাজ শুরু করলে সেখানে বাঁধা দিতে যান মালিকপক্ষ। এ সময় জায়গার মালিক আবুল হাসেম ও জকরিয়াকে মারধর করেন এবং তাদের কাছে ১৫ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করেন গিয়াস।
এনিয়ে ভুক্তভোগী দুই ভাই গিয়াসের বিরুদ্ধে চকরিয়া আদালতে মামলা করেন। আদালতের নির্দেশে দুটি তদন্ত সংস্থা পিবিআই ও সিআইডি জায়গা দখলের অভিযোগ সত্য মর্মে প্রতিবেদন দাখিল করেন। তবে কৌশলে গিয়াসকে বাদ দেওয়া হয় প্রতিবেদনে। এর পর মালিকপক্ষ নারাজি দিলে ফের তদন্তের দায়িত্ব পান চকরিয়া সার্কেলের এএসপি। ঘটনা সত্য বলে এএসপি আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করলেও গিয়াসকে দায় থেকে অব্যাহতি দেন।
কৌসুলী মঈন উদ্দিন বলেন, ‘তবে ২০২২ সালের ১৩ নভেম্বর মামলাটির শুনানীকালে চকরিয়া আদালতকে স্বাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে বুঝাতে সক্ষম হয়েছি যে, গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী এই জায়গা জোরপূর্বক দখলে নিয়ে সেখানে স্থাপনা নির্মাণ করছেন। যা জেলা জজ আদালতে করা আপীল মামলায় লিখিতভাবে অবহিত করেন গিয়াস নিজেই। সেই বিষয়টি চকরিয়া আদালতের বিজ্ঞ বিচারক মো. জাহিদ হোসাইন আমলে নিয়ে গিয়াসকে আদালতে সশরীরে হাজির হওয়ার জন্য সমন জারি করেন। কিন্তু গতকাল হাজির না হওয়ায় গিয়াসের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারী পরোয়ানা জারি করেন আদালত।’
পাঠকের মতামত: