ঢাকা,শনিবার, ২ নভেম্বর ২০২৪

চকরিয়ায় ২৭ হাজার গরীব ও মেধাবী শিক্ষার্থীর মাঝে টিফিনবক্স শিক্ষা উপকরণ সামগ্রী বিতরণ

বার্তা পরিবেশক ::
শিক্ষাখাতে অনগ্রসর জনপদ চকরিয়া উপজেলাকে নিরক্ষরতার অভিশাপমুক্ত করার অভিপ্রায়ে ২০১৪ সালে সর্বপ্রথম চকরিয়া উপজেলা প্রশাসনের সার্বিক সহযোগিতায় প্রবর্তন করা হয় উপজেলা পরিষদ মেধাবৃত্তি পরীক্ষা। স্থানীয় সংসদ সদস্য আলহাজ জাফর আলমের অনুপ্রেরণায় তৎকালীন চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাহেদুল ইসলাম শিক্ষাখাতে আলোর দিশারী জাগাতে এই কর্মসুচি গ্রহন করেন। সেই থেকে উপজেলা পরিষদ মেধাবৃত্তি পরীক্ষার অগ্রযাত্রা অব্যাহত রয়েছে।
উপজেলা পরিষদ মেধাবৃত্তি পরীক্ষার প্রবক্তা শাহেদুল ইসলাম ইতোমধ্যে চকরিয়া থেকে বদলী হলেও তাঁর দেখানো পথে শিক্ষার অগ্রযাত্রাকে এগিয়ে নিতে হাল ধরেছেন বর্তমান চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুরুদ্দিন মুহাম্মদ শিবলী নোমান। তিনিও ইতোমধ্যে ২০১৮ এবং ২০১৯ সালের উপজেলা পরিষদ মেধাবৃত্তি পরীক্ষার কার্যক্রম সুচারুভাবে সম্পন্ন করেছেন। প্রাথমিক, মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগ এবং মাদরাসা বিভাগের অধীনে উপজেলার অন্তত শতাধিক প্রতিষ্ঠানের মেধাবী শিক্ষার্থীরা প্রতিবছর মেধাবৃত্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহন করেন। এরপর ফলাফল ঘোষনা শেষে মেধা তালিকায় উর্ত্তীণ শিক্ষার্থীদের মাঝে পুরুস্কার তুলে দেন চকরিয়া উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা পরিষদ।
এরই অংশহিসেবে গতকাল শুক্রবার (১০ মে) সকালে আনুষ্ঠানিকভাবে ২০১৮ সালের চকরিয়া উপজেলা পরিষদ মেধাবৃত্তি পরীক্ষার পুরুস্কার বিতরণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। একই সঙ্গে উপজেলার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক এবং মাদরাসা মিলিয়ে অন্তত তিনশতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রায় ২৭ হাজার কোমলমতি শিক্ষার্থীর মাঝে মিড ডে মিল কর্মসুচির আওতায় টিফিনবক্স ও শিক্ষা উপকরণ বিতরণ উদ্ভোধন করা হয়েছে।
উপজেলা পরিষদের মোহনা মিলনায়তনে উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে অনুষ্ঠানে কর্মসুচিটি আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছেন কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো.কামাল হোসেন।
চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নূরুদ্দীন মুহাম্মদ শিবলী নোমানের সভাপতিত্বে অনুষ্টানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন- চকরিয়া-পেকুয়া (কক্সবাজার-১) আসনের সংসদ সদস্য ও চকরিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আলহাজ্ব জাফর আলম।
চকরিয়া উপজেলা সহকারি শিক্ষা কর্মকর্তা মো.আনোয়ারুল কাদের এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন- চকরিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি আলহাজ্ব ফজলুল করিম সাঈদী, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মো.আমিন আল পারভেজ।
বিশেষ অতিথির আরো বক্তব্য রাখেন চকরিয়া সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ একেএম গিয়াস উদ্দিন, চকরিয়া কোরক বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক মো.নুরুল আখের, চকরিয়া মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তছলিম উদ্দিন, কাহারিয়াঘোনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সেলিনা আক্তার প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে এসময় উপস্থিত ছিলেন চকরিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) খোন্দকার মোহাম্মদ ইখতিয়ার উদ্দিন আরাফাত, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মকছুদুল হক চুট্টু, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান জেসি চৌধুরী জেসি, চকরিয়া থানার ওসি (তদন্ত) এসএম আতিক উল্লাহ, চকরিয়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা গুলশান আক্তার, মাতামুহুরী উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাহারবিলের চেয়ারম্যান মহসিন বাবুল, চকরিয়া কেন্দ্রীয় উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহামুদুল হক প্রমুখ।
অনুষ্ঠানের উদ্বোধক কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো.কামাল হোসেন বলেছেন, পর্যটন জেলা কক্সবাজারের উন্নয়নযজ্ঞ নিয়ে স্বপ্ন দেখেন সরকার প্রধান শেখ হাসিনা। সেইজন্য তিনি পরিকল্পিত উন্নয়নের মাধ্যমে কক্সবাজারকে ঢেলে সাজাতে কাজ করছেন। বর্তমানে কয়েক হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ চলছে জেলাজুড়ে। সর্বক্ষেত্রে জেলাবাসি এগিয়ে থাকলেও শিক্ষাখাতে একটু পিছিয়ে, দেশের মধ্যে কক্সবাজার জেলার শিক্ষারহার ৩৪ শতাংশ। আমাদেরকে এই বাঁধা অতিক্রম করতে হবে।
তিনি বলেন, আমরা সবাই নিরক্ষতার অভিশাপমুক্ত ক´বাজার বির্নিমান করতে চাই। সেইজন্য শিক্ষায় পিছিয়ে কক্সবাজারকে এগিয়ে নিতে যার যার অবস্থান থেকে সবাইকে কাজ করতে হবে। এই অগ্রযাত্রায় আমাদের মাঝে নতুন প্রেরণা চকরিয়া উপজেলা পরিষদ মেধাবৃত্তি। এ ধরণের কর্মসুচি সরকার প্রধানের ভিশন বাস্তবায়নের পথে অন্তরায় হবে। নতুন প্রজন্মের জন্য এই ধরণের প্রতিযোগিতা অব্যাহত রাখতে হবে। মেধাবী মানবসম্পদ তৈরী করতে শিক্ষামুলক প্রতিযোগিতা আরো বাড়ানো উচিত।
জেলা প্রশাসক আরও বলেন, দক্ষ মানবসম্পদ তৈরীতে বাংলা বিজ্ঞানের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদেরকে ইংরেজীতে পারদর্শী করে তুলতে হবে। মনে রাখতে হবে, দক্ষতা থাকলে নতুন প্রজন্ম হবে আগামী দিনের সম্পদ, দেশগড়ার কারিগর। সেইজন্য শিক্ষকমন্ডলীকে আরো বেশি দায়িত্বশীল ভুমিকা পালন করতে হবে। শিক্ষকরা হলেন জাতি গঠনের কারিগর। তাই শিক্ষকরা অর্পিত দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে কর্মদক্ষতা উপহার দিয়ে সুন্দর সমাজ ও মেধাবী মানবসম্পদ গড়তে সফল হবেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি এমপি জাফর আলম বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিক্ষার প্রসারে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের জন্য সরকার নানা প্রকল্প গ্রহণ করেছে। মিড ডে মিল চালু করেছে। এতে করে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বর্তমানে স্কুলগামী হচ্ছে। দেশকে এগিয়ে নিতে হলে শিক্ষার কোন বিকল্প নেই।
তিনি বলেন, শিক্ষাবান্ধব সরকারের তৎকালীন ইউএনও শাহেদুল ইসলামের উদ্যোগের ফলে চকরিয়া উপজেলা পরিষদ মেধাবৃত্তি পরীক্ষার এই কার্যক্রমটি সুচনা করা হয়। আমি এই কার্যক্রমে নিজেকে নিয়োজিত করতে পেরে ধন্য মনে করছি। ইউএনও শাহেদ শিক্ষাখাতের অনগ্রসর জনপদ চকরিয়াকে আলোর পথে নিতে কাজ শুরু করেছিলেন। তাঁর ধারাবাহিকতা অনুজ বর্তমান ইউএনও শিবলী নোমান সচল রেখেছেন। এইজন্য চকরিয়াবাসির পক্ষ থেকে তাকে সাধুবাদ জানাই। আশাকরি আগামীতেও এই কর্মসুচি অব্যাহত থাকবে। তাঁর জন্য আমি এবং চকরিয়া উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান সবধরণের সহযোগিতা দেবো।
অনুষ্ঠানে এমপি জাফর আলম ঘোষনা দিয়ে বলেন, আজকের অনুষ্ঠানে চকরিয়া উপজেলার ২৭ হাজার শিক্ষার্থীর মাঝে টিফিনবক্স ও শিক্ষা উপকরণ বিতরণ শুরু হয়েছে। আগামী ৩০ জুন চকরিয়া উপজেলায় একসঙ্গে ৭৩ হাজার শিক্ষার্থীর হাতে এই উপহরণ বিতরণ করা হবে। কারণ শিক্ষার অগ্রগতি উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভান্ডার খোলা। তাঁর ভান্ডার থেকে চকরিয়া উপজেলার শিক্ষার্থীদের জন্য সবধরণের সহযোগিতা নিশ্চিত করতে পারবো ইনশাল্লাহ।
অনুষ্ঠানে আলোচনাপর্ব শেষে উপজেলা পরিষদ মেধাবৃত্তি ২০১৮ সালে বিজয়ী শিক্ষার্থীদের হাতে পুরস্কার ও সনদপত্র তুলে দেন এমপি জাফর আলম, জেলা প্রশাসক মো.কামাল হোসেন ও উপজেলা চেয়ারম্যান ফজলুল করিম সাঈদী।

পাঠকের মতামত: