নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া ::
কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলা পরিষদের বহুল প্রতিক্ষিত নির্বাচন বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ছাড়া প্রশাসনের কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সম্পন্ন হয়েছে। সকাল ৮টা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠানের সময় কোন কেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি কিছুটা থাকলেও বেশিসংখ্যক কেন্দ্র ছিল ভোটারশূন্য। আবার বেলা বাড়ার সাথে সাথে এসব কেন্দ্রে বিচ্ছিন্নভাবে দুই-একজন ভোটার এসে সরাসরি বুথে গিয়ে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে। এই অবস্থা অব্যাহত ছিল প্রায় দুইটা পর্যন্ত। এর পর বিভিন্ন কেন্দ্রে সরকার দলীয় প্রার্থীর লোকজন নৌকা প্রতীকে জাল ভোট দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এই অভিযোগে বিকেল তিনটা ২০ মিনিটের দিকে পৌরসভার পালাকাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত করে দেয় প্রিসাইডিং অফিসার। সবমিলিয়ে নির্বাচন নিয়ে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি বিরাজমান থাকলেও শেষপর্যন্ত অনেকটা সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠান সমাপ্ত হয়। এর পর কেন্দ্রে কেন্দ্রে চলে ভোট গণনার কাজ। গতকাল সোমবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত উপজেলার ১৮ ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার ৯৯টি কেন্দ্রের মধ্যে অধিকাংশ কেন্দ্র ঘুরে এই দৃশ্য দেখা গেছে। নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ৪ জন, নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৩জন ও পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্ধীতা করেন।
বেশ কয়েকটি কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসারের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, সকাল থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত ভোটার উপস্থিতি ছিল একেবারেই কম। সেই হিসেবে কেন্দ্রগুলোতে মোট ভোটের মধ্যে কাস্ট হয় ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত। বরইতলী ইউনিয়নের একটি কেন্দ্রে নৌকায় ভোট না দেওয়ায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের দুইজনকে এবং ডুলাহাজারা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে প্রকাশ্যে নৌকা প্রতীকে সিল মারতে বাধা দেওয়ায় আরো একজনকে পিটিয়ে আহত করেছে নৌকার এজেন্টরা। তন্মধ্যে বরইতলীর দুইজনকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
এদিকে ভোটের আগের দিন রবিবার সকাল থেকেই চকরিয়ায় অবস্থান করে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেন পুলিশ সুপার এ বি এম মাসুদ হোসেনসহ পুলিশের ঊর্ধতন কর্মকর্তারা। গতকাল সকালে চকরিয়ায় ভোট উৎসব দেখেন জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেনসহ প্রশাসনের ঊর্ধতন কর্মকর্তারা।
কেন্দ্রে কেন্দ্রে ভোট উৎসব পরিদর্শনের সময় জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘সরকার এবং নির্বাচন কমিশনের চাওয়া ছিল শতভাগ সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দেওয়া। আমরা সেই নির্বাচন উপহার দিয়েছি চকরিয়াবাসীকে।’
চকরিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী গিয়াস উদ্দিন চৌধুরীর চেয়ে বিপুল ভোটে এগিয়ে রয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ফজলুল করিম সাঈদী। সরকারী দলের প্রার্থী মাত্র ৩১ ভোট পেয়েছেন এমন ভোটকেন্দ্রও রয়েছে।
গতকাল সোমবার (১৮ মার্চ) রাত ১০টায় সর্বশেষ প্রাপ্ত ৯৮টি ভোটকেন্দ্রের বেসরকারী ফলাফল অনুযায়ী আওয়ামী লীগের প্রার্থী গিয়াস উদ্দিন চৌধুরীর চেয়ে আনারস প্রতীকে ফজলুল করিম সাঈদী ২৭ হাজার ৭১৬ ভোটে এগিয়ে রয়েছেন।
এসব কেন্দ্রে আনারস প্রতীক পেয়েছে ৫৬ হাজার ৮৯৭ ভোট। আর নৌকা পেয়েছে ২৯ হাজার ৮৬৩ ভোট। একটি ভোট কেন্দ্র পালাকাটা সরকারী প্রাথমিক কেন্দ্রের ফলাফল স্থগিত রয়েছে।
ওই কেন্দ্রে পুণঃভোট গ্রহণ হবে বলে জানান উপজেলা নির্বাচন অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার সাখাওয়াত হোসেন। স্থগিতকেন্দ্রে ভোট রয়েছে ৪৭৬৮টি।
চকরিয়া উপজেলার ১৮ টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা মিলে মোট ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৮৪ হাজার ৫৫৫ জন। সেখানে পুরুষ ভোটার ১৪৮৯০৫ জন এবং মহিলা ভোটার ১৩৫৬৫০ জন। মোট ৯৯ টি ভোট কেন্দ্রে ভোট কক্ষ ছিল ৬৩৪ টি। নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ৪ জন, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৩ জন ও পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৫ জনসহ মোট ১২ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। ##
চকরিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা ফজলুল করিম সাঈদীকে ২৭ হাজার ৭১৬ ভোটে বিজয়ী ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
সোমবার (১৮ মার্চ) রাত ১১টার দিকে উপজেলা কনফারেন্স হলে ভোট গণনা শেষে প্রার্থীদের বেসরকারী ফলাফল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন।
এ সময় রিটার্নিং অফিসার মোহাম্মদ মাসুদুর রহমান মোল্লা, জেলা নির্বাচন অফিসার মোহাম্মদ বশির আহমদ, চকরিয়া উপজেলা নির্বাচন অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার সাখাওয়াত হোসেনসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
ফলাফল অনুযায়ী, আনারস প্রতীকে সাঈদী পেয়েছেন ৫৭ হাজার ৭০৫ ভোট। নৌকা প্রতীকে গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী পেয়েছেন ২৯ হাজার ৯৮৯ ভোট।
উপজেলার ৯৯টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ৯৮ কেন্দ্রে নৌকার চেয়ে আনারসের ব্যবধান রয়েছে ২৭ হাজার ৭১৬ ভোট।
পালাকাটা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের ভোট বাতিল গণ্য করা হয়েছে।
পাঠকের মতামত: