ঢাকা,শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪

চকরিয়ায় মহাসড়কে ট্রাক থামিয়ে গভীর  রাতে গরু লুট করে ভুরিভোজ, ছিনতাইয়ে সক্রিয় একাধিক চক্র 

নিজস্ব প্রতিবেদক,চকরিয়া:

কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজারা সাফারি পার্ক ও মালুমঘাট এলাকায় গভীর রাতে  সড়কে ব্যরিকেট দিয়ে ট্রাক থেকে গরু লুটের ঘটনা ঘটেছে। শনিবার দু’দফায় ট্রাক থেকে ১৪টি গরু লুটের পর চাঁদা আদায় শেষে ফেরত দিয়েছে ১২টি। আর দুইটি গরু লুটের পর জবাই করে ভুরিভোজ করেছে ছিনতাইয়ে জড়িত চক্রের লোকজন।

অভিযোগ উঠেছে, সম্প্রতি সময়ে কক্সবাজার চট্টগ্রাম মহাসড়কে চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজারা ও মালুমঘাট এলাকায় গরু লুটের ঘটনা বেড়ে চলছে। গাড়ি থেকে গরু লুট ও ছিনতাইয়ের ঘটনায়  সক্রিয় রয়েছে স্থানীয় একাধিক চক্র। এসব চক্রের সদস্যরা সুযোগবুঝে রাতের আঁধারে অস্ত্রের মুখে গাড়ি  চালক ও ব্যবসায়ীকদের জিন্মি করে ট্রাক থেকে লুটে নিচ্ছে গরু। এমনকি ইতোমধ্যে লুন্ডিত গরু উদ্ধারে গিয়ে ডুলাহাজারা ইউনিয়নে পুলিশের সঙ্গে গোলাগুলির ঘটনাও ঘটেছে।

ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, শনিবার বিকালে

কক্সবাজারের খরুলিয়া বাজার থেকে ৬টি গরু ক্রয়ের পর ট্রাকে করে চট্টগ্রামে নিয়ে যাচ্ছিলেন চন্দনাইশের বাসিন্দা জসিম উদ্দিন নামের এক ব্যবসায়ী। এদিন সন্ধ্যা ছয়টার দিকে মহাসড়কের চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজারা সাফারি পার্কের সামনের এলাকায় পৌছালে ৮-১০ জনের একটি চক্র সড়কে ব্যারিকেট দিয়ে চালককে জিন্মি করে  গরুগুলো লুট করে নিয়ে যায়।

ব্যবসায়ীরা বলেন, ঘটনার পর ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী জসিম উদ্দিনের অনুরোধে চকরিয়া থেকে অপরাপর গরু ব্যবসায়ীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে স্থানীয় মেম্বার রমজান আলী, ফাসিয়াখালীর চেয়ারম্যান নুর হোসেন চৌধুরীর ছেলে সজিব ও জমির উদ্দিনের মধ্যস্থতায়  লুটেরা চক্রের সঙ্গে এক লাখ ৫ হাজার টাকা দফারফা শেষে রাত আনুমানিক নয়টার দিকে একটি গরু রেখে দিয়ে অবশিষ্ট ৫টি গরু ফেরত দেন। পরে লুন্ডিত গরুটি গতকাল রোববার সকালে জবাই করে ভুরিভোজ করেছে ছিনতাইয়ে জড়িত চক্রের লোকজন।

গরু ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, একইভাবে শনিবার রাত আড়াইটার দিকে ঈদগাও বাজার থেকে ৮টি গরু কিনে ট্রাক গাড়িতে করে চকরিয়া ফিরছিলেন মনু সওদাগর নামের এক ব্যবসায়ী। ওইসময় গরুভর্তি ট্রাকটি মহাসড়কের মালুমঘাট এলাকা অতিক্রমকালে অস্ত্রের মুখে চালককে জিন্মি করে গাড়ি থেকে গরুগুলো লুট করে নিয়ে যায় অস্ত্রধারী দুবৃর্ত্তরা। এছাড়া গরু মালিক ও গাড়ি চালকের কাছ থেকে নগদ টাকাও লুটে নেয় তারা।

ব্যবসায়ীরা জানান, লুটের ঘটনার প্রায় দুইঘন্টা পর

গরু মালিকের অনুরোধে স্থানীয় ইউপি মেম্বার রফিক আহমদ, মাহমুদুল হক ও বনবিভাগের হেডম্যান আবদুল গনীর মধ্যস্থতায় চাঁদার ২ লাখ টাকা  আদায় শেষে ৮টি গরুর মধ্যে  ৭টি গরু ফেরত দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তবে একটি গরু ফেরত দেয়নি ছিনতাইকারী চক্রের লোকজন।

স্থানীয় এলাকাবাসী অভিযোগ করে বলেছেন,  ডুলাহাজারা-মালুমঘাট এলাকায় গরু লুটের ঘটনায় জড়িত চক্রের লোকজন ও মধ্যস্থতাকারীরা একসুত্রে গাঁথা। মুলত মধ্যস্থতাকারীদের পরিকল্পনায় গাড়ি থেকে গরু লুটের ঘটনার জন্ম হচ্ছে। পরে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের সঙ্গে গরু ফেরত দেওয়ার নামে সেই মধ্যস্থতাকারীরা দফারফা করছেন। এভাবেই চলছে লাখ লাখ টাকার  বাণিজ্য।

চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) চন্দন কুমার চক্রবর্তী বলেন,  মহাসড়কের ডুলাহাজারা মালুমঘাট এলাকায় ইদানীং গরু লুটের ঘটনা ঘটছে বলে আমাদের কাছে তথ্য এসেছে। কারা ঘটনাগুলোর পেছনে নাটের গুরু বা নেতৃত্ব দিচ্ছেন  তাও আমরা সনাক্ত করতে পেরেছি।

তিনি বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা লুটের পর গরুগুলো উদ্ধারে দফারফা করেন, কিন্তু থানা পুলিশের কাছে অভিযোগ দেন না। তারপরও আমরা বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখছি। ছিনতাইকারী চক্রের বিরুদ্ধে আইনী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

পাঠকের মতামত: