ঢাকা,শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪

চকরিয়ায় বিকল্প পা দিয়ে নতুন জীবন শুরু শিক্ষার্থীসহ ৭ প্রতিবন্ধী নারী-পুরুষের

নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া :: সাদিয়া কাশেম টুম্পাকে এখন আর এক পায়ে লাফিয়ে লাফিয়ে স্কুলে যেতে হবে না। এখন থেকে টুম্পা অন্যসব শিক্ষার্থীদের মত করে স্বাভাবিক ভাবে দুই পায়ে হেঁটে স্কুলে যেতে পারবে। শুধু টুম্পাই নয়, চকরিয়া ও মহেশখালীতে এ রকম বিকল্প পা পেয়ে নতুন জীবন শুরু করেছেন ৭ প্রতিবন্ধী ব্যক্তি। তাদের কাছে বিকল্প পা যেন আকাশের চাঁদ হাতে পাওয়া মতো। প্রতিবন্ধী ব্যক্তি টুম্পা বলেছেন এক পা দিয়ে লাফিয়ে লাফিয়ে স্কুলে যাওয়া যে কত কষ্টের তা একমাত্র তিনিই তা বুঝেন। বিকল্প পা পেয়ে টুম্পারা যেন নতুন জীবন ফিরে পেয়েছেন। এমন আরও কত অনুভুতি ব্যক্ত করেছেন বিকল্প পা প্রাপ্ত ৭ উপকারভোগী প্রতিবন্ধী ব্যক্তি। শুক্রবার ১১ ফেব্রুয়ারী এসএআরপিভি’র উদ্যোগে চকরিয়া পৌরসভার ভরামুহুরীস্থ কার্যালয়ে ‘বিকল্প পা বিতরণ’ অনুষ্ঠানে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মাঝে এসব বিকল্প পা বিতরণ করা হয়। এসময় তাদের মাঝে কিছু শীতবস্ত্রও বিতরণ করা হয়েছে।

এসএআরপিভি’র আঞ্চলিক পরিচালক কাজী মাকসুদুল আলম (মহিত) এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অতিথিদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন চকরিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ ফজলুল করিম সাঈদী, চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জেপি দেওয়ান, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ডেন্টাল বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান ডা. তৈয়ব সিকদার, পিকু প্লাস লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর খোরশেদ আনোয়ার চৌধুরী, মাসুদ গ্রুফ অব কোম্পানির চেয়ারম্যান মোঃ আশরাফ হোসেন মাসুদ, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী জাফর মোরশেদ, লায়ন শওকতুল ইসলাম ও সাংবাদিক জহিরুল ইসলাম।

উপকারভোগী প্রতিবন্ধী ব্যক্তি সাদিয়া কাশেম টুম্পা, আব্দুল মাবুদ, বাবুল দাশ, নুরু জাহান, সৈয়দ আলম, গিয়াস উদ্দিন ও আব্দুর রহমানদের জীবনের অনেক গুলো বছর কেটেছে অবহেলা ও অনেক দৈন্যকষ্টে। কেউ কেউ জন্মের পর থেকে প্রতিবন্ধী, আবার কেউ দুর্ঘটনায় পড়ে প্রতিবন্ধীতার শিকার। অনেকই এতোদিন ক্রাসের উপর ভর দিয়ে চলাফেরা করছে, আবার কেউ এক পায়ে লাফিয়ে লাফিয়ে। এখন এসএআরপিভি থেকে বিকল্প পা পাওয়ার পর তারা অন্যসব স্বাভাবিক মানুষের মতো দুই পায়ে চলাফেরা করতে পারছেন। তাদের সেই দৈন্যকষ্টের জীবন এখন অনেক আনন্দের ও উপভোগ্য হয়ে উঠেছে।

মহেশখালী পৌরসভার পূর্বঘোনা পাড়ার টমটম চালক মোহাম্মদ জালাল প্রকাশ মানিকের মেয়ে সাদিয়া কাশেম টুম্পা(১৭)। সে মহেশখালী কুতুবজুম আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণীর ছাত্রী। টুম্পা জানায়; সে চার বছর বয়সে এক সড়ক দুর্ঘটনায় পড়ে একটি পা হারায়। দুর্ঘটনার পর হাসপাতালে তার পায়ের হাটুর নিচ পর্যন্ত কেটে ফেলতে হয়েছে। সেই থেকে এক পায়ে লাফিয়ে লাফিয়ে চলাফেরা তার। তাকে এক পায়ে লাফিয়ে লাফিয়ে স্কুলেও যেতে হয়েছে। এখন বিকল্প পা পাওয়ার পর তাকে আর এক পায়ে লাফিয়ে লাফিয়ে স্কুলে যেতে হবে না।

সে স্বাভাবিক অন্যসব শিক্ষার্থীদের মত দুই পায়ে হেটে স্কুলে যেতে পারবে। তাই টুম্পা এখন থেকে বিকল্প পা দিয়ে হাটার অনুশীলন করছেন। টুম্পা জানায়, তার ইচ্ছে করছে কালই যেন দুই পায়ে হেটে স্কুলে গিয়ে অন্যসব সহপাঠীদের চমক লাগিয়ে দিতে। টুম্পা জানায়; যার পা নাই সেই বুঝে এ জীবন কত কষ্টের ও অবহেলার। বিকল্প পা যেন তার কাছে আকাশের চাঁদ হাতে পাওয়ার মতো অবস্থা। মাসুদ গ্রুফ অব কোম্পানির চেয়ারম্যান মোঃ আশরাফ হোসেন মাসুদ ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ডেন্টাল বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান ডা. তৈয়ব সিকদারের আর্থিক সহযোগিতায় এই বিকল্প পা গুলো বিতরণ করা হয়েছে।

অনুষ্ঠানে চকরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান ফজলুল করিম সাঈদী এই মহৎ কাজের জন্যে এসএআরপিভিকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে বলেছেন, এই কাজগুলো চলমান রাখার জন্য উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে সবসময় সার্বিক সহযোগিতা করা হবে। সরকারের পাশাপাশি দলবল নির্বিশেষে সকলকে এই মহৎ কাজে এগিয়ে আসার জন্য তিনি আহবান জানান।

চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জেপি দেওয়ান বলেছেন “মানুষ মানুষের জন্য’ চকরিয়ায় বেসরকারী সংস্থা এসএআরপিভি মানুষের জন্যই কাজ করে যাচ্ছে। এ ধরণের প্রতিবন্ধি বান্ধব কাজের জন্যে তিনি এসএআরপিভি’কে ধন্যবাদ জানান। উপজেলা প্রসাশন এসএআরপিভি’র সকল জনহিতকর কাজের সাথে সম্পৃক্ত থাকবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন।

 

 

পাঠকের মতামত: