ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪

চকরিয়ায় দিনেদুপুরে ইউপি সদস্যের নেতৃত্বে সংখ্যালঘুর বাড়িতে হামলা ভাংচুরের অভিযোগ 

নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া

কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার বরইতলী ইউনিয়নে দিনেদুপুরে পরিবার সদস্যদের জিন্মিদশায় আটকে রেখে স্থানীয়  ইউপি সদস্যের নেতৃত্বে সংখ্যালঘু পরিবারের বসতবাড়িতে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। গ্রাম আদালতের রায় বাস্তবায়নের অজুহাতে ইউনিয়ন পরিষদের তিনজন সদস্য উপস্থিত থেকে হামলা চালিয়ে বসতবাড়ির তিনটি কক্ষ দখলে নিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী পরিবারের গৃহর্কতা মিল্টন কান্তি দে। গতকাল বৃহস্পতিবার (৯ ফেব্রুয়ারী) বিকালে বরইতলী ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডের পশ্চিম হিন্দুপাড়াস্থ হরিমন্দির এলাকায় ঘটেছে এ হামলার ঘটনা।

ভুক্তভোগী পরিবারের গৃহর্কতা স্থানীয় হিন্দুপাড়া গ্রামের মৃত মিলন কান্তি দের ছেলে মিল্টন কান্তি দে বলেন, আমার পৈত্রিক বাড়িভিটার মোট আয়তন ৪১ কড়া। তৎমধ্যে অর্ধেক অংশে ইতোমধ্যে পাকা বাড়ি করেছি। যার বিপরীতে আমার নামে ইউনিয়ন ও ট্যাক্স রসিদ, বিদ্যুৎ বিলের কপিসহ যাবতীয় ডকুমেন্ট সংরক্ষিত আছে। পাশাপাশি ভিটার অপর অর্ধেক অংশের জায়গা ছোট ভাই সেন্টু কান্তি দের জন্য পৈত্রিক পুরানো বাড়িসহ স্থিত অবস্থায় রয়েছে।

মিল্টন কান্তি দে অভিযোগ করে বলেন, ব্যাংক ও এনজিও সংস্থা থেকে ঋন নিয়ে আমি বাড়িটি তৈরির পর উল্টো আমার ছোট ভাই সেন্টু কান্তি দে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম আদালতে বাড়ির মালিকানা দাবি করে একটি অভিযোগ দেন। এরইমধ্যে স্থানীয় ইউপি মেম্বারের যোগসাজশে আমাকে না জানিয়ে  পরিষদের গ্রাম আদালতে আমার বিরুদ্ধে একতরফা রায়ডিগ্রি দিয়েছেন।

সর্বশেষ গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালে গ্রাম আদালতের রায় বাস্তবায়নের অজুহাতে স্থানীয় ২ নং ওয়ার্ডের ইউপি  সদস্য কাউছার উদ্দিন জোসেফ, ৪ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আতিক উল্লাহ ও মহিলা মেম্বার রাশেদা বেগমের নেতৃত্বে ২০/২৫ জনের একটি সংঘবদ্ধ দল আমার বাড়িতে অর্তকিত ঢুকে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাংচুর চালায়। এসময় তারা পাকা বাড়ির দেয়াল কেটে দরজা বানিয়ে আমার ছোট ভাই সেন্টু কান্তি দেকে বাড়ির তিনটি কক্ষ (রুম) দখলে দিয়েছে। এসময় ভাংচুর করেছে বাড়ির বিভিন্ন স্থাপনা।

ভুক্তভোগী মিল্টন কান্তি দে দাবি করেন, ঘটনার সময় আমি আমিরাবাদ ছিলাম। বাড়িতে আমার স্ত্রী ও সন্তানেরা জিন্মিদশায় আটকা ছিল। তাদের ফোন পেয়ে আমি পুলিশের জরুরি সেবা ৯৯৯ তে অভিযোগ করি। পরে নিকটস্থ হারবাং পুলিশ ফাঁড়ির একটি পুলিশ দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে আমার স্ত্রী ও সন্তানদের জিন্মিদশা থেকে উদ্ধার করেন। হামলার সময় ইউপি সদস্যদের সঙ্গে আগত বহিরাগত দুবৃর্ত্তরা আমার বাড়ি থেকে নগদ টাকাসহ বিভিন্ন মালামাল লুট করে নিয়ে গেছে।

পরিবারের গৃহর্কতা মিল্টন কান্তি দে বলেন, বরইতলী ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম আদালতের একতরফা রায়ের বিরুদ্ধে গত ২৬ জানুয়ারি আমি চকরিয়াস্থ সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে একটি আপিল মামলা ( নং ৩৯/২৩) রুজু করেছি। মামলায় সেন্টু কান্তি দে ছাড়াও স্থানীয় বরইতলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো ছালেকুজ্জামানকে আসামি করা হয়েছে। মুলত গ্রাম আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপীল মামলা করায় এবং ওই মামলায় চেয়ারম্যানকে আসামি করার কারণ ক্ষিপ্ত হয়ে তারা আমার বাড়িতে হামলা চালিয়েছে। এমনকি হামলার সময় সহকারী জজ আদালতের আপীল মামলার কপি দেখানো হলেও তারা তাতে ক্ষান্ত হননি।

অভিযোগ অস্বীকার করে চকরিয়া উপজেলার বরইতলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো ছালেকুজ্জামান বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বাররা সংখ্যালঘু পরিবারের বসতবাড়িতে হামলা করেনি। বরং মেম্বাররা পরিষদের গ্রাম আদালতের রায় বাস্তবায়নের জন্য ওই বাড়িতে যান। ঘটনাটি দুই ভাইয়ের পারিবারিক বিরোধ। আমরা শান্তিপূর্ণ সমাধানের চেষ্টা করেছি মাত্র।

চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) চন্দন কুমার চক্রবর্তী বলেন, বরইতলী ইউনিয়নের হিন্দুপাড়া এলাকা থেকে  পুলিশের জরুরি সেবা ৯৯৯ এ ফোন পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়। পরে পুলিশ  ওই পরিবারের নারী শিশুকে উদ্ধার করে।  তিনি বলেন, এব্যাপারে লিখিত অভিযোগ পেলে পরবর্তী আইনী পদক্ষেপ নেওয়া হবে

পাঠকের মতামত: