প্রতীকি ফাইল ছবি….. কাটাতারের বেড়ায় স্কুলে প্রবেশ পথ বন্ধ
এম.জিয়াবুল হক, চকরিয়া ;: নানামুখী চাপের মাধ্যমে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগকে বেকায়দায় ফেলার অংশহিসেবে এবার কাটাতার লাগিয়ে দিয়ে চকরিয়া উপজেলার ঢেমুশিয়া ইউনিয়নের মোছারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রবেশপথ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। গত দুইদিন আগে বিদ্যালয়ের প্রবেশপথে কাটাতার লাগিয়ে দেয়ার পর বর্তমানে বিদ্যালয়টির অন্তত ২৪০জন কোমলমতি শিক্ষার্থীর লেখাপড়া ব্যহৃত হবার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি বিদ্যালয়ের নিরাপদ পরিবেশ নিয়ে চরম আতঙ্কে ভুগছেন কর্মরত শিক্ষকরা।
সরকারি নীতিমালা লঙ্গণের মাধ্যমে একই ব্যক্তি পছন্দ মোতাবেক লাগাতার সভাপতি পদে থাকতে এবং নিজের স্ত্রীকে ওই বিদ্যালয়ে বহাল রাখার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগকে নানামুখী চাপে ফেলার জন্য এ ধরণের ঘটনাটি সংগঠিত করেছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় অভিভাবক মহল।
ঢেমুশিয়া মুছারপাড়া সরকারি বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি আবু জাফর রিপন ফরায়েজী জানান, নীতিমালার আলোকে বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষিকা আরেফা বেগমকে গত ৩০ মার্চ শিক্ষা বিভাগের প্রশাসনিক আদেশে একই উপজেলার কোনাখালী ইউনিয়নের মধ্যমকোনাখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলী করা হয়।
স্ত্রীকে অন্য বিদ্যালয়ে বদলি করার ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন তার স্বামী বিদ্যালয়টির সাবেক সভাপতি আমিনুল মোস্তফা। এরই জেরে তিনি গত ৬ এপ্রিল ওই বিদ্যালয়ের প্রতিটি কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দেন। ঘটনাটি জানতে পেরে আমরা (পরিচালনা কমিটির সদস্যরা) বাঁধা দিলে উল্টো ক্ষিপ্ত হয়ে তাদের সঙ্গে অসৎ আচরণ করেন আমিনুল মোস্তফা। ওইসময় ঘটনাটি চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে অবহিত হয়।
বিদ্যালয়ের সভাপতি আবু জাফর রিপন বলেন, এরআগেও বিদ্যালয়টির জন্য স্থানীয় নেজামউদ্দিন ছিদ্দিকী নামে একজন প্রধান শিক্ষককে প্রশাসনিকভাবে নিয়োগ দিয়ে পাঠালে যোগদানে বাঁধা দেন অভিযুক্ত আমিনুল মোস্তাফা। সেই থেকে ওই প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ে যোগদান করতে পারছেন না।
স্থানীয় অভিভাবকরা অভিযোগ তুলেছেন, অভিযুক্ত আমিনুল মোস্তাফা লাগাতার সভাপতি পদে থাকতে এবং নিজের স্ত্রী আরেফা বেগমের বদলী ঠেকিয়ে আগের বিদ্যালয়ে বহাল রাখার পরিকল্পনা ও শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে চলমান তদন্ত কার্যক্রম বাঁধাগ্রস্থ করার অংশ হিসেবে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগকে নানামুখী চাপে ফেলার জন্য এখন নতুন চক্রান্তে মেতেছে।
এরই জেরে গত দুইদিন আগে কাটাতার লাগিয়ে দিয়ে চকরিয়া উপজেলার ঢেমুশিয়া ইউনিয়নের মোছারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রবেশপথ বন্ধ করে দিয়েছে। এ অবস্থার কারনে বর্তমানে বিদ্যালয়টির অন্তত ২৪০জন কোমলমতি শিক্ষার্থীর লেখাপড়া ব্যহৃত হবার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
চকরিয়া উপজেলা শিক্ষা অফিস সুত্র জানায়, আমিনুল মোস্তাফা নিজেকে ওই বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালনা কমিটির সভাপতি হিসেবে দাবী করেন। কিন্তু রেকর্ডেপত্রে তিনি কেউ নন। তার স্ত্রী আরেফা বেগম প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে ওখানকার ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ও বিদ্যালয়ের জমিদাতা। এই সুত্রে আরিফা বেগম বিদ্যালয়ে অন্যায়ভাবে দীর্ঘদিন ধরে খবরদারি করে আসছিলেন।
এ অবস্থায় সর্বশেষ গত ৩০ মার্চ অভিযুক্ত বাঁধাদানকারী আমিনুল মোস্তফার স্ত্রী সহকারি শিক্ষিকা আরেফা বেগমকে নিকটস্থ ইউনিয়ন মধ্যম কোনাখালীতে প্রশাসনিকভাবে বদলীর আদেশ প্রদান করেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা। বিষয়টি জানতে পেরে তাঁর স্বামী আমিনুল মোস্তফা ক্ষুব্ধ হয়ে গত ৬ এপ্রিল বিদ্যালয়ের সবকটি কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দেন।
স্থানীয় লোকজন জানান, বিদ্যালয়ে তালা লাগিয়ে দেয়ার ঘটনায় স্থানীয় প্রশাসন কঠোর অবস্থান গ্রহন করলে কিছুদিন নিরব থাকে অভিযুক্ত আমিনুল। এরই মধ্যে তিনি একটি মামলায় জেলহাজতেও যান। পরবর্তীতে জামিনে আসলে তিনি আবারও বিদ্যালয়ে নিজের কতৃত্ব নিয়ে নানামুখী চক্রান্ত শুরু করেন। এরই জেরধরে সর্বশেষ দুইদিন আগে বিদ্যালয়ের প্রবেশপথে কাটাতার লাগিয়ে দিয়ে প্রবেশপথ বন্ধ করে দিয়েছেন। এ কারণে ওই দিন থেকে ২৪০ ছাত্র-ছাত্রীর লেখাপড়া বন্ধের উপক্রম হয়েছে।
বিদ্যালয় কমিটি ও বিক্ষুদ্ধ অভিভাবক মহল জানান, বিদ্যালয়ের প্রবেশপথটি কাটাতার লাগিয়ে দিয়ে বন্ধ করে দেয়ার পাশাপাশি বিদ্যালয় কমিটির সভাপতি ছাড়াও শিক্ষক এবং প্রতিবাদকারী লোকজনের বিরুদ্ধে সাজানো মামলা দিয়ে হয়রাণি করা হচ্ছে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত আমিনুল মোস্তাফার সঙ্গে কথা বলার চেষ্ঠা করা হয়। কিন্তু তাঁর ব্যবহৃত মুঠোফোনের সংযোগ বন্ধ থাকায় বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
জানতে চাইলে চকরিয়া উপজেলা প্রাথামিক শিক্ষা কর্মকর্তা গুলশান আক্তার বলেন, প্রবেশপথে কাটাতার লাগিয়ে দিয়ে ঢেমুশিয়া ইউনিয়নের মোছারপাড়া সরকারি প্রাথসিমক বিদ্যালয়ের চলাচল পথটি বন্ধ করে দেয়ার ঘটনাটি সহকারি শিক্ষা কর্মকর্তা ও কর্মরত শিক্ষকরা আমাকে অবগত করেছেন। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে জানানো হবে। তাদের নির্দেশক্রমে পরবর্তীতে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পাঠকের মতামত: