ঢাকা,সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

চকরিয়ার ‘যাযাবর সড়ক’ ১০ বছর পর নির্মাণ হচ্ছে

Chotan-Chakaria-Pic.-Kakara-Road-01.02.16-300x220ছোটন কান্তি নাথ, চকরিয়া :::

দশ বছর ধরে বেহাল অবস্থার কারণে যোগাযোগ ব্যবস্থা নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকা লাখো মানুষের দুঃখ ঘুচতে শুরু করেছে। অবশেষে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলা সদরের সঙ্গে কাকারা ইউনিয়নের যোগাযোগের প্রধান সড়কের (সেই যাযাবর সড়ক) পুরোটাই মেরামত করে চলাচলের উপযোগী করার উদ্যোগ নেওয়ায় কাকারা ও সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়নের এসব বাসিন্দারা বেশ উৎফুল্ল। তাছাড়া সড়কটি পুরোপুরি সচল হলে পাশ্ববর্তী পার্বত্য লামা ও আলীকদম উপজেলার সঙ্গে নির্বিঘেœ যাতায়াত করতে পারবে, সাথে সাশ্রয় হবে সময়েরও।
জানা গেছে, সড়কটির তিন কিলোমিটারের মধ্যে প্রথম দফায় মাইজ কাকারা থেকে কাকারা ইউনিয়ন পরিষদ পর্যন্ত ১২শ মিটার এর নির্মাণকাজ গত রবিবার থেকে শুরু হয়েছে। পরিষদ ভবন থেকে মাঝেরফাঁড়ি সেতু পর্যন্ত বাকি ১৮শ মিটারের কাজ সম্পন্ন করতে গেল ২৪ জানুয়ারি দরপত্র আহবান করেছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)।
ভুক্তভোগীরা জানান, ইউনিয়নের সাথে উপজেলা সদরের যোগাযোগের একমাত্র সড়কটি দীর্ঘ ১০ বছর ধরে কোন ধরনের মেরামত না হওয়ায় এলাকাবাসী সড়কটির নাম দেয় ‘যাযাবর সড়ক’। এনিয়ে গত ৬ মাসে জাতীয়, আঞ্চলিক ছাড়াও স্থানীয় পত্রিকা দৈনিক কক্সবাজারেও একাধিক সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। প্রথম দফায় গত বছরের ২৮ অক্টোবর দরপত্র আহবান করে এলজিইডি। এখন সড়কটির বাকি অংশের নির্মাণকাজ সম্পন্ন করার জন্য দরপত্র আহবান করায় এলাকাবাসীর মধ্যে স্বস্তি ফিরেছে। এটির নির্মাণকাজ সমাপ্ত হলে কাকারা ও সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়ন ছাড়াও চকরিয়ার সাথে পার্বত্য উপজেলা  লামা ও আলীকদমের সাথে সরাসরি এবং ঝুঁকিমুক্ত সড়ক যোগাযোগ নিশ্চিত হবে। একইসাথে সময়ও সাশ্রয় হবে।
এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী মনজুরুল আলম সিদ্দিকী দৈনিক কক্সবাজারকে বলেন, ‘জনগুরুত্বপূর্ণ এই সড়কটির পুরোটাই প্রথম ধাপেই মেরামত করে চলাচলের উপযোগী করতে চেয়েছিলাম। কিন্ত সেই সময় বাজেট স্বল্পতার কারণে দুই ধাপে কাজ সম্পন্ন করার সিদ্ধান্ত নিই।’
তিনি বলেন, সড়কটি নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ভুক্তভোগী মানুষের দুঃখ-দুর্দশার চিত্র বেশ ফলাও করে ফুটে উঠেছিল। এসব প্রতিবেদনের গুরুত্ব উপলব্দি করে এই সড়কের জন্য আমি ঢাকা থেকে বিশেষভাবে অর্থ বরাদ্দ এনে বাকি অংশও নির্মাণের দরপত্র আহবান করেছি। এখন সড়কটির নির্মাণকাজ বাস্তবায়নের পথে। একইসাথে প্রত্যেকটি সড়ক দ্রুত এবং মানসম্মতভাবে নির্মাণের জন্য আমি ঠিকাদারদের ডেকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছি। সড়কের কাজের মান খারাপ হলে কোন ছাড় দেওয়া হবে না বলেও সাফ জানিয়ে দিয়েছি।’
জানা গেছে, কাকারা এবং সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়নের জনগণের চলাচলের প্রধান মাধ্যম চিরিঙ্গা-কাকারা-মাঝেরফাঁড়ি-মানিকপুর সড়ক। নিয়ে কিন্তু সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর এবং এলজিইডির দ্বন্দ্বের কারণে দীর্ঘ ১০ বছর ধরে জনগুরুত্বপূর্ণ এই সড়কটির কোন সংস্কার হয়নি বলইে চলে। এই অবস্থায় সাড়ে নয় কিলোমিটার দীর্ঘ সড়ক থেকে কাকারার তিন কিলোমিটার অংশকে বাদ দিয়ে নিজেদের চলাচলের জন্য নতুন সড়ক নির্মাণ করেন সুরাজপুর-মানিকপুরের চেয়ারম্যান আজিমুল হক। প্রতিবছর বন্যায় বিধ্বস্ত হয়ে সড়কটির বেশিরভাগ অংশ চলাচল বিচ্ছিন্ন থাকলেও সেটি নির্মাণে কাকারা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বা স্থানীয় রাজনীতিকদের কোন উদ্যোগ ছিল না। এতে যোগাযোগ ব্যবস্থায় মারাত্মক অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে এলজিইডি গত ২৮ অক্টোবর প্রথম দফায় ২৪ লাখ টাকা ব্যয়ে ১২শ মিটার সড়কের দরপত্র আহবান করে।
কাকারার বাসিন্দা সাংবাদিক আসিফ সিদ্দিকী বলেন, ‘জনগুরুত্বপূর্ণ এই সড়কটির নির্মাণকাজ যাতে দ্রুত শেষ করা হয় এবং অল্প সময়ের মধ্যেই যাতে আবারো যাযাবর সড়কে পরিণত না হয় সেজন্য জোর দাবি জানাচ্ছি। তিনি আরো বলেন, ‘সড়কটি নিয়ে ইতিপূর্বে আমার কর্মরত পত্রিকা কালের কন্ঠে একাধিক সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। এসব সচিত্র প্রতিবেদন সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি কেড়েছে।’
এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স ফরিদুল আলম এর সত্ব¡াধিকারী মোহাম্মদ ফরিদুল আলম বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার আমি কার্যাদেশ পেয়েছি, ইতিমধ্যে প্রাথমিক কাজ শুরু করা হয়েছে। বর্তমান সড়কের ওপর স্তরের সীলকোট তুলে কংকর বিছিয়ে নতুন কার্পেটিং করা হবে। কাজ শেষ হতে ১৫ দিনের বেশি লাগবে না। আর চকরিয়ার মধ্যে আমিই প্রথম কাজ শুরু করবো।’
এলজিইডির চকরিয়া উপজেলা প্রকৌশলী মো. আমিন উল্লাহ বলেন, ‘কার্যাদেশ অনুযায়ী সড়কটির পুরনো কার্পেটিং তুলে খোয়া বিছিয়ে নতুন করে কার্পেটিং করতে হবে। অনেক বছর পরে সড়কটির কাজ শুরু করায় আমরাও যথাযথ তদারকি করবো, যাতে সড়কটির স্থায়িত্ব থাকে।’
উপজেলা প্রকৌশলী আরো জানান, প্রথম অংশের কাজ কয়েকদিনের মধ্যেই সম্পন্ন হবে। সড়কটি বাকী অংশ কাকারা ইউনিয়ন পরিষদ ভবন থেকে মাঝেরফাঁড়ি সেতু পর্যন্ত (১২শ ৩০ মিটার থেকে ২৮শ ৫৫ মিটার) কাজের দরপত্র আহবান করা হয়েছে গেল ২৪ জানুয়ারী, দরপত্র জমা দেয়ার শেষ সময় ১১ ফেব্রুয়ারি। আর ১৫ মে মধ্যে কাজ শেষ করতে হবে। এজন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৬৫ লাখ টাকা।’ – See more at: http://www.dainikcoxsbazar.net/?p=81227#sthash.M9sLFSqm.dpuf

পাঠকের মতামত: