এম জিয়াবুল হক, চকরিয়া ::
কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার বেসরকারি চিকিৎসা সেবা প্রতিষ্ঠান জমজম হাসপাতাল থেকে ভূয়া এমবিবিএস চিকিৎসক আটকের পর নড়েচড়ে বসেছেন স্থানীয় স্বাস্থ্য প্রশাসন। বিশেষ করে উপজেলার বেসরকারি এসব হাসপাতালের বিরুদ্ধে ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু, পরীক্ষা-নিরীক্ষার নামে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা ও রোগীদের নানা হয়রানীর অভিযোগ রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে।
এবার সবচেয় বেশি আলোচিত হচ্ছে ভূয়া এমবিবিএস চিকিৎসক আটক নিয়ে। ইতোপূর্বে চকরিয়া সিটি হাসপাতাল থেকেও এক ভূয়া চিকিৎসককে গ্রেফতার করেছিলেন উপজেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমান আদালত । তাকে কারাদণ্ড দিয়ে কারাগারে পাঠানো হলে পরে তিনি সেখানে ( কারাগারে) মারা যান।
এদিকে সাত লাখ মানুষের জনপদ কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার বিভিন্ন পয়েন্টে গড়ে তোলা বেসরকারি এসব হাসপাতাল গুলোতে জনগণের মাঝে কি ধরণের চিকিৎসক সেবা দিচ্ছেন, নিয়োজিত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের কাগজপত্র আছে কিনা এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষার নামে রোগীদের হয়রানী করা হচ্ছে কী তা যাছাই করতে সকল বেসরকারি চিকিৎসা সেবা প্রতিষ্ঠানকে কাগজপত্র দাখিল করতে চিঠি দিয়েছেন চকরিয়া উপজেলা হাসপাতালের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শোভণ দত্ত।
গতকাল ১৭ নভেম্বর সকালে চকরিয়া উপজেলা হাসপাতালের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শোভণ দত্ত স্বাক্ষরিত চকরিয়া উপজেলার বেসরকারি ২০টি হাসপাতাল ও ডায়াগণষ্টিক সেন্টার গুলোকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
হাসপাতাল গুলো হচ্ছে, চকরিয়া জমজম হাসপাতাল, আছিয়া মেমোরিয়াল হাসপাতাল, চকরিয়া সিটি হাসপাতাল, এশিয়ান হাসপাতাল, সেন্ট্রাল হাসপাতাল, ম্যাক্স হাসপাতাল, শেভরণ ল্যাভ/হাসপাতাল, মা-শিশু জেনারেল হাসপাতাল, ইউনিক হাসপাতাল, বদরখালী জেনারেল হাসপাতাল, বদরখালী ক্লিনেভা হাসপাতাল, বরইতলী মা-শিশু হাসপাতাল, মালমুঘাট মা-মনি হাসপাতাল, বরইতলী সেন্ট্রাল কেয়ার, আল নুর হাসপাতাল, রয়েল ডায়াগণষ্টিক সেন্টার, চকরিয়া জেনারেল এন্ড ট্রমা সেন্টার ও সেন্ট্রাল কেয়ার। এসব হাসপাতালের অনেক প্রতিষ্ঠান গতকাল চিঠি পেয়েছেন বলে সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
চকরিয়া উপজেলা হাসপাতালের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শোভণ দত্ত বলেন, স্বাস্থ্যসেবা জনগণের মৌলিক অধিকার। মানবসম্পদ উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ সূচক হিসেবে সর্বজনীনভাবে স্বীকৃত। এমন একটি সেবামুলক কাজকে চিকিৎসার নামে জনগণকে হয়রানি করা হচ্ছে। ভূয়া চিকিৎসক দিয়ে রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া কোনমতে গ্রহণ যোগ্য নয়। এতে মানুষের আস্থা নষ্ট হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, জমজম হাসপাতালসহ ২০টি হাসপাতাল ও ডায়াগণষ্টিক সেন্টারকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাগজপত্র জমা দিতে বলা হয়েছে।৷ যাদের কাগজপত্র সঠিক আছে, তারা জনগণের মাঝে চিকিৎসা সেবা চালু রাখবেন। আর যেসব প্রতিষ্ঠানের কাগজপত্রে গলদ আছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
প্রসঙ্গতঃ বুধবার ১৬ নভেম্বর চকরিয়া উপজেলার ভ্রাম্যমান আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারি কমিশনার (ভূমি) রাহাত উজ্জ জামান গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে জমজম হাসপাতাল থেকে ভূয়া এমবিবিএস চিকিৎসক হুমায়ন কবিরকে গ্রেফতার করেন। ওইসময় তিনি চিকিৎসক হিসেবে কোন ধরণের সনদ দেখাতে পারেনি আদালতের কাছে । এসময় তাকে ৫০হাজার টাকা জরিমানা ও তিনমাসের জেল দেন আদালত। অনাদায়ে আরও ১৫দিনের জেল দেন।
অভিযুক্ত ভূয়া চিকিৎসক হুমায়ুন কবির দীর্ঘ পাঁচবছর ধরে চকরিয়া জমজম হাসপাতালে রোগীদের মাঝে লিভার, পরিপাকতন্ত্র, ডায়াবেটিসের মতো রোগের চিকিৎসা দিয়ে এসেছে। এছাড়া তিনি নিজেকে মেডিসিন বিশেষজ্ঞ বলে দাবী করে সাধারণ রোগীদের চিকিৎসা করতেন তিনি।
চকরিয়া জমজম হাসপাতালের পরিচালক গোলাম কবির বলেন, হুমায়ন কবির বিগত পাঁচ বছর ধরে হাসপাতালে চিকিৎসা দিয়ে আসছিলেন। নিয়ম কানুন মেনে তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। তার কাগজপত্র ভূয়া জানার পর প্রশাসন থেকে সময়ও চেয়েছিলাম। পরবর্তীতে ওই চিকিৎসকের সনদ না থাকায় ভ্রাম্যমান আদালত তাকে সাজা দেন।
পাঠকের মতামত: