ঢাকা,রোববার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪

চকরিয়ার কাকারা-মানিকপুর সড়কের নির্জন বাদশার টেকে ডাকাত আতঙ্ক

নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া :: চকরিয়ার কাকারা-মানিকপুর সড়কের নির্জন পাহাড়ি এলাকা বাদশার টেক পার হওয়ার সময় প্রতিনিয়ত ডাকাত আতঙ্কে ভোগেন চলাচলরত বিভিন্ন যানবাহনের যাত্রীরা। সড়কের এই বাদশার টেক এলাকাটি দীর্ঘদিনের একটি ডাকাতির স্পট হিসেবে পরিচিত। প্রতিনিয়ত সন্ধ্যার পর থেকেই সড়কে ওই স্থান পার হওয়ার সময় সংঘবদ্ধ সশস্ত্র ডাকাত-সন্ত্রাসীদলের সদস্যরা যাত্রী-সাধারণের সর্বস্ব লুট করে নেয়। অবশ্য পুলিশের কঠোর তৎপরতার কারণে মাঝখানে বছর দুয়েক যাত্রী-সাধারণ নির্ভয়ে ওই স্থান পার হতে পারলেও সাম্প্রতিক সময়ে বাদশার টেকটি ফের অপরাধীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ অনুযায়ী- বাদশার টেক সংলগ্ন সড়ক লাগোয়া স্থানীয় একটি মসজিদের খালি জায়গায় ঝুঁপড়ি দোকানঘর গড়ে তোলা হয়েছে। সেই দোকানে ব্যবসার নামে চলে মূলত অপরাধীদের আড্ডা। সন্ধ্যার পর পরই বিভিন্ন স্থান থেকে ডাকাত-সন্ত্রাসী জড়ো হয়ে সেই দোকানে অবস্থান করতে থাকে। রাত বাড়ার সাথে সাথে সদলবলে ওইসব ডাকাত-সন্ত্রাসী সোজা চলে যায় নির্জন পাহাড়ি আঁকাবাঁকা পথে। সেখানে বিভিন্নস্থানে ওঁত পেতে থাকে তারা। এর পর সুযোগ বুঝে তারা সড়কে চলাচলরত বিভিন্ন যানবাহন তথা সিএনজি চালিত অটোরিক্সা, টমটম ও মোটর সাইকেলের গতিরোধ করে সর্বস্ব লুটে নেয়।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে পূর্ব কাকারা উত্তর পাহাড়তলী বাদশার টেক জামে মসজিদ কমিটির সভাপতি মো. আজিজ মিয়া জানান, কাকারা ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাদশার টেক এলাকার মৃত মজুলুর রহমানের ছেলে আহামদ হোছন ও তার ছেলে ওসমান গনি সড়কের পাশের মসজিদ-কবরস্থানের জায়গা দখলে নিয়ে সেখানে ঝুঁপড়ির মতো করে দোকান ঘর তৈরি করে।

মূলত ব্যবসার নামে ওই দোকান তৈরি করলেও সেখানে রাতভর চলে ডাকাত-সন্ত্রাসীদের আড্ডা। এমনকি সেখানে রকমারী মাদকের আসরও বসানো হয়। চলে নারী নিয়ে আসামাজিক কার্যকলাপ। আর সেখান থেকেই রাতের অন্ধকারে সড়কটির বাদশার টেক নামক নির্জন স্থানে গিয়ে সড়কে চলাচলরত বিভিন্ন যানবাহন এবং সাধারণ মানুষের গতিরোধ করে সর্বস্ব লুট করে আসছে ডাকাত-সন্ত্রাসীরা।

মসজিদ কমিটির সভাপতিসহ স্থানীয় বেশ কয়েকজন বাসিন্দা জানান- সড়কটিতে প্রতিদিন সন্ধ্যার পর থেকে পুলিশ টহল দিয়ে থাকে। তবে সেই টহল স্থায়ী না হওয়ায় ডাকাত-সন্ত্রাসীরা তাদের অপরাধকর্ম নির্বিঘ্নে চালিয়ে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে যদি বাদশার টেকের কাছে স্থাপিত ঝুঁপড়ি দোকানটিতে পুলিশ অবস্থান নেয় তাহলে এই সড়কে কোন ডাকাতি বা লুটের ঘটনা ঘটবে না। একইভাবে মসজিদ-কবরস্থানের জায়গা থেকে সেই অবৈধ দোকানটি গুঁড়িয়ে দেওয়া হলে সড়কটিতে ডাকাতি বা কোন লুটের ঘটনা ঘটবে না বলেও তাদের অভিমত।

তবে অভিযুক্ত ওসমান গনির বাবা আহামদ হোছন দাবি করেছেন- তার ক্রয়কৃত জায়গায় দোকান নির্মাণ করে ব্যবসা করছেন। জায়গাটি মসজিদ-কবরস্থানের নয়। তাঁর দোকানে রাতভর কোন আড্ডাও চলে না এবং বিভিন্ন স্থান থেকে অপরিচিত কোন লোকও দোকানে আসে না।

এই প্রসঙ্গে কাকারা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. সাহাব উদ্দিন বলেন, ‘নির্জন পাহাড়ি এলাকার বাদশার টেকটি দীর্ঘদিনের একটি ডাকাতির স্পট। সেখানে রাতভর পুলিশের টহল ব্যবস্থা জোরদার করা উচিত। তবে স্থানীয় মসজিদ-কবরস্থানের জায়গার ওপর ঝুঁপড়ি দোকান তৈরি করে সেখানে অপরাধীদের আড্ডা বসে কী-না তা আমার জানা নেই। এই বিষয়ে বিস্তারিত খোঁজ নিয়ে পরবর্তীতে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।’

এই বিষয়ে জানতে চাইলে চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) চন্দন কুমার চক্রবর্তী বলেন, ‘চকরিয়ার কাকারা-মানিকপুর সড়কের বাদশার টেক নামক স্থানটি অনিরাপদ বলে শুনেছি। তাই সড়কটিতে যাতায়াত নির্বিঘ্ন করতে পুলিশের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থাই নেওয়া হবে। ইতোমধ্যে এই বিষয়ে স্থানীয় মসজিদ কমিটির পক্ষ থেকেও একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি।’

পাঠকের মতামত: