সি এন ডেস্ক ::
হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান। অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে নয় বছরে নামের পেছনে জুড়ে যায় স্বৈরাচারী খেতাব। পতন হয়েছে গণ আন্দোলনে।
নব্বইয়ে গণ-অভ্যুত্থানের মুখে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন এরশাদ। তবে ৩৫ বছর পরেও তিনি ক্ষমতাদর্শী। ফের ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন তাকে তাড়া করে বেড়ায়।
১৯৯১ থেকে এ পর্যন্ত প্রতিটি নির্বাচনে দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কাছে এরশাদ ছিলেন খুব গুরুত্বপূর্ণ। আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের প্রাক্কালেও তাকে এবং তার দলের অবস্থান নিয়ে জল্পনা-কল্পনার শেষ নেই।
ক্ষমতার মোহ এখনো তাকে তাড়িয়ে বেড়ায়
ক্ষমতার মোহ থেকে এরশাদ যে এখনো বেরিয়ে আসতে পারেননি নানা সময়ে তার বক্তব্যে সেটা প্রকাশ পেয়েছে। আসন্ন সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করেও নানা বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
গত ২০ অক্টোবর রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাপার নেতৃত্বাধীন ‘সম্মিলিত জাতীয় জোট’র মহাসমাবেশে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে নিজের জীবনের শেষ নির্বাচন বলে উল্লেখ করেন এরশাদ। বলেন, ‘বর্তমান রাজনৈতিক ব্যক্তিদের মধ্যে সব থেকে প্রবীণ আমি। রাজনৈতিক জীবনে সবেচেয়ে বেশি জেল-জুলুম ও নির্যাতন সহ্য করেছি আমি। ক্ষমতা ছাড়ার পর থেকে একদিনের জন্য শান্তিতে ঘুমাতে পারিনি।’
২৮ অক্টোবর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে নিজ দলের এক সভায় তিনি বলেন, ‘যদি আবার ক্ষমতায় আসতে পারি, তাহলে শান্তি ফিরে আসবে, সমস্ত ব্যথা-বেদনা দূর হবে। একবার হলেও জাতীয় পার্টিকে ক্ষমতায় দেখে মরতে চাই আমি। আবার নতুন সূর্য উঠবে, এই অপেক্ষায় আছি।’
মামলার ভয়
ক্ষমতাচ্যুতির পর বিএনপি সরকারের আমলে এরশাদের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলা হয়। বিচারপতি শাহাবুদ্দীন আহমদের তত্ত্বাবধায়ক সরকার এরশাদকে প্রথম গ্রেপ্তার করে কারাগারে নেয়। এরপর ১৯৯২ সালে ক্ষমতায় আসেন খালেদা জিয়া। পতনের পর এরশাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগে ৪২টি মামলা হয়। এর মধ্যে তিনটি মামলায় তার সাজার আদেশ হয় এবং একটিতে তিনি সাজা ভোগ করেন।
খালেদা সরকারের মেয়াদের পুরোটাই জেল খাটতে হয় এরশাদকে। এ সময় আওয়ামী লীগের পাশে থেকে খালেদা জিয়ার সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে এরশাদের জাতীয় পার্টি। ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে ১৯৯৭ সালের জানুয়ারিতে কারামুক্ত হন।
১৯৯৯ সালে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে চারদলীয় জোটে যোগ দেন এরশাদ। ২০০১ সালে ভোটের আগে ছেড়ে দেন মোর্চা। তবে তার দলের একটি অংশ থেকে যায়। ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এলে খালেদা জিয়ার সঙ্গে এক ধরনের আপসরফা করে নিজেকে বিপদমুক্ত রাখেন এরশাদ। ২০০৭ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে আবার তাকে জোটে নেয়ার চেষ্টা করে বিএনপি।
তবে এরশাদ বিএনপি জোটে না গিয়ে এবার আসেন আওয়ামী লীগে। সেনা সমর্থিত তত্ত্ববধায়ক সরকারের আমলে দুই শীর্ষ রাজনীতিক শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়া জেল খাটলেও এরশাদ ছিলেন ধরার বাইরে। এর মধ্যে ২০০৮ সালের ডিসেম্বরের ভোটে আওয়ামী লীগের মহাজোটে শরিক ছিলেন।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে এরশাদ দুই নৌকায় পা দেয়ার চেষ্টা করেন। ভোটে আসার ঘোষণা দিয়েও পরে দেন বর্জনের ঘোষণা। তবে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় আর স্ত্রী রওশন এরশাদের নেতৃত্বে একটি অংশ যায় ভোটে।
জিয়ার পরামর্শক থেকে ক্ষমতা দখল
পূর্বসুরী সেনা শাসক জিয়াউর রহমানের সামরিক ও রাজনৈতিক পরামর্শকও ছিলেন এরশাদ। অভিযোগ আছে, তার পরামর্শেই মুক্তিযোদ্ধা সেনা কর্মকর্তাদের দূরে ঠেলে দেন জিয়া।
১৯৮১ সালের ৩০ মে জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার পর এরশাদের নির্দেশেই মুক্তিযোদ্ধা সেনা কর্মকর্তা আবুল মঞ্জুরকে হত্যা করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। তখন থেকেই উচ্চাকাক্সক্ষা বাড়তে থাকে। ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ এরশাদ ক্ষমতা দখল করে বিচারপতি সাত্তারকে সরিয়ে আ ফ ম আহসানউদ্দিন চৌধুরীকে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব দেন তিনি।
১৯৮৩ সালের ডিসেম্বরে নিজেই রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব নেন এরশাদ। জারি করেন সামরিক শাসন।
এবার কী করবেন এরশাদ?
জাতীয় নির্বাচনে এরশাদকে নিয়ে আবার রহস্য তৈরি হয়েছে। তাকে নিয়ে একেকদিন একে রকম খবর আসে। সত্যমিথ্যা নির্ণয় করা কঠিন। তাকে সবশেষ প্রকাশ্যে দেখা যায় ২০ নভেম্বর।
সম্প্রতি মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগে তার দলের মহাসচিবকেও বদল করেছেন। এ ব্যাপারে বিবৃতি দিলেও এরশাদের সরাসরি কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এরইমধ্যে তিনি অসুস্থ, সিএমএইচে ভর্তি, চিকিৎসা নিতে সিঙ্গাপুর যাবেন, এমন খবরও আসে। তবে তার কোনোটাই নিশ্চিত হওয়া যায়নি। যদিও গত মঙ্গলবার তার নতুন মহাসচিব জানান, তাদের চেয়ারম্যান এরশাদ অসুস্থ অবস্থায় বাসায় একা থাকতে ‘ভয়’ পান বলেই মাঝেমধ্যে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে যান। মহাজোটের সঙ্গে আসন ভাগাভাগির পর দলীয় অবস্থা বিবেচনা করে এরশাদ ১০ ডিসেম্বরের পর চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে যেতে পারেন।
জাতীয় নির্বাচন এলেই এরশাদের অসুস্থতা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে রয়েছে নানা আলোচনা। ২০১৪ সালের নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দিয়ে এরশাদ নাটকীয় অসুস্থতা নিয়ে সিএমএইচে ভর্তি হয়েছিলেন। কিন্তু সেখানে ভর্তি থাকা অবস্থাতেই এমপি নির্বাচিত হন তিনি। পরে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত করা হয় তাকে। -ঢাকাটাইমস
পাঠকের মতামত: