মাহাবুবুর রহমান, কক্সবাজার :: সরকারি ভাবে কৃষকদের কাছ থেকে ধান কেনার কর্মসূচীর নামে লুটপাটে ব্যস্ত হয়ে গেছে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। প্রতি টন ২৬ হাজার টাকার ধান কিনতে ৩ হাজার টাকা ঘুষ দিতে হচ্ছে। এছাড়া ৩ টন ধান দিলে ২ বস্তা ধান ফ্রি দিতে হচ্ছে এসবের বাইরেও কোন সাধারণ কৃষক ধান নিয়ে খাদ্যগুদামে এসে ধান ন্যায্য মুল্যে ধান বিক্রি করতে পারছেনা বলে জানান শত শত কৃষক। খাদ্য গুদাম এবং কৃষি অফিস কর্মকর্তাদের নির্দিস্ট দালাল বা সিন্ডিকেটের মাধ্যম ছাড়া ১ কেজি ধানও কিনছেনা সরকারি কর্মকর্তারা। এদিকে ধান ক্রয়ে অনিয়ম বিষয়ে ইতি মধ্যে খাদ্য মন্ত্রনালয়ের নির্দেশে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শিক্ষা ও আইটিসিকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
গত কয়েক দিনে সদর উপজেলা খাদ্য গুদামে গিয়ে দেখা গেছে বেশ কয়েকটি বড় বড় ট্রাকে করে ধান এনে রাতেও গুদামে ঢুকানো হচ্ছে। এ সময় পরিচয় গোপন করে বেশ কয়েক জনের সাথে আলাপকালে জানা যায় এখানে কোন কৃষকের ধান নেই সব ব্যবসায়িদের ধান। খাদ্য গুদামের কর্মকর্তা ছালাউদ্দিন, কামরুল এবং রেজিয়া বেগমের সাথে চুক্তি করে ধান দিচ্ছে ব্যবসায়িরা। মূলত কৃষকের কার্ড ব্যবহার করা হলেও সব ধান ব্যবসায়িদের। এখানে কোন সাধারণ কৃষক ধান দিতে পারেনা সব কর্মকর্তাদের লালিত সিন্ডিকেটরাই ধান দিচ্ছে। যদি কোন সাধারণ কৃষক আসে তার ধানে আদ্রতা বেশি বা ভিজা ও চিটা আছে বলে তাকে ফেরত দেওয়া হয়। আর প্রতি কেজী ২৬ টাকা দরে প্রতি টন ধান ২৬ হাজার টাকায় ৩ হাজার টাকা অফিসে ঘুষ দিতে হয় সিন্ডিকেটদের আর ৩ টনে ২ বস্তা ধান ফ্রি দিতে হবে।
১৬ জুলাই বেলা ১১ টার দিকে সদর খাদ্য গুদামে গিয়ে দেখা গেছে পিএমখালী ইউনিয়নের গোলা পাড়া এলাকার অছিয়র রহমান নামে এক ব্যক্তি ধান গুদামে ভরছে কিন্তু তাৎক্ষনিক তার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার কোন জমি নেই মূলত এক ব্যবসায়ি আমাকে নিয়ে এসেছে তার ধান বিক্রি করার জন্য এখানে আমাকে স্বাক্ষর দিতে হবে তাই এখানে এসেছি। পরে সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে সবাই সরে গেছে।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে সরকারি ধান বিক্রিতে সিন্ডিকেট হিসাবে কাজ করে বিপুল টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে খুরুশকুলের সাগর এন্টাপ্রাইজের মালিক সাগর,পিএমখালী সুইস গেইট এলাকার ধানের ব্যবসায়ি আলতাজ সওদাগর,শহরের রুমালিয়ারছড়া এলাকার দোকান আছে ভারুয়াখালীর বাসিন্দা নুরুল হুদা,তার সহযোগি রিপন,উপজেলা সংলগ্ন ডিকুকল এলাকার ইলিয়াছ,জুয়েল তারা ইতি মধ্যে ১৬ টন ধান দিয়েছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে। এছাড়া লিংক রোড় এলাকার আকতার সওদাগর,বাংলাবাজার বাহার রাইস মিলের ছালামত উল্লাহ,উর্মি রাইস মিলের ছুরুত আলম,উত্তর ডিককুল এলাকার বাসিন্দা পৌরসভার ষ্টোর কিপার নুরুল কবির,খরুলিয়ার মমতাজ সওদাগর,পিএমখালীর সাইফুল,আজিম সহ অনেকে বর্তমানে ধান বিক্রির সিন্ডিকেট হিসাবে কাজ করছে।
পিএমখালী ঘাটকুলিয়া পাড়ার কৃষক শহিদুল ইসলাম বলেন, আমি প্রতি বছর ২ খোন অন্তত ১২ কানি করে ধান চাষ করি। বর্তমানে আমার ১৫০০ কেজি ধান আছে। আমি সদর খাদ্য অফিসে ধান বিক্রি করতে গেলে আমার ধান ভিজা,চিটা বেশি বলে বের করে দিয়েছে। অথচ আমার সামনে আরো নি¤œমানের ধান গুদামে তুলতে কোন আপত্তি করেনি। পরে ২/৩ জন ধান ব্যবসায়ি আমার সাথে যোগাযোগ করেছে তাদের মাধ্যমে ধান বিক্রি করতে কেজিতে ১৮ টাকা করে। কিন্তু আমি এখনো বিক্রি করিনি। তারা বলেছে সব কাজ আমরা করব আমরা খাদ্য অফিস থেকে ২৬ টাকা করে নেব কিন্তু আপনি পাবেন ১৮ টাকা। এরকম অনেক কৃষক অভিযোগ করেন। একই ইউনিয়নের নুর মোহাম্মদ চৌধুরী বাজারের কৃষক মোহাম্মদ নুরুল হাকিম বলেন,আমার নিজের জমিতে উৎপাদিত ১২০০ কেজির মত ধান আছে। আমি কয়েক বার খাদ্য অফিসে গিয়েও ধান বিক্রি করতে পারিনি। যত বার গেছি ততবার বলেছে আমার ধান ভিজা অথচ ভাল করে রোদে শুকিয়ে নিয়ে গেছি তার পর আমাকে খারাপ ব্যবহার করে ফিরিয়ে দিয়েছে। অথচ আমার সামনেই আমার এলাকার বেশ কয়েকজন চাল ব্যবসায়ির কাছ থেকে ধান কিনছে। তাদের ধান ঠিকমত পরীক্ষাও করছেনা।
এদিকে রামু উপজেলার ফুলনিরচর এলাকার কৃষক আবু বক্কর ছিদ্দিক বলেণ,এখন রামু কৃষি অফিসে কৃষি কার্ড করার হিড়িক পড়েছে যাদের ২ গন্ডা জমিও নেই কিন্তু বিভিন্ন নেতার পরিচয় দিয়ে তারা কৃষি কার্ড করছে। আর খাদ্য গুদামে গেলে আমার ধান নি¤œমানের বলে ফিরিয়ে দিয়েছে। আমি শুনেছি সেখানে দালাল ছাড়া কোন ধান নেওয়া হয়না।
চকরিয়া উপজেলা খাদ্য অফিসে বিষয়ে অনেক কৃষক অভিযোগ করে বলেন, প্রতি টনে কর্মকর্তাদের বাড়তি টাকা ঘুষ দিলে ধান নেয় না হলে ফিরিয়ে দেয়।
এদিকে কৃষি অফিসের অনেক উপ সহকারী কৃষি অফিসার মাঠ পর্যায়ে কোন জমি না থাকলেও তাদের কৃষি কার্ড ইস্যূ করার জন্য বিপুল টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। মোট কথা সরকারের কৃষকদের কাছ থেকে ধান কিনার কর্মসূচী নিয়ে চারিদিকে লুটপাট শুরু করেছে।
এ ব্যাপারে কক্সবাজার জেলা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি রেজাউল করিম বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সব সময় কৃষকদের নিয়ে চিন্তা করেন এবং কৃষকের ভালর জন্য উদ্যোগ নেন। তারিধারাবাহিকতায় কৃষকদের কাছ থেকে ন্যায্য মুল্যে ধান কেনার ব্যবস্থা করেছেন। কিন্তু কতিপয় সরকারি কর্মকর্তারা সেই ভাল উদ্যোগকে ব্যাহত করছে। এটা কোন ভাবেই কাম্য নয়। আমরা চাই সে সব কর্মকর্তাদের বিচারের মুখোমুখি করা হউক।
এদিকে শনিবার জেলা প্রশাসক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে খাদ্য মন্ত্রনালয়ের নির্দেশে কক্সবাজারে ধান কিনতে অনিয়ম বিষয়ে তদন্ত করতে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শিক্ষা ও আইটিসি আমিন আল পারভেজকে প্রধান করে ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে জেলা ভারপ্রাপ্ত খাদ্য কর্মকর্তা দেবদাশ চাকমা বলেন, জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে এটা সত্য। আমি যতদূর খোঁজ খবর নিয়েছি আমাদের অফিসের পক্ষ থেকে কাগজে পত্রে কোন গাফেলতি নাই। সব কিছু সচ্ছতার সাথে হয়েছে। তবে যতদূর শুনেছি অনেক ব্যবসায়ি চাষীদের কাছ থেকে কার্ড নিয়ে ধান বিক্রি করতে এসেও ধান দিতে পারেনি তারাই হয়তো বা বিভিন্ন ভাবে ঝামেলা করছে। তবুও আমাদের পক্ষ থেকে আরো তদন্ত করা হবে যদি কেউ অপরাধি হয় তাহলে কঠিন শাস্তি দেওয়া হবে।
এ ব্যাপারে ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক আশরাফুল আফসার বলেন, ধান কিনতে অনিয়মের কথা প্রায় সময় শুনা যাচ্ছে বিষয়টি খুবই দুঃখ জনক। দ্রুত এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে খাদ্য মন্ত্রনালয়ের নির্দেশে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। উল্লেখ্য কক্সবাজার জেলাতে প্রথম দফায় ১৬৩৯ মেট্রিক টন এবং দ্বিতীয় দফায় ২৭৩১ টন ধান কিনছে সরকার।
প্রকাশ:
২০১৯-০৭-২২ ১১:২৯:১৩
আপডেট:২০১৯-০৭-২২ ১১:২৯:১৩
- চকরিয়ায় মসজিদে নামাজ পড়তে গিয়ে হার্ট অ্যাটাকে বৃদ্ধের মৃত্যু
- চকরিয়ায় স্ত্রী হত্যাকারী মেহেদী লামাতে আটক
- চকরিয়ায় স্বামীর ছুরিকাঘাতে স্ত্রী, সড়ক দুর্ঘটনায় যুবক ও সংঘর্ষে ব্যবসায়ী নিহত
- চকরিয়ায় স্বামীর চুরিকাঘাতে স্ত্রী নিহত, শ্বাশুড়ি আশংকাজনক
- মালুমঘাট সড়ক দূর্ঘটনায একজন নিহত
- মিলেমিশে চলছে সোনাদিয়া দ্বীপ ধ্বংসের প্রতিযোগিতা
- চকরিয়ায় আঞ্চলিক সড়কে যানবাহনে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে পুলিশের জালে
- চকরিয়ায় মসজিদের নামে অর্ধকোটি টাকা আত্মসাৎ
- নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন নিশ্চিতে চকরিয়ায় কৃষিজমির সর্বোচ্চ ব্যবহার বাড়ানোর তাগিদ
- চকরিয়ায় বিএনপি নেতাকে কুপিয়ে হত্যা চেষ্টার অভিযোগ
- ইসলামের বৃহৎ স্বার্থে চকরিয়া জামায়াতে ইসলামীর সাথে একটেবিলে বসতে চায়
- মিলেমিশে চলছে সোনাদিয়া দ্বীপ ধ্বংসের প্রতিযোগিতা
- চকরিয়ায় পৌরশহরের তিনটি আবাসিক হোটেল ও চারটি রেস্টুরেন্টে অভিযান
- শীতের কম্বল দিতে বেড়িয়ে পড়েন চকরিয়ার মানবিক ইউএনও আতিকুর রহমান
- চকরিয়ায় বিএনপি নেতাকে কুপিয়ে হত্যা চেষ্টার অভিযোগ
- মালুমঘাট সড়ক দূর্ঘটনায একজন নিহত
- চকরিয়ায় স্বামীর ছুরিকাঘাতে স্ত্রী, সড়ক দুর্ঘটনায় যুবক ও সংঘর্ষে ব্যবসায়ী নিহত
- পেকুয়ায় রব্বত আলী পাড়া সড়কে গাড়ি চলে না ২০ বছর!
- কিশলয় শিক্ষা নিকেতন স্কুলে বিলুপ্ত কমিটির স্বাক্ষর নিয়ে বিল ভাউচার করার অভিযোগ
- ইসলামের বৃহৎ স্বার্থে চকরিয়া জামায়াতে ইসলামীর সাথে একটেবিলে বসতে চায়
- চকরিয়ায় আঞ্চলিক সড়কে যানবাহনে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে পুলিশের জালে
- কক্সবাজার সিটি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আকতার চৌধুরী
পাঠকের মতামত: