ডেস্ক নিউজ :
জোটগতভাবে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে ২০-দলীয় জোটের প্রধান শরীক দল বিএনপিকে ৬০ আসনে প্রার্থীর তালিকা দিয়েছিল জামায়াতে ইসলামী। দলটি মনোনয়ন ফরম তুলেছে ৬৪ আসনে। বিএনপির সঙ্গে সোমবার (২৬ নভেম্বর) ও মঙ্গলবার (২৭ নভেম্বর) পর্যন্ত কয়েক দফা বৈঠকে জামায়াতকে ২৫ আসন দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে ৬৪ আসনেই তোলা মনোনয়ন ফরম প্রার্থীদের জমা দিতে বলেছে কেন্দ্রীয় জামায়াত। দলটির একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে প্রার্থী দেয়ায় জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে বিএনপির দূরত্ব যেন বেড়েছে। এরমধ্যে সরকারকে হটাতে ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে নির্বাচনে যাবার ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। সেজন্য ২০ দল ও ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে আসন বন্টনে সমন্বয় রাখার চেষ্টাও করে আসছিল বিএনপি। কিন্তু ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে দফায় দফায় আসন বন্টন নিয়ে বৈঠক হলেও এখনও চূড়ান্ত ফয়সালা হয়নি। ফয়সালা হয়নি ২০-দলীয় জোটের অন্যতম শরীক দল জামায়াতের সঙ্গেও।
জামায়াতের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, চলতি সপ্তাহে বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের একাধিক বৈঠক হয়েছে। সোমবার ও মঙ্গলবার পর্যন্ত কয়েক দফা বৈঠক হয়। এসব বেঠকে ২৫টি আসনে জোটগতভাবে নির্বাচনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে অনেকগুলো আসনেই জেতার মতো জামায়াতে ইসলামীর হেভিওয়েট প্রার্থী রয়েছে। তবে জোটগতভাবে যেসব আসনে মনোনয়ন পাওয়া যাচ্ছে না সেসব আসনে এককভাবে নির্বাচন করার নির্দেশনা দিয়ে বুধবার ফরম মনোনয়ন ফরম জমা দেয়ার জন্য দল থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কারণ মনোনয়ন ফরম জমা দানের শেষদিন বুধবার। এরপর আর সুযোগ থাকবে না।
এ ব্যাপারে গাইবান্ধা জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মাওলানা আব্দুল করিম বলেন, ‘মঙ্গলবার বিকেলে কেন্দ্র থেকে নির্দেশনা এসেছে মনোনয়ন ফরম জমা দিতে হবে। নির্দেশ মোতাবেক প্রস্তুতি চলছে।’
এর আগে গত ১৭ নভেম্বর জামায়াতের একটি প্রতিনিধি দল ২০-দলীয় জোটের লিয়াজোঁ কমিটির সমন্বয়কারী বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও নজরুল ইসলাম খানের কাছে তালিকা দিয়েছিল জামায়াত। কমপক্ষে ৪৫টি আসনে কোনো ছাড় না দেয়ার কথাও জানায় দলটি।
জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তে ৬৪টি আসনে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছে জামায়াতে ইসলামী। ওই ৬৪টি থেকে ৬০টি আসনের তালিকা বিএনপির হাতে তু্লে দেয়া হয়। কিন্তু কয়েক দফার বৈঠকে বিএনপি আমাদের দাবি মানেনি। ২৫টি আসনে এখন পর্যন্ত জোটগত নির্বাচন করার জন্য জামায়াতের সঙ্গে সমঝোতা হয়েছে। বাকিগুলোর ব্যাপারে হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘কালই (আজ বুধবার) মনোনয়ন ফরম জমাদানের শেষদিন। এরপর আর সম্ভব হবে না। জামায়াতে ইসলামীও দলীয় সিদ্ধান্তে অনড়। কমপক্ষে ৪০টি আসনও যদি সিদ্ধান্তে আসা যেত মেনে নিতো জামায়াত। কিন্তু বিএনপি এখন পর্যন্ত সেটা মেনে নেয়নি। তাই কেন্দ্রীয় নেতাদের সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে মনোনয়ন তোলা ৬৪টি আসনেই প্রার্থীদের ফরম জমা দিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।’
জামায়াতের এই নেতা আরও বলেন, এই ৬৪টি আসনের মধ্যে সমঝোতা হওয়া ২৫ আসনও রয়েছে। তবে ওই ২৫ আসনে জোটগতভাবেই নির্বাচনে অংশ নেয়ার বিষয়টি মোটামুটিভাবে চূড়ান্ত বলে জানান তিনি।
সমঝোতা হওয়া ২৫ আসন ::
জামায়াতে ইসলামীর এ পর্যন্ত চূড়ান্ত হওয়া আসনগুলো হচ্ছে ঠাকুরগাঁও-২ মাওলানা আবদুল হাকিম, দিনাজপুর-১ মাওলানা মোহাম্মদ হানিফ, দিনাজপুর-৬ মোহাম্মদ আনোয়ারুল ইসলাম, নীলফামারী-২ মুক্তিযোদ্ধা মনিরুজ্জামান মন্টু, নীলফামারী-৩ মোহাম্মদ আজিজুল ইসলাম, রংপুর-৫ অধ্যাপক গোলাম রব্বানী, গাইবান্ধা-১ মাজেদুর রহমান সরকার, সিরাজগঞ্জ-৪ মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, পাবনা-৫ মাওলানা ইকবাল হুসাইন, ঝিনাইদহ-৩ অধ্যাপক মতিয়ার রহমান, যশোর-২ আবু সাঈদ মুহাম্মদ শাহাদাত হোসাইন, বাগেরহাট-৩ অ্যাডভোকেট আবদুল ওয়াদুদ, বাগেরহাট-৪ অধ্যাপক আবদুল আলীম, খুলনা-৫ অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, খুলনা-৬ মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, সাতক্ষীরা-২ মুহাদ্দিস আবদুল খালেক, সাতক্ষীরা-৩ মুফতি রবিউল বাশার, সাতক্ষীরা-৪ গাজী নজরুল ইসলাম, পিরোজপুর-১ আলহাজ শামীম সাঈদী, ঢাকা-১৫ ডা. শফিকুর রহমান, সিলেট-৫ মাওলানা ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী, সিলেট-৬ মাওলানা হাবিবুর রহমান, কুমিল্লা-১১ ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের, চট্টগ্রাম ১৫ আ ন ম শামসুল ইসলাম এবং কক্সবাজার-২ হামিদুর রহমান আজাদ।
আজ বুধবার একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন। সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং বা সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র জমা দিতে হবে। এ ছাড়া কেউ চাইলে এ সময়ের মধ্যে তার মনোনয়নপত্র অনলাইনের মাধ্যমেও জমা দিতে পারবেন।
নির্বাচন কমিশনের (ইসি) যুগ্ম-সচিব (জনসংযোগ) এস এম আসাদুজ্জামান আরজু বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষদিন প্রার্থীদের জন্য কিছু করণীয় সম্পর্কে একটি নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।’
পাঠকের মতামত: