ঢাকা,মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪

কক্সবাজার আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস ভোগান্তির নাম

download-17বিশেষ প্রতিবেদক :

ভোগান্তির অপর নাম হয়ে দাড়িয়েছে কক্সবাজারের আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস।জেলার আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস এখন দালালদের দখলে। দালাল ছাড়া ভেতরে প্রবেশ করা যায় না। পুলিশ ভেরিফিকেশন, জন্মনিবন্ধন সনদ আর সত্যায়িত করার সিল সবই আছে দালালের কাছে। দরকার শুধু টাকা। পকেট ভর্তি টাকা দিলেই পাসপোর্ট প্রস্তুত। দালাল ছাড়া সাধারণ গ্রাহকরা নিয়মানুসারে আবেদন করে মাসের পর মাস অপেক্ষা করেও পাচ্ছেন না পাসপোর্ট। কক্সবাজারের আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের প্রতিদিনকার চিত্রই এটি।
আগের তুলনায় সেখানে বেড়েছে হয়রানি, দুর্নীতি ও ভোগান্তি। নিজ হাতে আবেদন ফরম জমা দিতে গেলেই ঘটছে বিপত্তি। এনালগ পদ্ধতি থেকে ডিজিটাল পদ্ধতিতে রূপান্তরিত কক্সবাজারের আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে নিত্য-নতুন স্টাইলে ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে সাধারণ মানুষদের। যারা নিজে আবেদন ফরম পূরণ করে জমা দিতে যান, তাদের পূরণকৃত ফরম সঠিক হলেও নানান ছুঁতোয় ভুল ধরে ফিরিয়ে দেয়া হয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আবেদনকারীরা অভিযোগ করেন, আবেদনপত্রের সঙ্গে প্রাপ্তবয়স্করা জাতীয় পরিচয়পত্র আর অপ্রাপ্তবয়স্করা জন্মনিবন্ধন দেবেন। এরপর আবেদনপত্র দুটি সত্যায়িত করতে হয়। কিন্তু ফরমে ছাপানো এ নিয়মও মানছে না কক্সবাজারের আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসর। সেখানে জাতীয় পরিচয়পত্র ও জন্ম নিবন্ধনের ফটোকপি সত্যায়িত করে নিয়ে আসার কথা বলা হচ্ছে। তাদের নিয়মানুসারে সত্যায়িত ফটোকপি নিলেও এই জন্ম নিবন্ধনের কপি রাখা হচ্ছে না। বলা হচ্ছে, আপনার তদন্ত রিপোর্ট পাওয়া যায়নি। তদন্ত রিপোর্ট ম্যানেজ করে তারপর আসেন। এরকম নানা অজুহাত দেখিয়ে পাসপোর্ট করতে আসা লোকজনকে হয়রানি করা হচ্ছে। দালালদের একটি চক্র এই অফিসের সামনে রীতিমতো স্থায়ী ঘাঁটি বানিয়ে বসেছে। কোথাও তারা ছোট আকারে দোকানপাট ও ট্রাভেলস খুলে বৈধতার খোলসে তাদের কার্যক্রম চালাচ্ছে। ব্যাংকে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা ও আবেদনের সঙ্গে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দেয়ার পরও থেমে নেই হয়রানি। দালাল মারফত নেয়া হচ্ছে অতিরিক্ত টাকা। এক্ষেত্রে অর্ডিনারির ক্ষেত্রে ২ থেকে ৩ হাজার ও আর্জেন্ট পাসপোর্টের ক্ষেত্রে ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা অতিরিক্ত দিতে হচ্ছে ভুক্তভোগীদের। দালাল মারফত ফরম জমা দিলে কোনো অজুহাত ও ভুলের প্রয়োজন হয় না। ভুল ফরমই জমা নিচ্ছে পাসপোর্ট কর্তৃপক্ষ। অতিরিক্ত টাকার মধ্যে পাসপোর্ট অফিস নিচ্ছে ১১শ, তদন্ত অফিসার নিচ্ছেন ১৫শ থেকে ২ হাজার। আর বাকি টাকা যাচ্ছে দালালদের পকেটে। মোট কথা ওই তৃতীয় শ্রেণির সদস্যদের সমন্বয়ে পাসপোর্ট অফিসে গড়ে উঠেছে শক্তিশালী কয়েকটি সিন্ডিকেট। সরেজমিনে অনুসন্ধানে দেখা যায়, পুরাতন পাসপোর্ট অফিস স্থানান্তর করে বাহার ছাড়া গোল চক্ররের মাটের পাশে পুলিশ নেয়া হয়েছে। বিভিন্ন অনিয়ম ও সাধারণ গ্রাহকদের দুর্ভোগের কথা মাথায় রেখে অফিসটি স্থানান্তর করলেও খোদ প্রশাসনের চোখের সামনেই বাড়ছে গ্রাহকদের ভোগান্তি ও দালালদের উৎপাত। সেবা নিতে আসা গ্রাহকদের অভিযোগ, পাসপোর্ট অফিসের সহাকারী পরিচালক, দায়িত্ব পালনরত আনসার সদস্য, ভেরিফিকেশন কর্মকর্তা ও ওই অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে যোগসাজশে দালালরা কাজ করছেন। আর এই দালালির কাজে নিয়োজিত রয়েছে,জেলা শহরের বিভিন্ন এলাকায় অবস্থিত বিভিন্ন ট্রাভেলস এজেন্সি ও বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের অন্তরালের দালালরা।অভিযোগ রয়েছে, বেশিরভাগ ট্রাভেলস এজেন্সি খুলেছে পাসপোর্ট অফিসের দালালরাই। আবার কেউ কেউ ফটোস্ট্যাট, স্টুডিও খুলেছে। নিয়মানুযায়ী ট্রাভেলস এজেন্সিগুলো ভিসা বা টিকিটের কার্যক্রম চালানোর কথা থাকলেও বাস্তবে ভিসা বা টিকিটের কাজ না করে সেখানে করা হচ্ছে পাসপোর্টের ফরম পূরণ ও স্টুডিওর ব্যবসা।
শুধুই কি তাই? অনেক দালালদের চা স্টলসহ গাছতলায় বসে এসব কাজ করতে দেখা গেছে। অভিযোগ রয়েছে, ট্রাভেলস এজেন্সিগুলোর দালালরা নিজেরাই প্রথম শ্রেণির গেজেটেট কর্মকর্তাদের স্বাক্ষর নকল করে ও সিল তৈরি করে ফরম ও ছবি সত্যায়িত করে দিচ্ছেন। আর এর জন্যও নিচ্ছেন অতিরিক্ত আরো ১শ থেকে দেড়শ টাকা। তবে দালালদের মাধ্যমে আয়কৃত টাকার একটি বৃহত অংশ চলে যাচ্ছে প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তর, কতিপয় অসাধু ও গুটিকয়েক রাজনৈতিক নেতাদের পকেটে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দালালরা যাদের স্বাক্ষর ও সিল নকল করে সত্যায়িত করছে তারা অনেকেই জেলার কর্মরত নন, কিংবা এক সময় কর্মরত ছিলেন। এখন নেই। সত্যায়িত করার পর তদন্তকারী কর্মকর্তা কোনো প্রকার যাচাই-বাছাই ছাড়াই উল্লেখিত ভাগের টাকায় তদন্ত প্রতিবেদন দিয়ে দিচ্ছেন। এসব অনিয়মের প্রতিবাদ করতে পারছেন না সাধারণ গ্রাহকরা। যদি কেউ ভুলে প্রতিবাদ করেন, তবে তাকে নানা ধরণের হেনন্তা হতে হচ্ছে। বৈধ হোক আর অবৈধ হোক ফরম জমা করতে গেলেই দুই হাজার থেকে ১২ হাজার টাকা বিনা রশিদে জমা দিতে হচ্ছে দালালদের হাতে। দালালদের রয়েছে চ্যালেন ফি নামে সাংকেতিক চিহ্ন। আর এ চিহ্ন ব্যবহার করা হয়ে থাকে আবেদন ফরমের এক কোনায় খুব ছোট করে। সরকারিভাবে যার কোনো অস্তিত্বই নেই। কয়েকজন ভুক্তভোগী আরও অভিযোগ করেন, আমরা সরকারকে নির্ধারিত ফি ব্যাংকে জমা দিয়ে পাসপোর্ট ফরম জমা দিতে যাই। কিন্তু অজুহাত দেখিয়ে বিনা রশিদে ২ থেকে ৩ হাজার টাকা জিম্মি করেই আদায় করা হচ্ছে। চ্যানেল ফির টাকা না দিলেই ফরমে বিভিন্ন খুঁত বের করা হচ্ছে। ভুল ধরা হচ্ছে একাধিক তথ্যে। দালালের মাধ্যমে টাকা দিলেই সব ভুল মাপ। এটা কোনো ধরনের সরকারি নিয়ম? একটি সূত্র জানিয়েছে কোনো ঝুট-ঝামেলা ছাড়া দ্রুত পাসপোর্ট পাইয়ে দেয়ার আশা দিয়ে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে এই অতিরিক্ত টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে এসব দালাল। আর পুলিশ ভেরিফিকেশনের নামে হয়রানি এড়াতে সাধারণ মানুষও অনেকটা বাধ্য হয়ে এসব দালালের দ্বারস্থ হচ্ছেন এই সব মুল্য হুতা হচেছ সাহাব উদ্দীন জনি নামে এক দালাল। এ ব্যাপারে কক্সবাজার জেলায় আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস সহকারি শওকত কামাল জানান, আমি আসার পূর্বে কি হয়েছিল তা জানা নেই। এ ছাড়া আমার অফিসের কারও বিরুদ্ধে এ রকম দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 

পাঠকের মতামত: